ঢাকা ০১:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মমতা কুলকার্নিকে দেয়া উপাধি কেড়ে নেওয়া হল

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:১৭:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ধুমধাম করে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন মমতা কুলকার্নি। কিন্নড় আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর করা হয়েছিল তাঁকে। সঙ্গে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন, ব্রক্ষ্মচর্য, সাধুসেবার কী তবে কোনও মূল্য নেই? শেষ পর্যন্ত মমতাকে মহামণ্ডলেশ্বর পদ থেকে সরিয়ে দিলেন আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা ঋষি অজয়দাস।

এই উপাধি তিনি আর ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, মমতাকে এই উপাধি দেওয়ার জন্য আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর ড. লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠীকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিতর্কের জেরেই এমন সিদ্ধান্ত বলে অনুমান অনেকেরই। এই প্রসঙ্গে ঋষি অজয়দাস স্পষ্ট বলেন, “কিন্নড় আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উজ্জয়িনী কুম্ভ ২০১৫-১৬-তে নিযুক্ত আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠীকে মহামণ্ডলেশ্বরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল।”

এর কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি, “যে উদ্দেশ্যে তাঁকে এই পদ দেওয়া হয়েছিল, অর্থাৎ ধর্ম প্রচার এবং কিন্নর সমাজের উন্নতি, তা থেকে তিনি বিচ্যুত হয়েছেন। আমার অনুমতি ছাড়া ২০১৯ সালের প্রয়াগরাজ কুম্ভে জুনা আখাড়ার সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেছেন, যা শুধু অনৈতিকই নয়, এক ধরনের প্রতারণা। প্রতিষ্ঠাতার সম্মতি ও স্বাক্ষর ছাড়া চুক্তি করা আইনের দিক থেকেও বৈধ নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই চুক্তিতে জুনা আখড়া কিন্নর আখড়াকে সম্বোধন করেছে, যার মানে হল, কিন্নর আখড়াকে ১৪ তম আখড়া হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাহলে সনাতন ধর্মে ১৩ নয়, ১৪ আখড়া স্বীকৃত, এই চুক্তি থেকেই তা স্পষ্ট।”

এরপর মমতা কুলকার্নির প্রসঙ্গ টেনে আনেন ঋষি অজয়দাস। তিনি বলেন, “আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠী শুধু অসাংবিধানিক নয় সনাতন ধর্ম ও দেশহিতের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তিনি মমতা কুলকার্নির মতো ব্যক্তি যিনি দেশদ্রোহের মামলায় জড়িত এবং গ্ল্যামার জগতের সঙ্গে যুক্ত, তাঁকে ধর্মীয় নিয়ম ও আখড়ার ঐতিহ্য জলাঞ্জলি দিয়ে সরাসরি মহামণ্ডলেশ্বরের উপাধি ও অভিষেক করিয়েছেন।

বৈরাগ্যের পথ অনুসরণ করানোর পরিবর্তে তিনি সরাসরি এই পদ দিয়েছেন, যা একেবারেই অনুচিত। এই কারণেই আমি বাধ্য হয়ে দেশের, সনাতন ধর্মের ও সমাজের কল্যাণে তাঁদের এই পদ থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি।” কিন্নর আখড়ার প্রতীক ও চিহ্নের অবমাননা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ঋষি অজয়দাস। তাঁর কথায়, “এরা না জুনা আখড়ার নীতি মানে, না কিন্নর আখড়ার আদর্শ।” উদাহরণও দেন তিনি। বলেন, “কিন্নর আখড়া গঠনের সময় গলায় বৈজয়ন্তী মালা পরানো হয়েছিল, যা সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু তাঁরা সেটি ত্যাগ করে রুদ্রাক্ষের মালা পরিধান করছে, যা সন্ন্যাসের প্রতীক। অথচ সন্ন্যাস গ্রহণের সময় মুন্ডন (ন্যাড়া হওয়া) সংস্কার করতে হয়। এঁরা সনাতন ধর্মপ্রেমী ও সমাজের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।”

