স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তারুণ্যের মিছিলে নেমেছিল ছাত্র-জনতাসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। অভ্যুত্থানের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অনিশ্চিত শঙ্কায় দিন কাটছে অনেক আহতের। বারবার যোগাযোগ করেও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সহায়তা মিলছে না বলে অভিযোগ আহত পরিবারের। দাবি, তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন করা হোক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। ফাউন্ডেশন বলছে, ব্যবস্থাপনায় জনবলের অভাব সত্ত্বেও আহতদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, সাধ্যমতো গুরুত্ব বিবেচনা করে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গণঅভ্যুত্থানে দ্রোহযাত্রার রক্তাক্ত অধ্যায়ের সাক্ষী আহতরা। চব্বিশের জুলাইয়ের বয়ানে মিশে আছে অসংখ্য দগদগে স্মৃতি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তারুণ্যের প্রতিজ্ঞা আর প্রলয়ের গল্পে ছিল হাজারো নাম। তাদেরই একজন স্কুলপড়ুয়া আল আমিন। উত্তাল জুলাইয়ে এই দুই পায়ে ভর করে প্রতিবাদ আর মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু কে জানতো রক্তাক্ত সেই জুলাই কেড়ে নেবে তার একটি পা!
আন্দোলনের ছয় মাস পেরিয়েও অনিশ্চিত শঙ্কায় কাটছে আল আমিনের প্রতিটি মুহূর্ত। অগ্রাধিকার বিবেচনায় পাননি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সহায়তা। হটলাইন নাম্বারে ফোন করেও মেলেনি সমাধান।
রামপুরায় পুলিশের গুলিতে আহত হন গাড়িচালক সুমন হাওলাদার। ৫ মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ফিরতে পারেননি নিজ পেশায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সব ধরনের কাগজপত্র ভেরিফায়েড হলেও এখনও পাননি সহায়তা। চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা তার।
আল-আমিন ও সুমনের মতো হাজারো মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে ভেঙেছে কর্তৃত্ববাদের শৃঙ্খল। এক দফার মন্ত্রে তারুণ্যের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বাংলায়। জুলাইয়ের দ্রোহের আগুনে কেউ হারিয়েছেন হাত, কেউ পা, কারও চোখের আলো নিভে গেছে চিরদিনের জন্য।
কিন্তু নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর এই আহতরা কতটা গুরুত্ব পেলেন রাষ্ট্রের কাছে? এখনো দুঃসহ যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে দিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায়। এমনকি রাজপথে নেমেও কারো কারো ভাগ্যে মেলেনি সহায়তা। নিষ্ফল এই চাহনিতে হয়তো একটাই প্রশ্ন, তবে কি এই ত্যাগের মূল্যায়ন হবে না?
ফাউন্ডেশনের কর্তারা বলছেন, কয়েক ধাপে যাচাই-বাছাইয়ের দীর্ঘসূত্রতা ও দক্ষ জনবলের অভাবেই সময়মতো দেয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় সেবা। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদ পরিবারের মাঝে অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি তাদের।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন মানবসম্পদ ও প্রশাসনিক প্রধান সোহেল মিয়া বলেন, ‘হয়তো প্রতিদিন আমাদের চার-পাঁচজন রিচ করতে পারে নাই তার মানে এই না যে ফোন রিসিভ করি না। প্রতিদিন আমরা আড়াইশ থেকে তিনশ কল রিসিভ করি। ক্যাটাগরি অনুযায়ী আমরা প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমাদের এখানে একটা কুইক রেসপন্স টিম আছে। যে পরিমাণ আমরা কাজ করছি সে তুলনায় লোকবল কম। আমাদের নিজেদের লোক আছে ৩৪ জন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্য নিচ্ছি।’
সবশেষ সরকারি গেজেট অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ৮৩৪ জন। তবে আহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেনি সরকার। তবে ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, আহতের সংখ্যা সাড়ে ১২ হাজারেরও বেশি।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, সাধ্যমতো গুরুত্ব বিবেচনা করে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হয়তো আরো ভালো করার সুযোগ ছিল সেটা করা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রথমত আমরা এই ধরনের ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কেউই প্রস্তুত থাকে না। পৃথিবীতে এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটে নাই। এজন্য হয়তো প্রথম দিকে আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয়েছে, সেগুলো থাকতেই পারে, কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দেশের পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে এ ব্যাপারটায় সর্বোচ্চ সাধ্যমতো চেষ্টা করা হয়েছে।’