ঢাকা ০৮:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কে সারাবে ক্যান্সার হাসপাতালের রোগ!

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্যান্সার রোগী। তবে আস্থা রেখে ক্যান্সার চিকিৎসা করা যায়, এমন প্রতিষ্ঠান এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ক্যান্সার চিকিৎসায় একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণাও ধুঁকছে যন্ত্রপাতি আর লোকবল সংকটে। এখানকার সবকটি রেডিওথেরাপি মেশিনই নষ্ট, অকেজো এমআরআই যন্ত্র। ধার করে চলছে সিটি স্ক্যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসা সেবা দিতে চেষ্টা করছে তারা। কে সারাবে ক্যান্সার হাসপাতালের রোগ? কর্কট এই রোগের তুলনায় দেশে চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল।

ক্যান্সার, যেন অসময়ের অতিথি। নীরব এই ঘাতক হঠাৎ শরীরে এমন করে বাসা বাঁধে যেন প্রাণনাশ না করে ক্ষান্ত হবে না আর!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গড়ে ৪৫৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। আর গড়ে মারা যাচ্ছে ৩১৯ জন। বছরে দুই লাখের মধ্যে মারা যাচ্ছেন প্রায় দেড় লাখ।

বেশি আক্রান্ত হচ্ছে খাদ্যনালি, ফুসফুস, স্বরযন্ত্র, স্তন ও জরায়ুতে। পুরুষের ক্ষেত্রে খাদ্যনালি আর নারীর স্তন ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি। মৃত্যু বেশি খাদ্যনালির ক্যান্সারে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশের একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে সারা বছরই রোগীর চাপ। যেখানে থেরাপি বা সার্জারির জন্য মাসের পর মাস করতে হয় অপেক্ষা।

হাসপাতালে আসা একজন বলেন, ‘সরকার এই হাসপাতালগুলো করেছে মানুষের সেবার জন্য। কিন্তু মানুষ সেই সুযোগ-সুবিধা বা সেবা পাচ্ছে না। ১২টা বেজে গেলে বলে আজকে আর কেমো দেয়া হবে না। আমরা তো অনেক দূর থেকে আসি। দিয়ে দিলেই তো হয়।’

হাসপাতালের ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিনের চারটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর এবং দু’টি কোবাল্ট মেশিন। দু’টি লিনাক মেশিন দু’বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ। দু’টি কোবাল্ট মেশিনও অকেজো। বাকি দু’টি লিনাক মেশিনে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগীকে সেবা দেয়া হতো। একমাসের বেশি সময় ধরে সে দু’টিও নষ্ট। যন্ত্র দু’টির মেরামত চলছে ধীরগতিতে। কবে নাগাদ ঠিক হবে, তাও অনিশ্চিত।

হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই যন্ত্রটিও ১৬ বছর ধরেই অকেজো। বন্ধ সিটি স্ক্যান মেশিন দু’টিও। অন্য বিভাগ থেকে ধার করে প্রতিদিন সিটি স্ক্যান হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ জনের।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘রেডিওথেরাপির মেশিন দিয়ে কাজ চালাচ্ছি।’

শিগগিরই নতুন দু’টি রেডিওথেরাপি মেশিন চালুর সুখবর দিয়ে হাসপাতালের পরিচালক জানালেন, মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালটিকে ঢেলে সাজাচ্ছেন তিনি।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘আমরা নতুন দুইটি মেশিন আনছি। অলরেডি সে বিষয়ে কাজ চলছে। আশা করছি আমরা ফেব্রুয়ারিতে একটা আর মার্চে একটা চালু করতে বলবো। সার্জারি আমাদের চলছে। কেমোথেরাপিও চলছে। বেশিরভাগ ওষুধও সাপ্লাই আছে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনবল ও যন্ত্রপাতি বাড়লে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক ক্যান্সার রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘লোকবলকে সঠিকভাবে সুবিন্যস্ত করা। প্রশাসনিক জটিলতা সততার সাথে এড়িয়ে এটির সুসমাধান এবং এর বাজেট বৃদ্ধি করা।’

দেশের ক্যান্সার রোগীদের একটি বড় অংশের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সক্ষমতা নেই। তাদের একমাত্র ভরসা জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই হাসপাতাল যদি মানসম্মত সেবা দিতে সক্ষম না হয় তাহলে, এসব রোগীদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

কে সারাবে ক্যান্সার হাসপাতালের রোগ!

