কঙ্গোতে সংঘাত, রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে মদদের অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০৩:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে
পূর্ব কঙ্গোর খনিজ সমৃদ্ধ বিস্তীর্ণ অংশ ২০২১ সালে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম টোয়েন্টি থ্রি। কঙ্গোর সরকারের অভিযোগ, দেশটির বিপুল খনিজ সম্পদ লুট করতেই বিদ্রোহীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশি দেশ রুয়ান্ডা। কঙ্গোর সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের চলমান সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। তাদের থামাতে গিয়ে গোমা শহরে প্রাণ দিয়েছেন জাতিসংঘের ১৩ শান্তিরক্ষী। সাম্প্রতিক ঘটনায় একে অন্যকে দোষারোপ করছে দুই দেশ।
১০ বছর আগে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সেনাবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গড়ে ওঠে এম টোয়েন্টি থ্রি নামে একটি বিদ্রোহীগোষ্ঠী। প্রতিবেশি রুয়ান্ডার সীমান্তে খনিজ সমৃদ্ধ পূর্ব কঙ্গোর গোমা শহর নিজেদের দখলে রেখেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। ডিআরসি ও জাতিসংঘের অভিযোগ, এম টোয়েন্টি থ্রিকে সেনা ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে রুয়ান্ডা। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে নির্বিকার রুয়ান্ডা কর্তৃপক্ষ।
কঙ্গোর সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতে বৃহত্তম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। রুয়ান্ডা বলছে, ১৯৯৪ সালে দেশটিতে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, সেখানে কঙ্গোর হাত ছিল। তবে সমালোচকদের অভিযোগ, কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের স্বর্ণ, কোবাল্টের মতো খনিজ সম্পদ লুট করতেই বিদ্রোহীগোষ্ঠী এম টোয়েন্টি থ্রিকে ব্যবহার করছে প্রতিবেশি রুয়ান্ডা। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলছেন, কঙ্গোর কারণেই শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে।
রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্টের পল কাগামে বলেন, ‘শান্তি আলোচনার জন্য বৈঠকে বসতে আমরা বার বার জোর দিয়েছি। চুক্তিতে স্বাক্ষরের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। এখানে কোনো আলোচনারও প্রয়োজন ছিল না। শীর্ষ সম্মেলনকে রুয়ান্ডা ব্যর্থ করেনি, ব্যর্থ করেছে কঙ্গো।’
চলতি বছরের শুরুর দিকে কঙ্গোয় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে এম টোয়েন্টি থ্রি। দেশটির বাণিজ্যিক শহর গোমা পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের হতাহতের সংখ্যা এবং যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকায় অস্থায়ীভাবে কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে সংস্থাটি।
এসব ঘটনায় রুয়ান্ডার জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে নিন্দা জানিয়েছেন কঙ্গোর কর্মকর্তারা। এমনকি শহরের গভর্নরকে হত্যার জন্যও রুয়ান্ডাকে দায়ী করেছে কঙ্গোর সেনাবাহিনী।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র সিলভেইন একেঞ্জ বলেন, ‘শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হত্যা করা হচ্ছে বহু বেসামরিক নাগরিককেও। অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যে সব ধরনের সংকটের অবসান ঘটাতে হবে।’
১০ লাখ বাসিন্দার শহর গোমা ছেড়ে দলবেধে পালাচ্ছেন সবাই। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে মাত্র এক সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৪ লাখে পৌঁছেছে। বিদ্রোহী আক্রমণে হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না আহতদের। হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘বিদ্রোহীদের বোমাবর্ষণে বহু মানুষ মারা গেছেন। আমরা জীবন বাঁচাতে শহর ছেড়ে পালাচ্ছিলাম।’
আরেকজন বলেন, ‘বিদ্রোহীদের আক্রমণে বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন। গোটা গোমা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যে যেভাবে পারছে পালাচ্ছে।’
বিদ্রোহীরা দুটি ফ্রন্টে অগ্রসর হচ্ছে। এতে আতঙ্কে দিন পার করছেন গোমার বাসিন্দারা। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তারা। জাতিসংঘের আশঙ্কা, এই সহিংসতা প্রতিবেশি রুয়ান্ডা ছাড়াও উগান্ডায়ও ছড়িয়ে পড়তে পারে।