মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন ট্রাম্প!
- আপডেট সময় : ০১:৪৯:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে
শুল্কারোপের মাধ্যমে কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে যেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি মাথা থেকেই ঝেড়ে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালের বিবৃতিতে তিনি সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে সবাইকে মূল্য দিতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার পরিবর্তে উল্টো পথে হাঁটছেন ট্রাম্প।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। যুক্তরাষ্ট্রকে সেরা বানানোর স্বপ্নটা সুন্দর হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেছে নেয়া উপায়টা বেশ বিতর্কিত।
যুক্তরাষ্ট্রকে শ্রেষ্ঠ অবস্থানে নিয়ে যেতে দেশের মানুষের কথা না ভেবেই সারাবিশ্বে কঠিন বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়ার পথে ট্রাম্প। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে অভিবাসীদের দক্ষিণ সীমান্তেই আটকে দিয়েছেন তিনি। পরিস্থিতি এখন এমন যে, প্রচারণার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যেমন সম্মান রক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি ভোটারদের জন্য অপেক্ষা করছে চড়ামূল্যের অর্থনৈতিক ধাক্কা।
আন্তর্জাতিক সব সহায়তা বন্ধ, চীন-কানাডা আর মেক্সিকোর পণ্যে শুল্কারোপ, পানামা খাল আর গ্রিনল্যান্ড দখলে নেয়াসহ ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে মার্কিন নেতৃত্বের ঐহিত্য। দেশের ভেতর সরকার কর্মী ছাঁটাই আর সরকারি নানা খাতে ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে চাপের মুখে পড়তে পারেন লাখ লাখ মার্কিন।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছেন তিন সপ্তাহ হয়ে গেছে। এরমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে এমন রক্ষণশীল আচরণ কেন করছেন তিনি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকা মার্কিন নীতির পরিবর্তন কিংবা আইনকে চ্যালেঞ্জ করে আদৌ কি প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন তিনি? উঠছে সেই প্রশ্নও। যে ভোটাররা তাকে নির্বাচিত করেছেন, তাদের ওপরই অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রকে মিত্র দেশগুলো থেকে আলাদা করছেন, আন্তর্জাতিক নীতিও লঙ্ঘন করছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্প হাঁটছেন পুরোই উল্টো পথে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রন ব্রাউনস্টেন বলেন, ‘শুল্কারোপ হবে আর প্রভাব পড়বে না, এমন নীতি অর্থনীতিতে নেই। দেশের ভোক্তাদের ওপরই এই চাপ পড়ে। অথচ ভোটারদের জন্য প্রথম ইস্যু ছিল মূল্যস্ফীতি। সেটা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। অন্য দেশের পণ্যে শুল্কারোপের নীতি বরাবরই নিজের দেশকে ঝুঁকিতে ফেলে।’
যদিও ট্রাম্পের লক্ষ্য, দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা, মুক্ত বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা এবং যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে সমৃদ্ধ করা। কিন্তু এতে মার্কিন মিত্র দেশগুলো মন্দায় পড়ে যেতে পারে, তাতে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করছেন না ট্রাম্প। দেশের অর্থনীতি নিয়ে একরকম জুয়া খেলায় মেতেছেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপে মার্কিন অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছেন ট্রাম্প। শুল্কারোপের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক হারে বাড়বে।
রন ব্রাউনস্টেন বলেন, ‘মেক্সিকো আমাদের ফল, সবজির বড় বাজার। কাঠের জন্য আমরা কানাডার ওপর নির্ভরশীল। অবকাঠামো খাতে খরচ বাড়বে। প্রথম মেয়াদে চীনের বাজার হারিয়েছি। বলা হতো জো বাইডেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ট্রাম্পের সময় মূল্যস্ফীতি কম ছিল। এখন ট্রাম্প মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর পথে হাঁটছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ঘোরের মধ্যে থেকে অনেক সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুর্বল দেশের ওপর জোর খাটাচ্ছেন তিনি। ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক ঝুঁকি অনেক বেশি। উপর্যুপরি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ায় মিত্র দেশগুলো পরিণত হতে পারে শত্রুতে। অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক আর অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার এমন ভয়াবহ ব্যবহার, সাধারণ মানুষের জন্য মেনে নেয়া বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, কানাডার পণ্যে শুল্কারোপে বিশ্বস্ত এই দুই মিত্রদেশ পড়তে পারে মন্দায়। বিপাকে পড়তে পারেন দেশটির হাজার হাজার কর্মী। মেক্সিকো আর কানাডা ছোট অর্থনীতির দেশ হলেও এই শুল্কে ক্ষতি হবে যুক্তরাষ্ট্রের। চাপ পড়বে সাধারণ মার্কিনদের ওপর। এরপরও ট্রাম্প যেন কোনোকিছুই তোয়াক্কা করছেন না। পাশাপাশি ক্ষমতার পুরোটাই ব্যবহারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।