ফিলিস্তিনি বসতিতেও অস্থিরতা ছড়াচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার

- আপডেট সময় : ০৫:২২:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে

অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে আরও প্রায় এক হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করছে ইসরাইল। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি দখলদারদের প্রবেশ বৃদ্ধির পাশাপাশি, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে নিকটবর্তী বেথেলহেম শহরের আধিপত্য বাড়াচ্ছে তেলআবিব। গাজায় ভঙ্গুর অস্ত্র বিরতির মধ্যে এভাবেই অন্যান্য ফিলিস্তিনি বসতিতেও অস্থিরতা ছড়াচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকা ও পূর্ব জেরুজালেমের সাথে পশ্চিম তীরও দখল করে নেয় ইসরাইল। গেল কয়েক দশকে ফিলিস্তিনিদের আরও কোণঠাসা করে এই তিন অঞ্চলেই ক্রমাগত অবৈধ বসতি বাড়িয়েই যাচ্ছে ইসরাইলিরা।
সোয়া এক বছরের একতরফা আগ্রাসনে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা গুঁড়িয়ে দেয়ার পর ভঙ্গুর অস্ত্র বিরতির মধ্যেই, পশ্চিম তীরে আরও হাজার খানেক বসতি নির্মাণের দরপত্র জারি করেছে ইসরাইল।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বিপাক্ষিক সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করা ইসরাইলি পর্যবেক্ষক সংস্থা পিস নাও জানিয়েছে, নতুন করে ৯৭৪টি আবাসন ইউনিট নির্মাণের ফলে ৪০ শতাংশ পরিসর বাড়বে ইফ্রাত বসতির। আর এর মধ্য দিয়ে পূণ্যভূমি বেথেলহেমের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও আটকে যাবে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির।
পাহাড়ের চূড়া থেকে শুরু করে শহর-গ্রাম পর্যন্ত গোটা পশ্চিম তীরে এ পর্যন্ত শতাধিক আবাসিক বসতি, শপিং মল, উদ্যানসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে ইসরাইল।
ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসতি নির্মাণে নজিরবিহীন সমর্থন দিয়েছিলেন ইসরাইলকে। পরে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় এসে খানিকটা সমালোচনা করলেও বসতি নির্মাণ ঠেকাতে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ফলে তখনও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি বসতি সম্প্রসারণের কাজ অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই গাজাসহ সব অঞ্চলে নতুন উদ্যমে ফিলিস্তিনিদের দমন পীড়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশান বলেন, ‘গাজা কিনে নিয়ে পুনর্গঠনের উদ্যোগ অঞ্চলটির জন্য সেরা হবে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় আসলে ২০ লাখ মানুষকে জাতিগতভাবে নিধন করতে চাওয়া হচ্ছে। গাজার ২০ লাখের বেশি অধিবাসীকে প্রতিবেশীসহ ভিন্ন ভিন্ন দেশে, এমনকি ইন্দোনেশিয়া ও আলবেনিয়ার মতো দূর দেশে পাঠিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। তাও আবার ফেরার অধিকার হরণ করে। যদিও, পরে তিনি সুর নরম করেছেন। বুঝতে পেরেছেন যে এই কেনা শব্দটির কোনো অর্থ দাঁড়ায় না। কারণ গাজার মালিক কে? কার কাছ থেকেই বা আপনি এটি কিনবেন?’
ইসরাইলি আগ্রাসনে মাটির সাথে মিশে গিয়েও মাথা নত করতে নারাজ গাজার বাসিন্দারা। লাখো স্বজনের শেষ আশ্রয় যে মাটিতে, কিছুতেই তা ছেড়ে যাবেন না ফিলিস্তিনিরা। এতকিছুর পরও গাজার অধিকার না পেয়েই যেন আরও মরিয়া ইসরাইল। দখলদারদের বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে নতুন করে পশ্চিম তীর আর বেথেলহেমের ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদেরও ক্ষেপিয়ে তুলতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার, এমনটাও মত অনেকের।
রামাল্লাহ পশ্চিম তীরের সাবেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক ঘাসান আল-খতিব বলেন, ‘গাজায় যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু, সে যুদ্ধ শেষ হলে তার পরের দিনটিতেই কী ঘটবে, তা নিয়ে ভীষণ এক রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন তিনি। গাজার ধুলোয় ডুবতে বসা নেতানিয়াহুকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।’
অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সামরিক শাসনের অধীনে বাস করছে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি। বসতি রয়েছে পাঁচ লাখের বেশি ইসরাইলি নাগরিকত্ব ধারী ইহুদি দখলদারেরও।
গাজার মতো এ অঞ্চলটিকেও ইহুদিদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র বলে মনে করে ইসরাইল সরকার, তাও আবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অধিকার প্রত্যাখ্যান করে। অভিযোগ রয়েছে, গাজায় আরোপিত যুদ্ধের আড়ালে আসলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসতি বাড়িয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।