৮৫ গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে দেশের মাদক সাম্রাজ্য
- আপডেট সময় : ১২:০৬:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
দেশে মাদকের গডফাদার ৮৫ আর কারবারি প্রায় ১২ হাজার। সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বদি গ্রেপ্তার হওয়ার পর কক্সবাজারের মাদকের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তাঁর স্বজনদের হাতে। প্রায় নিয়মিতই সিন্ডিকেট প্রধানদের ধরতে তৎপরতার কথা বলা হলেও রাশ টানা যাচ্ছে না মাদকের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অলিগলিতেই মিলছে ক্রেজি ড্রাগস ইয়াবা কিংবা হেরোইন-ফেনসিডিল। এমনকি ভার্চুয়াল হাটে অর্ডার দিয়েও মিলছে মাদক। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের খবর হলো- দেশের রুট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে মাদক। মাদকের গডফাদারদের সঙ্গে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা-কর্মী জড়িত। তাদের অর্থের মূল উৎস এই মাদক।
রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত মাদক ব্যবসা পরিচালনার পৃষ্ঠপোষক হন এসব রাজনৈতিক নেতা। সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, ফেনী এলাকার একসময়ের মাদক ব্যবসায়ীরা এখন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে পদস্থ হয়েছেন। বনে গেছেন পৃষ্ঠপোষক। অর্থ লগ্নি করছেন মাদক ব্যবসায়। আর লাভের একটা অংশ নিয়মিতভাবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার পকেটে। তবে অর্থ লগ্নি নির্বিঘ্ন করতে তারা ব্যবসায়ীদের জন্য স্থানীয় থানাসহ প্রশাসনকে বিশেষ কায়দায় ম্যানেজ করে দেন।
সূত্র বলছে, করোনা শুরুর আগে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন সময় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের সময় ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত গডফাদারসহ ৩৮০ জনের তালিকাও বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ তালিকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নামও রয়েছে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে ৩ হাজার ৩৯৭টি অভিযান পরিচালনা করে ৭৬২টি মামলায় ৭১ জন শীর্ষ মাদক কারবারিসহ ৮৪৬ জনকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে ৮ জন মাদকের চিহ্নিত গডফাদার।
মিয়ানমার থেকে যে ইয়াবা-আইস ঢোকে, টেকনাফ-উখিয়াসহ কক্সবাজারের নানা পয়েন্ট দিয়ে এর একক নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির হাতে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০ আগস্ট সেই বদি আটক হলে তাঁর সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেন পাঁচ ভাইসহ স্বজনেরা। এর মধ্যে রয়েছে আব্দুল আমিন, আব্দুল শুকুর, মুজিবুর রহমান, শফিকুল ইসলাম ও ফয়সালের নাম। এ ছাড়াও তালিকায় আছেন তিন ভাগ্নে নিপুণ-সালমান, নাহিদ, চাচাতো ভাই ফরিদ আলম, বদির সহযোগী নূর মোহাম্মদ প্রকাশের নাম। তাঁরা মাদক ছাড়াও অস্ত্র ও অর্থপাচার মামলার আসামি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক তানভীর মমতাজ বলেন, মাদক চোরাচালানের সিন্ডিকেট ভাঙতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সারা দেশে ১২ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর তালিকাও করেছে অধিদপ্তর। এদের মধ্যে গডফাদার বলা হচ্ছে ৮৫ জনকে।
এ নিয়ে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানাস) সভাপতি অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, শুধু মাদক বহনকারী গ্রেপ্তার করেই দায় সারলে হবে না, আইনের আওতায় আনতে হবে রাঘব বোয়ালদের।