ভিনদেশি সংস্কৃতির আধিপত্যে বাড়ছে বাংলার প্রতি ঔদাসীন্য
- আপডেট সময় : ০১:২১:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
৫২’র রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে পাওয়া মাতৃভাষা বাংলা। কয়েক দশক পেরিয়েও মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার সার্বজনীন করা যায়নি। বিশ্বায়ন আর ভিনদেশি সংস্কৃতির আধিপত্যে বেড়েছে বাংলার প্রতি উদাসীনতা। তবে তরুণ প্রজন্মের দাবি, বাংলা ভাষার প্রতি দায় ও দরদ বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে রাষ্ট্রকেই। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের কার্যক্রম চলমান বলছে বাংলা একাডেমি।
ফেব্রুয়ারি, বাঙালির এক অনির্বাণ বাতিঘর। শোক আর গৌরবের অধ্যায়। যার পরতে পরতে আত্মত্যাগের গল্প-গাঁথা।
রক্তের দামে কেনা মায়ের ভাষা। ৫২’র ফেব্রুয়ারিতে রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারদের প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। আনন্দ-বেদনা, ইচ্ছা-আকাঙ্খার সবটুকুই যেন নিংড়ে দেয়া এই বাংলাতেই। শেকড়ের নির্যাস খুঁজে পাওয়া যায় মায়ের ভাষায়।
৫২ থেকে একাত্তর, তারপর কর্তৃত্ববাদ থেকে মুক্তির ২৪, এই দীর্ঘ পথচলায় মাতৃভাষার প্রচলন যেখানে অপরিহার্য, সেখানে বাংলা ভাষার প্রতি অবমূল্যায়নও কম নয়।
শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে কর্মক্ষেত্র কিংবা বিচার ব্যবস্থায় সার্বজনীন করা যায়নি বাংলাকে। বিশ্বায়ন আর ইংরেজির আধিপত্যে বাড়ছে বাংলার প্রতি অবজ্ঞা-ঔদাসীন্য।
তবে বাংলা ভাষার প্রতি দায় ও দরদে যে ছেদ, তা দূর করে সার্বজনীন করার আহ্বান তারুণ্যের কণ্ঠে। দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক রচনাসহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে মাতৃভাষার মূল্যায়নের দাবি তরুণদের।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানানোর ক্ষেত্রে ভাষার প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দায়-দরদ বা শুধু আবেগের প্রশ্ন না। এটা তো আমার আবেগে আছে, প্রাত্যহিক জীবনে জড়িত। কিন্তু আপনার কাজের ভাষা কোনটা হবে? কোন ভাষায় আপনি লিখবেন, পড়বেন, কোন ভাষায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন এটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যেটা সবসময় অবহেলিত থাকে। একুশে ফেব্রয়ারি উদযাপন করার ক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে এটা রাষ্ট্রভাষা বা দাপ্তরিক ভাষা হওয়ার বিষয়টা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। এবার সংবিধান সংস্কার কমিশন অনেকগুলো প্রস্তাবের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার কথাও বলেছেন। এটা ভালো।’
বিশ্বায়ন কিংবা প্রযুক্তির বিকাশে ভিনদেশি ভাষার প্রভাব যখন বাড়ছে তখন কি উদ্যোগ বাংলা একাডেমির? এমন বাস্তবতাকে সঙ্গী করে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, শ্রেণিভেদে ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তথ্য প্রযুক্তি ও উপস্থাপন কৌশলের বন্দোবস্তে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘নতুন পরিপ্রেক্ষিতে যখন আমাদের উচ্চ ও মধ্য শ্রেণির প্রায় সমস্তে ছেলে-মেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে তখন আমরা এটাকে কীভাবে সম্প্রসারিত করতে পারি? বাংলা একাডেমি যে তার কাজ আমূল পরিবর্তন করে ফেলতে পারবে তা নয়। কিন্তু যেটা করতে পারে সবার কাছে পৌঁছানোর বন্দোবস্ত করতে পারে। আমরা মনে করি নতুন উদ্যোগ হিসেবে বাংলা একাডেমি গ্রহণ করেছে, আরো আগেই নেয়া দরকার ছিল। ইনফরমেশন টেকনোলজি বা তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কি মাধ্যম ও উপস্থাপন কৌশলগুলো এগুলোর দিকে আরো বেশি অগ্রসর হতে হবে।’
ভাষা গবেষক ও বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান, ঐতিহ্য আর অর্জনের গৌরব সত্ত্বেও গবেষণা আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পিছিয়ে পড়েছে বাংলা। এজন্য, ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার তাগিদ তার।
গবেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের জাতির একটা অসাধারণ সামর্থ্য আছে নিজেদের ভাষাকে উন্নত করার। সরকারের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সে সরকার নানাভাবে বাংলা একাডেমিকে ব্যবহার করতে চায়। এর ফলে বাংলা একাডেমি যেসব কাজ করতে পারতো বা আরো সম্ভাবনা ছিল তার অনেক সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা বলব যে সরকারি সহায়তা দরকার। কিন্তু সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভর করে থাকলে বাংলা ভাষা এতদূর এগোতে পারতো না।’
বাঙালির অস্তিত্ব, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত মান মর্যাদার প্রশ্নে অবহেলা নয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি আইন প্রয়োগ করে বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাকে তুলে ধরার আহ্বান সবার।