ঢাকা ০৪:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

‘হাসিনা সরকারের আমলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে’

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। পাচার হওয়া সেই অর্থ ফিরিয়ে আনা বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আজ (রোববার, ২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম একথা বলেন।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন। সেই সম্মেলনের বিস্তারিত জানাতে আজ ব্রিফিং করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এই সফরে বাংলাদেশ আসিয়ানভূক্ত দেশ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এসময় রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা আসিয়ানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’

তিনি আরো বলেন, দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা ছাড়াও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, আমেরিকার ট্রাম্প সরকার বিশ্বব্যাপী অর্থ সহায়তার কার্যক্রম বন্ধ করলেও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুতে অর্থ সহায়তা জারি রাখার কথা জানিয়েছে।

আমেরকিার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সম্প্রতি মিশর ও ইসরায়েল বাদে বিশ্বের সব দেশের জন্য সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই নির্দেশনার জেরে আমেরিকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড বাংলাদেশেও তাদের সহায়তা প্রদান স্থগিত করেছে। রোববার এক চিঠিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সুযোগ সুবিধা দিতে সাধারণত বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়। এ কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সহায়তা এসেছে আমেরিকা থেকে। ফলে মার্কিন সরকার সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে শঙ্কা তৈরি হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সহায়তা প্রদান বন্ধ সংক্রান্ত একটি গোপন নথিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, বিদ্যমান বা নতুন সহায়তার বিষয়গুলো পর্যালোচনা এবং অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে অর্থ ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে বিদেশি সহায়তার বিষয়গুলো রিভিউ করা হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ এই উদ্যোগ।

সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্প নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, গার্মেন্টসের এক্সপোর্ট কি কমেছে? আজকেও একটা পত্রিকায় দেখলাম যে ৫১টি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে। ফ্যাক্টরি বন্ধ হবে, খুলবে, একটা ন্যাচারাল প্রসেস। সরকার দেখে যে বাংলাদেশের এক্সপোর্ট বাড়ছে কি না। বাংলাদেশের এক্সপোর্ট সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ৭ শতাংশ, অক্টোবরে ১৬-১৮ শতাংশ, নভেম্বরে প্রায় ২২ শতাংশ। ডিসেম্বরে ১৮ শতাংশের মতো। আমাদের গ্রোথ এরকম।

তিনি বলেন, যেসব ফ্যাক্টরির মালিক পালিয়ে গেছে, তাদের পুরো বার্ডেনটা আমাদের ওপর দিয়ে গেছেন। ব্যাংকগুলো থেকে চুরি করে যা যা ছিল সব নিয়ে পালিয়ে গেছে। শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে তারা মজা দেখছেন। এক্সপোর্ট বাড়া মানে জব তৈরি হওয়া। ওভার অল এক্সপোর্ট আমাদের বাড়ছে। আমরা এক্সপোর্টের ফিগারের ব্যাপারে কোনো ম্যানিপুলেটিং করছি না। শেখ হাসিনার আমলে ম্যানিপুলেশন হয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা খুবই স্লো প্রসেস। এটার জন্য যত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে টাস্কফোর্স, অ্যাসেট রিকভারি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ১১টা টিম কাজ করছি। সারা বিশ্বের টপ টপ এজেন্সির সঙ্গে কথা বলছি। পাচার করা টাকা ফেরত আনা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শফিকুল আলম বলেন, যে টাকা পাচার হয়েছে সেটা বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের টাকা। তাদের টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে শেখ হাসিনার চোরতন্ত্রের লোকজন। সে টাকাটা আমরা যেভাবে হোক ফিরিয়ে আনব। সেটার জন্য আমরা গ্লোবালি একটা সমর্থক চাচ্ছিলাম। সেটাতে সবাই অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। এটা আমাদের টপ প্রায়োরিটি। প্রফেসর ইউনূস যখনই বিশ্বের টপ লিডারদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন তিনি এ বিষয়টা তুলছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বাংলাদেশের কসাই বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আসাদুজ্জামান খান বুচার (কসাই) অব বাংলাদেশ। তার নির্দেশে ছোট ছোটে ছেলেমেয়ে, তরুণ ছাত্র, শ্রমিক, রিকশাওয়ালাদের হত্যা করা হয়েছে। তাই সোজা কথায় তিনি বুচার (কসাই) অব বাংলাদেশ। পৃথিবীর কোনো দেশের গণমাধ্যম এমন লোকদের স্পেস দেয় না। আমাদের কিছু মিডিয়া তার বক্তব্য নিয়ে নিউজ করছে। তাহলে তাদের মানটা বোঝেন।’

সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

নিউজটি শেয়ার করুন

‘হাসিনা সরকারের আমলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে’

আপডেট সময় : ০৯:৫৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। পাচার হওয়া সেই অর্থ ফিরিয়ে আনা বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আজ (রোববার, ২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম একথা বলেন।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন। সেই সম্মেলনের বিস্তারিত জানাতে আজ ব্রিফিং করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এই সফরে বাংলাদেশ আসিয়ানভূক্ত দেশ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এসময় রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা আসিয়ানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’

তিনি আরো বলেন, দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা ছাড়াও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, আমেরিকার ট্রাম্প সরকার বিশ্বব্যাপী অর্থ সহায়তার কার্যক্রম বন্ধ করলেও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুতে অর্থ সহায়তা জারি রাখার কথা জানিয়েছে।

আমেরকিার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সম্প্রতি মিশর ও ইসরায়েল বাদে বিশ্বের সব দেশের জন্য সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই নির্দেশনার জেরে আমেরিকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড বাংলাদেশেও তাদের সহায়তা প্রদান স্থগিত করেছে। রোববার এক চিঠিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সুযোগ সুবিধা দিতে সাধারণত বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়। এ কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সহায়তা এসেছে আমেরিকা থেকে। ফলে মার্কিন সরকার সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে শঙ্কা তৈরি হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সহায়তা প্রদান বন্ধ সংক্রান্ত একটি গোপন নথিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, বিদ্যমান বা নতুন সহায়তার বিষয়গুলো পর্যালোচনা এবং অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে অর্থ ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে বিদেশি সহায়তার বিষয়গুলো রিভিউ করা হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ এই উদ্যোগ।

সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্প নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, গার্মেন্টসের এক্সপোর্ট কি কমেছে? আজকেও একটা পত্রিকায় দেখলাম যে ৫১টি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে। ফ্যাক্টরি বন্ধ হবে, খুলবে, একটা ন্যাচারাল প্রসেস। সরকার দেখে যে বাংলাদেশের এক্সপোর্ট বাড়ছে কি না। বাংলাদেশের এক্সপোর্ট সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ৭ শতাংশ, অক্টোবরে ১৬-১৮ শতাংশ, নভেম্বরে প্রায় ২২ শতাংশ। ডিসেম্বরে ১৮ শতাংশের মতো। আমাদের গ্রোথ এরকম।

তিনি বলেন, যেসব ফ্যাক্টরির মালিক পালিয়ে গেছে, তাদের পুরো বার্ডেনটা আমাদের ওপর দিয়ে গেছেন। ব্যাংকগুলো থেকে চুরি করে যা যা ছিল সব নিয়ে পালিয়ে গেছে। শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে তারা মজা দেখছেন। এক্সপোর্ট বাড়া মানে জব তৈরি হওয়া। ওভার অল এক্সপোর্ট আমাদের বাড়ছে। আমরা এক্সপোর্টের ফিগারের ব্যাপারে কোনো ম্যানিপুলেটিং করছি না। শেখ হাসিনার আমলে ম্যানিপুলেশন হয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা খুবই স্লো প্রসেস। এটার জন্য যত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে টাস্কফোর্স, অ্যাসেট রিকভারি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ১১টা টিম কাজ করছি। সারা বিশ্বের টপ টপ এজেন্সির সঙ্গে কথা বলছি। পাচার করা টাকা ফেরত আনা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শফিকুল আলম বলেন, যে টাকা পাচার হয়েছে সেটা বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের টাকা। তাদের টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে শেখ হাসিনার চোরতন্ত্রের লোকজন। সে টাকাটা আমরা যেভাবে হোক ফিরিয়ে আনব। সেটার জন্য আমরা গ্লোবালি একটা সমর্থক চাচ্ছিলাম। সেটাতে সবাই অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। এটা আমাদের টপ প্রায়োরিটি। প্রফেসর ইউনূস যখনই বিশ্বের টপ লিডারদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন তিনি এ বিষয়টা তুলছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বাংলাদেশের কসাই বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আসাদুজ্জামান খান বুচার (কসাই) অব বাংলাদেশ। তার নির্দেশে ছোট ছোটে ছেলেমেয়ে, তরুণ ছাত্র, শ্রমিক, রিকশাওয়ালাদের হত্যা করা হয়েছে। তাই সোজা কথায় তিনি বুচার (কসাই) অব বাংলাদেশ। পৃথিবীর কোনো দেশের গণমাধ্যম এমন লোকদের স্পেস দেয় না। আমাদের কিছু মিডিয়া তার বক্তব্য নিয়ে নিউজ করছে। তাহলে তাদের মানটা বোঝেন।’

সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।