এর আগেও একাধিক বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল মমতার। একদা বলিউডের হার্টথ্রব, অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি ও তাঁর স্বামী ভিকি গোস্বামীকে আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্র চালানোর অভিযোগে কেনিয়ায় আটক করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে মাদক পাচারের অভিযোগে কেনিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়েন মমতা কুলকার্নি এবং তাঁর স্বামী ভিকি।

২০১৬ সালের অগাস্টে মাদক মামলায় মমতা কুলকার্নির ৮টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছিল মুম্বই পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল মমতা কুলকার্নির নামে গুজরাত, মুম্বই ও সংলগ্ন এলাকায় ৮টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৯০ লক্ষ টাকা রয়েছে। মাদক মামলায় সেই অ্যাকাউন্টগুলিই ফ্রিজ করে পুলিশ। অভিযোগ ওঠে, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের কিংপিন ভিকি গোস্বামীর সঙ্গে মাদক কারবারে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মমতা কুলকার্নি। ২০১৬ তে মহারাষ্ট্রের থানের কাছে তল্লাশি চালিয়ে ২ হাজার কোটি টাকার মাদক তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার হয়।

পুলিশ সূত্রে দাবি, ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে ভিকি গোস্বামী ও মমতা কুলকার্নির নাম উঠে এসেছিল। যদিও কেনিয়া থেকে এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খারিজ করে দেন মমতা কুলকার্নি।

প্রসঙ্গত, ২৪ জানুয়ারি প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে পুন্যস্নান সেরে সন্ন্যাস নিয়ে কিন্নড় আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর হয়েছিলেন নয়ের দশক কাঁপানো নায়িকা মমতা কুলকার্নি। তাঁর নতুন নাম হয়েছিল মমতা নন্দগিরি। তাঁকে মহামণ্ডলেশ্বরের পদে অভিষিক্ত করার পর থেকেই উঠেছিল সমালোচনার ঢেউ। শুরু হয়েছিল বিতর্ক।

নিউজটি শেয়ার করুন

মমতা কুলকার্নিকে দেয়া উপাধি কেড়ে নেওয়া হল

আপডেট সময় : ০১:১৭:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ধুমধাম করে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন মমতা কুলকার্নি। কিন্নড় আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর করা হয়েছিল তাঁকে। সঙ্গে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন, ব্রক্ষ্মচর্য, সাধুসেবার কী তবে কোনও মূল্য নেই? শেষ পর্যন্ত মমতাকে মহামণ্ডলেশ্বর পদ থেকে সরিয়ে দিলেন আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা ঋষি অজয়দাস।

এই উপাধি তিনি আর ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, মমতাকে এই উপাধি দেওয়ার জন্য আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর ড. লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠীকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিতর্কের জেরেই এমন সিদ্ধান্ত বলে অনুমান অনেকেরই। এই প্রসঙ্গে ঋষি অজয়দাস স্পষ্ট বলেন, “কিন্নড় আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উজ্জয়িনী কুম্ভ ২০১৫-১৬-তে নিযুক্ত আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠীকে মহামণ্ডলেশ্বরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল।”

এর কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি, “যে উদ্দেশ্যে তাঁকে এই পদ দেওয়া হয়েছিল, অর্থাৎ ধর্ম প্রচার এবং কিন্নর সমাজের উন্নতি, তা থেকে তিনি বিচ্যুত হয়েছেন। আমার অনুমতি ছাড়া ২০১৯ সালের প্রয়াগরাজ কুম্ভে জুনা আখাড়ার সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেছেন, যা শুধু অনৈতিকই নয়, এক ধরনের প্রতারণা। প্রতিষ্ঠাতার সম্মতি ও স্বাক্ষর ছাড়া চুক্তি করা আইনের দিক থেকেও বৈধ নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই চুক্তিতে জুনা আখড়া কিন্নর আখড়াকে সম্বোধন করেছে, যার মানে হল, কিন্নর আখড়াকে ১৪ তম আখড়া হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাহলে সনাতন ধর্মে ১৩ নয়, ১৪ আখড়া স্বীকৃত, এই চুক্তি থেকেই তা স্পষ্ট।”

