বেড়েছে সবজির সরবরাহ, স্বস্তি ফিরেছে বাজারে

- আপডেট সময় : ০২:৪৭:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৭৪ বার পড়া হয়েছে

বাজারে বেড়েছে সবজির সরবরাহ ফলে দাম গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কমে যাচ্ছে। দাম কমায় স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতাদের। বিক্রেতারা বলছে গত দুই মাস আগের তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে বিক্রিও। শুধু সবজির বাজার নই আগের তুলনায় মাছ-মাংসের দাম সাধ্যের মধ্যে আসায় স্বস্তি ফিরেছে নিন্ম-মধ্যবিত্তদের মধ্যে। এমনকি ব্রয়লার মুরগিও বিক্রি হচ্ছে দুইশো টাকার মধ্যেই। তবে গরু-খাসির মাংস অপরিবর্তিত রয়েছে বলেও বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসব বাজারে সিম ১৫ থেকে ৪০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা পিস, বাঁধাকপি বড় সাইজের ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পাকা টমেটো কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা কেজি ২০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০ টাকা, খিরাই ৪০ টাকা এবং শসা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা এবং কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতা ১০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। বগুড়ার লাল আলু ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৯০ টাকা, মুড়ি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনি কেট চাল ৭৮ থেকে ৮৬ টাকা এবং নাজির সের ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, বাজারের সবজির দাম তুলনামূলক কম যে কারণে এই সময়ে এসে ইচ্ছেমতো সবজি কেনা যাচ্ছে। দুই একটি সবজি যেগুলোর এখন মৌসুম নয় সেগুলো ছাড়া সবধরনের সবজির দামই কম। দুই তিন মাস আগেও সবজির দাম খুবই চড়া ছিল তখন ক্রেতারা, আমি নিজেও হাফ কেজি, আড়াইশো গ্রাম করে সবজি কিনেছি। সেই তুলনায় এখন সবজির দাম অনেক কম, এসে করে ক্রেতাদের স্বস্তি ফিরেছে। সবজি দামের মত যদি অন্যান্য সব পণ্যের দাম কম থাকতো তাহলে সাধারণ ক্রেতারা আরো স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারতেন।
মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা ফয়সাল আহমেদ বলেন, কিছুদিন আগেও অতিরিক্ত দামের কারণে আমরা সবজি কিনতে পারতাম না। সেই তুলনায় এখন সবজির দাম কম, মূলত শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় দামটা আমরা কম পাচ্ছি। তবে শীত চলে গেলে মনে হয় আবারও সবজির দাম বেড়ে যাবে। বাজার সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের উচিত হবে সবসময়ের জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা। নইলে ফের সবজির দাম বেড়ে যাবে। বর্তমানে সবজির যে বাজার দর আছে তাতে করে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কিনতে পারছেন। নিম্নআয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবার জন্যই বর্তমানে সবজির বাজার নাগালের মধ্যে।
সোনালি কক মুরগি ৩৩০ টাকায় এবং সোনালি হাইব্রিড ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগী ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী ১৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫২০ টাকা করে দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার চড়া রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৭০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা,বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারের মাছ ও মাংসের দাম তুলনামূলক কম থাকায় স্বস্তি ফিরেছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে। শহিদুল ইসলাম নামক এক ভ্যানচালক বলেন, মাছ-মাংসের দাম কিছুটা কম থাকায় কোনোরকম খেয়েপরে পরিবার নিয়ে চলা যাচ্ছে। পাঙাস মাছ কিনেছি। এছাড়াও কিছু শাকসবজি কিনেছি। মাছসহ সবমিলিয়ে তিনশো টাকার করেছি, পুরো ব্যাগ ভরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি বাজারের দিকে একটু নজর দেন, তাহলে জিনিসপত্রের দাম আরও কমে যাবে। এখন তো ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম কমায় বাড়ায়। এই সরকারের কাছে আমাদের মতো মানুষের অনেক প্রত্যাশা।
বেসরকারি এনজিও কর্মী আশরাফুল ইসলাম বলেন, গরুর মাংস নিয়েছি ৭৫০ টাকায়। এটা একটু কমতে পারে। এর আগেও ৬৫০ টাকা করে বিক্রি করে মাংস বিক্রেতা খলিলসহ অনেকে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাহলে অন্যরা কেন কমে বিক্রি করতে পারে না? সবকিছুই আসলে ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে।
মাছের দাম তুলনামূলক কম থাকায় ক্রেতাদের হাসিমুখে খুশি মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ শওকত মিয়া। তিনি বলেন, এ সপ্তাহে মাছের বাজারে দাম কিছুটা নিম্নমুখী, তবে বেচাকেনা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। দাম একটু কম থাকলে সবসময়ই বেচাকেনা ভালো থাকে। অনেক সময় সকালেই সব মাছ বিক্রি হযে যায়, আবার বাজার বাড়তি থাকলে বফর দিয়ে পরদিনও বিক্রি করতে হয়।
মুরগির মাংস বিক্রেতা শফিক মিয়া বলেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় এই দিনে মুরগির চাহিদাটা একটু বেশিই থাকে। তবে দাম গত সপ্তাহের তুলনায় একটু কমেছে। গত সপ্তাহেও ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি, আজকে ২০০ টাকায় দিয়ে দিচ্ছি। খামারি পর্যায়েই বেশি দামে কিনলে আমাদেরও দামটা বাড়াতে হয়, কমে আসতে পারলে কমেই বিক্রি করি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বিক্রি হচ্ছে।