ঈদ পর্যন্ত মাকে নিজের কাছে রাখতে চান তারেক রহমান
- আপডেট সময় : ০৩:২৫:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে লিভার প্রতিস্থাপন করা না গেলেও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে খুব শিগগিরই তিনি দেশে ফিরতে পারবেন, এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত মাকে নিজের কাছে রাখতে চান তারেক রহমান।
গতকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য লন্ডন থেকে এসব তথ্য জানান।
ওই চিকিৎসক জানান, দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনির সঙ্গে খালেদা জিয়া আনন্দে সময় পার করছেন। বেশ খোশমেজাজে আছেন তিনি। এর ফলে খালেদা জিয়ার মানসিক অবস্থা বেশ ভালো। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরতে চান। তবে তার ছেলে তারেক রহমানের চান ঈদুল ফিতর পর্যন্ত খালেদা জিয়া লন্ডনে থাকুন।
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রায় শেষ। দেশে ফেরার আগে তাঁকে শেষবার ফলোআপ চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে। তাঁর কিডনিতে যে সমস্যা ছিল তা অনেকটা উন্নতি হয়েছে। অন্য জটিলতাও কমছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি। খালেদা জিয়া না ফিরলেও সপ্তাহখানেকের মধ্যে কয়েকজন তার সফরসঙ্গী কয়েকজন চিকিৎসক দেশে ফিরবেন। বাকিরা থাকে যাবেন। যারা দেশে ফিরবেন, তারা জুম প্ল্যাটফর্মে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।
টানা ১৭ দিন চিকিৎসা নিয়ে দ্য লন্ডন ক্লিনিক থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। সম্প্রতি লন্ডন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। এখন কিডনিতে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। যদিও এতে উদ্বেগের কিছু নেই।
কবে দেশে ফিরতে পারবেন খালেদা জিয়া- এমন প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক জানান, মূল চিকিৎসা শেষ হয়েছে বলা যায়। এখন ফলোআপ করতে হবে। কবে দেশে ফিরবেন, এটা বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নির্ভর করছে।
দুদিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশে ফেরার জন্য অত্যন্ত উদগ্রীব। তিনি বলেছেন, চলো, আমরা দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে যাই। দেশই আমাদের জন্য ভালো।’
জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ ছিলেন। তাঁর বেশকিছু শারীরিক পরীক্ষা আমরা আগে করিয়েছি, তবে কিছু পরীক্ষা দেশে সম্ভব হয়নি। সেগুলো লন্ডন ক্লিনিকে করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। সেগুলো পাওয়ার পরপরই সিদ্ধান্ত হবে তিনি কত দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে যাবেন।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, প্রফেসর জন প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁর নিয়মিত ফলোআপ করছেন। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর চিকিৎসা চলছে।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। ৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ২০২০ সালে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পেলেও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরপর চার বছরে তাকে কয়েক দফা ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রক্তনালির মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দিয়ে যান। তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা দরকার। গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দিলে সেই সুযোগ তৈরি হয়।