কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ট্রাম্পের শুল্কারোপের হুমকিতে ঐক্যবদ্ধ জোটটির নেতারা। জার্মান চ্যান্সেলরের দাবি, চাইলেই জবাব দেয়া সম্ভব। যদিও যৌথ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী বার্লিন। তবে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে পাল্টা জবাব ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
ট্যারিফ ম্যান খ্যাত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে টালমাটাল বিশ্ব বাণিজ্য। কানাডা ও মেক্সিকো ও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক এখন কার্যকরের অপেক্ষায়। এর মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশের ওপর শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এতে অর্থনীতিকে রক্ষায় নড়েচড়ে বসেছেন ইইউর নেতারা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) প্রতিরক্ষা নিয়ে আলোচনায় ব্রাসেলসে হাজির হন জোট সদস্যদের সরকার প্রধানরা। যদিও প্রতিরক্ষার চেয়েও বেশি আলোচনা হয় ট্রাম্পের শুল্কারোপের হুমকি নিয়ে। জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, চাইলেই জবাব দেয়া সম্ভব। যদিও যৌথ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী বার্লিন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের দাবি, ট্রাম্পের আগ্রাসী আচরণ ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ করছে। অযথা শুল্ক যুদ্ধ এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা পোলিশ প্রধানমন্ত্রীর।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, 'রাশিয়ার হুমকি ও চীনের আগ্রাসন আমাদের জন্য ভয়ংকর। এগুলোর মধ্যেই মিত্রদের সঙ্গে সংঘাতের শঙ্কা গাঢ় হচ্ছে। আমার মতে অযথা শুল্ক কিংবা বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।'
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, 'আমার মতে কৌশলগত এজেন্ডা ও সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়গুলা অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে যদি বাণিজ্যের ওপর আক্রমণ চলে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউরোপকে এর জবাব দিতে হবে।'
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ বলেন, 'দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ উভয়ই লাভবান হয়। তাই শুল্কারোপের কারণে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চাইলে আমরাও শুল্কারোপ করতে পারি। কিন্তু আমরা বাণিজ্য চু্ক্তির মাধ্যমে সমস্যা নিরসনে জোর দিচ্ছি।'
ইইউ'র বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পণ্যই নিজেদের অঞ্চলে ঢুকতে দেয় না আঞ্চলিক জোটটি। ৩০ হাজার কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতি সত্ত্বেও মার্কিনরা বিপুল অঙ্কের পণ্য নেয় ইইউ থেকে, বিনিময়ে পায় না কিছুই। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে এমন বিষেদাগার না করলেও ভবিষ্যতে দেশটির ওপর শুল্কারোপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুল্ক যুদ্ধের মাধ্যমে ট্রাম্প আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। এই যুদ্ধের আঁচ পোহাতে হতে পারে ব্রিটিশদেরও।
কেপিএমজি'র প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়েল সেলফিন বলেন, 'ইইউ যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ায় আমাদের দেশকেও এর প্রভাব ভোগ করতে হবে। কারণ আপনার যখন ইইউর মতো দুর্বল বাজার থাকবে, আপনি রপ্তানি করে লাভবান হতে পারবেন না।'
অ্যাস্টার্স কনসাল্টিংয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ সিলভেইন বার্সিঞ্জার বলেন, 'আমার মতে ট্রাম্প তার নিজের পায়ে গুলি করছেন। প্রথম মেয়াদে করা চুক্তি প্রত্যাহারের মাধ্যমে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন। এমন পদক্ষেপে শুধু ইইউ কিংবা যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুদ্ধ চললে সবশেষে কেউই বিজয়ের স্বাদ নিতে পারবে না।'
নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কায় দরপতনের শিকার হয়েছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এমনকি এশিয়ার পুঁজিবাজার।