ধরা পড়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসা উত্তর কোরিয়ার সেনারা। সম্প্রতি উদ্ধার পাওয়া কিছু নোটবুক ও সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে এমন দাবি করছে কিয়েভ। ইউক্রেনীয় সেনারা বলছেন, ভ্রান্ত দেশপ্রেম ও নৃশংস যুদ্ধনীতিতে উদ্বুদ্ধ তরুণ সেনাদের ‘ব্রেইনওয়াশ’ করে রণক্ষেত্রে পাঠাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন।
ধরা পরার চেয়ে আত্মঘাতী হওয়া ভালো কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিমের জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম। এমন সুইসাইড নোট লিখে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত উত্তর কোরীয় সেনারা।
সম্প্রতি এই উত্তর কোরীয় সেনাদের মনোভাব নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। সেখানে বলা হচ্ছে ৮০'র দশকে ব্যবহৃত আত্মঘাতী ও নৃশংস যুদ্ধনীতি ব্যবহার করছে কিম জং উনের সেনারা।
ইউক্রেনের সেনাদের বিভ্রান্ত করতে প্লাটুন ছেড়ে শত্রুপক্ষের ঘাঁটির দিকে ছুটে যাচ্ছেন কেউ কেউ। গায়ের ভারী পোশাক ছেড়ে সহযোদ্ধাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন ইউক্রেন থেকে ছোঁড়া ড্রোনের সামনে।
ইউক্রেনের এক সেনা সদস্য বলেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা বয়সে তরুণ। কিন্তু ৮০ দশকে প্রচলিত বিধ্বংসী ও আত্মঘাতী যুদ্ধনীতির সাথে তারা পরিচিত। যতই আপনি আত্মসমর্পণের পথ খোলা রাখুন, প্রাণ গেলেও তারা শত্রুর হাতে ধরা দেবে না।
গেল বছরের আগস্টে কুরস্ক অঞ্চলে সাফল্য পাওয়ার পর জেলেনস্কির সেনাদের উপযুক্ত জবাব দিতে রুশ বাহিনীতে যোগ দেয় উত্তর কোরিয়ার ১৬ হাজারের বেশি সেনাসদস্য। এরমধ্যে গেল ৪ মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজারের বেশি উত্তর কোরীয় সেনা।
তবে এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিধন করার চেয়ে জীবিত অবস্থায় জিম্মি করতে চায় কিয়েভ। কিন্তু মৃত্যু অবধারিত জেনেও শত্রুর কাছে ধরা দিতে চায় না কিমের সৈন্যরা। এজন্য অধিকাংশ অভিযানে উত্তর কোরীয় সেনাদের কোমরের নিচে গুলি করে তাদের আটকের চেষ্টা করছে ইউক্রেনের সেনারা।
ইউক্রেনীয় সেনারা দাবি করছেন, মিলিটারি কোড ও ভ্রান্ত দেশপ্রেমের বুলি শুনিয়ে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের আত্মহননের পথে ঠেলে দিচ্ছেন কিম জং উন। এসব সেনাদের পকেট থেকে উদ্ধার হচ্ছে ভুয়া রুশ নাগরিকত্ব ও পাসপোর্টের কপি। আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া এমন এক কোরীয় সেনার সুইসাইড নোট পড়ে শোনাতেও দেখা যায় সিএনএনের প্রতিবেদনে।
এক নোটে লেখা ছিল, আমরা এমন শক্তিধরের উপাসনা করি, যাকে দেখলে শত্রুর ঘুম হারাম হয়ে যায়। হে বিশ্ববাসী, তোমরা চোখ খুলে দেখ। আমাদের বিজয় অনিবার্য।
উত্তর কোরিয়ার সেনাদের আটকের পর তাদের বেশ কিছু নোটবুকও উদ্ধার করে ইউক্রেনীয় সেনারা। সেখান যুদ্ধের নৃশংস কৌশল, শত্রুর কাছে ধরা পড়ার আগে আত্মহত্যার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নোটস পাওয়া যায়। ইউক্রেনের সেনারা বলছেন, এসব নোটবুকের তথ্য পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, কতটা বিকৃত মানসিকতা নিয়ে পুতিন ও তার সহযোদ্ধারা রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন।
আরেক ইউক্রেনীয় সেনা সদস্য বলেন, ‘এমনও দেখেছি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট খুলে সেনারা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের ঠোঁটে গ্রেনেডের চাবি। তারা এত দ্রুত চলাফেরা করতে পারে যে ড্রোন হামলার সাহায্যে ঐ সেনাদের থামানো যায় না।’
যদিও এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি মস্কো বা পিয়ংইয়ং। বরং কিয়েভ আরও দাবি করছে, তরুণ সেনাদের সক্ষমতা যাচাই করতে অনৈতিক একটি যুদ্ধে জড়িয়েছেন কিম।
সক্ষমতা পরীক্ষা নিতে গিয়ে অবলীলায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন কমবয়সী সেনাসদস্যদের। দক্ষিণ কোরীয় হাজারও তরুণ যোদ্ধাকে ফার্স্ট হ্যান্ড ব্যাটেলের প্রশিক্ষণ দিতে বেছে নিয়েছেন আত্মঘাতী এক পন্থা।