শীতকালীন কৃষিতে চাঙ্গা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি
- আপডেট সময় : ০১:৩২:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৬০ বার পড়া হয়েছে
শেষের দিকে শীতকাল। প্রকৃতির অঙ্গজুড়ে এখন কুয়াশার পিরান। সে চাদর সরিয়ে গাছিদের রস, মৌয়ালদের মধু আর আর চাষিদের সোনা ফলানোর চেষ্টা বাংলার পরতে পরতে। কারণ, হেমন্তের উপহার যদি হয় কৃষাণীর থালা ভরা ভাত, শীত যেন জোগায় সে সাদা ভাতের রসনা। দুর্ভোগকে আপন করে নেয়ার শীত হয়তো পেয়েছে কারো কারো ঠোট উল্টানো অনুযোগ, তাতে যেন এ ঋতুর কিছুই আসে যায় না! প্রকৃতির কাছে মাঘের শীত যেন লজ্জা না ভাঙ্গা এক নববধূর মুখ।
গ্রামের ঘরে ঘরে এখন হেমন্তের উপহার। গোলা ভরা ধান, পুকুরভরা মাছ গৃহভরা সুখ আর মনভরা সুর নিয়ে চাষিদের বাসন্তি ফসল রোপণের ব্যস্ততা।
শীতের আবহের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক যে ফসলের সে হাসিতে যেন ভরে উঠেছে কৃষকের জমিন। যার যতটুকু আছে, তাই নিয়ে যেন উর্বর মাঠিতে সোনা ফলাবার প্রাণপণ চেষ্টা। এজন্যই বুঝি শীতকে বলা হয় পৃথিবীর তীব্রতম ঋতু। প্রবাদ আছে, এক শীত টিকে যাওয়া মানে আরেকটি নতুন জীবন। শীত আসে শীত যায়, কিন্তু জীবন কী বদলায়?
পৌষ আর মাঘজুড়ে হিমেল সন্ধ্যায় উনুনে মচমচে পিঠা হয়ে উঠে, কারও স্বাদ আস্বাদন আর কারো জীবিকার উপলক্ষ্য। শহর কিংবা গ্রামের মোড়ে মোড়ে ভেসে আসে অভিন্ন ঘ্রাণ। এদিকে শহরবাসীর ব্যাগভর্তি সদাই আর ফ্রিজভর্তি যে রসনা, তার যোগানও তো এই ধূসর মাঠ থেকে। আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, মটরশুঁটি, ধনেপাতাসহ আরো কত কি!
কৃষি উদ্যোক্তা উম্মে কুলসুম বলেন, ‘পপি কৃষক ভাইদের জন্য কিন্তু এটা দারুণ একটা সময় শীতের মাঝামাঝি সময়ে তারা যে ফসলগুলো বাজারে নিয়ে তার ভালো একটা দাম পায়। একে আমি শীতে একটা আশীর্বাদ বলতে পারি।’
তবে কৃষি উৎপাদনের পর শস্য সংরক্ষণ, বিপণনসহ সকল আয়োজনেই গুরুত্বহীন এ মাটির স্বজনরা। কেবল কোনোরকমে খেয়ে পড়ে দিনাতিপাতেই তাদের সন্তুষ্টির ঢেঁকুর। শীতের অর্থনীতি তাদের খেরোখাতায় কতটা স্বাস্থ্যবান?
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘এই শীতের ভেতরেও যেসব খাদ্যশস্য আমরা উৎপাদন করি সেগুলো বাংলাদেশের মানুষের অনেক বড় সহায়ক হয়ে থাকে।’
কৃষি উদ্যোক্তা আবু সাঈদ আর সাগর বলেন, ‘বেশি উৎপাদন করা কি অপরাধ? যে অপরাধে দোষী আমাদের ফুলকপি চাষিরা। আমাদের সেকেন্ড ধাপের একটা প্ল্যান থাকা উচিত, যেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের উপরে আমরা দেশের বাহিরে রপ্তানি করব বা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিতে দিয়ে দিব। তাহলে আমাদের ওভারঅল সুন্দর একটা বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে এবং পরিকল্পনা মাফিক কৃষি তৈরি হবে।’
দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা নিয়ে আসা কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার শীতকে করে তুলেছেন উপভোগ্য। বুকের সবটুকু শীতলতা ঢেলে তিনি কবিতায় নির্মাণ করেছেন হিমশীতল প্রেমের তোরণ। তার কলমেই বলা যায়, ‘সব পাখি ঘরে আসে- ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন, থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।’ ঠিক যেমন কুয়াশার ঘোমটা দিয়ে মুখোমুখি, প্রকৃতি আর শীত।