এরপর মমতা কুলকার্নির প্রসঙ্গ টেনে আনেন ঋষি অজয়দাস। তিনি বলেন, “আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠী শুধু অসাংবিধানিক নয় সনাতন ধর্ম ও দেশহিতের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তিনি মমতা কুলকার্নির মতো ব্যক্তি যিনি দেশদ্রোহের মামলায় জড়িত এবং গ্ল্যামার জগতের সঙ্গে যুক্ত, তাঁকে ধর্মীয় নিয়ম ও আখড়ার ঐতিহ্য জলাঞ্জলি দিয়ে সরাসরি মহামণ্ডলেশ্বরের উপাধি ও অভিষেক করিয়েছেন।

বৈরাগ্যের পথ অনুসরণ করানোর পরিবর্তে তিনি সরাসরি এই পদ দিয়েছেন, যা একেবারেই অনুচিত। এই কারণেই আমি বাধ্য হয়ে দেশের, সনাতন ধর্মের ও সমাজের কল্যাণে তাঁদের এই পদ থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি।” কিন্নর আখড়ার প্রতীক ও চিহ্নের অবমাননা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ঋষি অজয়দাস। তাঁর কথায়, “এরা না জুনা আখড়ার নীতি মানে, না কিন্নর আখড়ার আদর্শ।” উদাহরণও দেন তিনি। বলেন, “কিন্নর আখড়া গঠনের সময় গলায় বৈজয়ন্তী মালা পরানো হয়েছিল, যা সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু তাঁরা সেটি ত্যাগ করে রুদ্রাক্ষের মালা পরিধান করছে, যা সন্ন্যাসের প্রতীক। অথচ সন্ন্যাস গ্রহণের সময় মুন্ডন (ন্যাড়া হওয়া) সংস্কার করতে হয়। এঁরা সনাতন ধর্মপ্রেমী ও সমাজের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।”

এর আগেও একাধিক বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল মমতার। একদা বলিউডের হার্টথ্রব, অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি ও তাঁর স্বামী ভিকি গোস্বামীকে আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্র চালানোর অভিযোগে কেনিয়ায় আটক করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে মাদক পাচারের অভিযোগে কেনিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়েন মমতা কুলকার্নি এবং তাঁর স্বামী ভিকি।

২০১৬ সালের অগাস্টে মাদক মামলায় মমতা কুলকার্নির ৮টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছিল মুম্বই পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল মমতা কুলকার্নির নামে গুজরাত, মুম্বই ও সংলগ্ন এলাকায় ৮টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৯০ লক্ষ টাকা রয়েছে। মাদক মামলায় সেই অ্যাকাউন্টগুলিই ফ্রিজ করে পুলিশ। অভিযোগ ওঠে, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের কিংপিন ভিকি গোস্বামীর সঙ্গে মাদক কারবারে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মমতা কুলকার্নি। ২০১৬ তে মহারাষ্ট্রের থানের কাছে তল্লাশি চালিয়ে ২ হাজার কোটি টাকার মাদক তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার হয়।

পুলিশ সূত্রে দাবি, ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে ভিকি গোস্বামী ও মমতা কুলকার্নির নাম উঠে এসেছিল। যদিও কেনিয়া থেকে এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খারিজ করে দেন মমতা কুলকার্নি।

প্রসঙ্গত, ২৪ জানুয়ারি প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে পুন্যস্নান সেরে সন্ন্যাস নিয়ে কিন্নড় আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর হয়েছিলেন নয়ের দশক কাঁপানো নায়িকা মমতা কুলকার্নি। তাঁর নতুন নাম হয়েছিল মমতা নন্দগিরি। তাঁকে মহামণ্ডলেশ্বরের পদে অভিষিক্ত করার পর থেকেই উঠেছিল সমালোচনার ঢেউ। শুরু হয়েছিল বিতর্ক।