এটিএম আজহারকে মুক্তি না দিলে রাজপথেই সমাধান: জামায়াত আমির

- আপডেট সময় : ০৭:৪২:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হলো, কিন্তু ফ্যাসিবাদের কঠিন সাক্ষী আজহারুল ইসলাম মুক্ত হলেন না কেন- অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এমন প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সমাবেশ-বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে পল্টন মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল। ফ্যাসিবাদের বিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে হিংস্র প্রথম থাবাটি এসেছিল জামায়াতে ইসলামীর উপরে। সব শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এক এক করে বন্দি করা হয়। সে সময় দলের গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের কাঁধে। তিনি তখন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, এক এক করে ১৩টি বছর অতিবাহিত হয়েছে। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তিনি এখনো আছেন। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হলো, আমাদের প্রশ্ন ফ্যাসিবাদের কঠিন সাক্ষী আজহারুল ইসলাম মুক্ত হলেন না কেন? কোন জিনিসটা তাকে এখনো আটকে রাখতে বাধ্য করেছে? কেন এই বৈষম্য?
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা তো নিজ থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম। এই উদারতা আমরা দেখিয়েছিলাম। ভবিষ্যতেও এই উদারতা আমরা দেখিয়ে যাব। কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলাম কবে মুক্তি পাবেন, সেটি আমরা জানতে চাই সরকারের কাছে।
তিনি বলেন, আমরা তো চাইনি, কল্পনাও করিনি, এভাবে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সমাবেশ-বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামের জীবন থেকে এক এক করে ১৩টি বছর হারিয়ে গেছে। এই ১৩টি বছর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আর ১৩ মিনিটও তিনি জেলের ভেতর থাকুক আমরা তা আর চাই না।
হুঁশিয়ারি দিয়ে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা ভদ্র, কিন্তু আমরা বোকা নই। আমাদের ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন। ভদ্ররা যখন শক্ত হয় তখন কি পরিমাণ শক্ত হতে হয় তা গত সাড়ে ১৫টা বছর বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। আমি অন্যদের কথা বলবো না কে কি করেছেন, কার সাথে আপস করেছেন, আমি বলতে চাই না। মহান আল্লাহর দেয়া শক্তির কারণে গত সাড়ে ১৫টি বছর জামায়াতে ইসলামী কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে আপস করেনি।
দলীয় নিবন্ধনের ব্যাপারে সরকারকে হুঁশিয়ার দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, কেন আমাদের নিবন্ধন আটকে রেখেছেন? আমাদের নিবন্ধন তো জালিম সরকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই জুলুম কি আপনারাও আমাদের ওপরে করবেন? এজন্যই কি হাজার-হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে? হাজার-হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে? বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো বৈষম্য বরদাস্ত করব না। সব বৈষম্যের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর জীবন দিতে যেমন ভয় করেন নাই, গুলির সামনে বুক পেতে দিতেও ভয় করেন নাই, সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনের শরিক হতেও ভয় করেন নাই, একটি মানবিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ না গড়া পর্যন্ত আপনারা কি এ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন? তখন সর্বস্বরে উপস্থিত নেতাকর্মীরা ”হ্যা” যুক্ত স্লোগান দেন।
তখন জামায়াত আমির স্লোগান ধরে বলেন, আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ আবু সাঈদ মুগ্ধ। এই যুদ্ধ চলবে ইনশাল্লাহ। মেহেরবানি করে আমাদেরকে আর কেউ চোখ রাঙ্গাবেন না। ফ্যাসিবাদের ভাষায় কেউ কথা বলবেন না। কথা বলবেন রাজনীতিবিদের ভাষায়। আমরা অভিনন্দন জানাব। কিন্তু মেহেরবানি করে চোখ রাঙাবেন না। এই সংগঠন কারো চোখ রাঙ্গানি পরোয়া করে না।