আপডেট সময় : ০১:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্যান্সার রোগী। তবে আস্থা রেখে ক্যান্সার চিকিৎসা করা যায়, এমন প্রতিষ্ঠান এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ক্যান্সার চিকিৎসায় একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণাও ধুঁকছে যন্ত্রপাতি আর লোকবল সংকটে। এখানকার সবকটি রেডিওথেরাপি মেশিনই নষ্ট, অকেজো এমআরআই যন্ত্র। ধার করে চলছে সিটি স্ক্যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসা সেবা দিতে চেষ্টা করছে তারা। কে সারাবে ক্যান্সার হাসপাতালের রোগ? কর্কট এই রোগের তুলনায় দেশে চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল।

ক্যান্সার, যেন অসময়ের অতিথি। নীরব এই ঘাতক হঠাৎ শরীরে এমন করে বাসা বাঁধে যেন প্রাণনাশ না করে ক্ষান্ত হবে না আর!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গড়ে ৪৫৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। আর গড়ে মারা যাচ্ছে ৩১৯ জন। বছরে দুই লাখের মধ্যে মারা যাচ্ছেন প্রায় দেড় লাখ।

বেশি আক্রান্ত হচ্ছে খাদ্যনালি, ফুসফুস, স্বরযন্ত্র, স্তন ও জরায়ুতে। পুরুষের ক্ষেত্রে খাদ্যনালি আর নারীর স্তন ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি। মৃত্যু বেশি খাদ্যনালির ক্যান্সারে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশের একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে সারা বছরই রোগীর চাপ। যেখানে থেরাপি বা সার্জারির জন্য মাসের পর মাস করতে হয় অপেক্ষা।

হাসপাতালে আসা একজন বলেন, ‘সরকার এই হাসপাতালগুলো করেছে মানুষের সেবার জন্য। কিন্তু মানুষ সেই সুযোগ-সুবিধা বা সেবা পাচ্ছে না। ১২টা বেজে গেলে বলে আজকে আর কেমো দেয়া হবে না। আমরা তো অনেক দূর থেকে আসি। দিয়ে দিলেই তো হয়।’

হাসপাতালের ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিনের চারটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর এবং দু’টি কোবাল্ট মেশিন। দু’টি লিনাক মেশিন দু’বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ। দু’টি কোবাল্ট মেশিনও অকেজো। বাকি দু’টি লিনাক মেশিনে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগীকে সেবা দেয়া হতো। একমাসের বেশি সময় ধরে সে দু’টিও নষ্ট। যন্ত্র দু’টির মেরামত চলছে ধীরগতিতে। কবে নাগাদ ঠিক হবে, তাও অনিশ্চিত।

হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই যন্ত্রটিও ১৬ বছর ধরেই অকেজো। বন্ধ সিটি স্ক্যান মেশিন দু’টিও। অন্য বিভাগ থেকে ধার করে প্রতিদিন সিটি স্ক্যান হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ জনের।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘রেডিওথেরাপির মেশিন দিয়ে কাজ চালাচ্ছি।’

শিগগিরই নতুন দু’টি রেডিওথেরাপি মেশিন চালুর সুখবর দিয়ে হাসপাতালের পরিচালক জানালেন, মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালটিকে ঢেলে সাজাচ্ছেন তিনি।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘আমরা নতুন দুইটি মেশিন আনছি। অলরেডি সে বিষয়ে কাজ চলছে। আশা করছি আমরা ফেব্রুয়ারিতে একটা আর মার্চে একটা চালু করতে বলবো। সার্জারি আমাদের চলছে। কেমোথেরাপিও চলছে। বেশিরভাগ ওষুধও সাপ্লাই আছে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনবল ও যন্ত্রপাতি বাড়লে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক ক্যান্সার রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘লোকবলকে সঠিকভাবে সুবিন্যস্ত করা। প্রশাসনিক জটিলতা সততার সাথে এড়িয়ে এটির সুসমাধান এবং এর বাজেট বৃদ্ধি করা।’

দেশের ক্যান্সার রোগীদের একটি বড় অংশের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সক্ষমতা নেই। তাদের একমাত্র ভরসা জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই হাসপাতাল যদি মানসম্মত সেবা দিতে সক্ষম না হয় তাহলে, এসব রোগীদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।