কিয়েভকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের চুক্তি মানবেন না দেশটির প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনসহ পুরো ইউরোপকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার আলোচনায় বিস্মিত ইউরোপীয় নেতারা সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এ নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন প্যারিসে। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না এলেও ইউক্রেনে যুক্তরাজ্যের সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অন্যান্য দেশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঐক্যের বার্তা দেয়াই ছিল প্যারিস বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। যে ধাক্কায় হুমকির মুখে কয়েক দশকের মিত্রতা।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে অনুষ্ঠেয় আলোচনায় ইউরোপ, এমনকি ইউক্রেনকেও বাদ দিয়ে চমকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিক্রিয়ায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি বৈঠকে বসেন ইউরোপীয় নেতারা। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সোমবার আলোচনার জন্য যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো নেতাদের এলিজি প্যালেসে স্বাগত জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তার একটি সম্ভাব্য উপাদান ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানো। ইউরোপের প্রথম নেতা হিসেবে সোমবারই ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠাতে প্রস্তুত বলে জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশের।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, 'শুধু ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে নয়। সামগ্রিকভাবে এটা পুরো ইউরোপেরই অস্তিত্বের প্রশ্ন এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তাতেও এর ভূমিকা আছে। ইউরোপকে নিজের কাজ করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী শান্তিচুক্তি হলে বাকিদের সাথে আমিও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে মাঠে পাঠাতে প্রস্তুত আছি।'
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ‘এ পর্যন্ত যেভাবে ইউক্রেনকে সহযোগিতা করে এসেছে পোল্যান্ড, সাংগঠনিকভাবে, আমাদের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী তা অব্যাহত থাকবে। মানবিক ও সামরিক সহায়তার প্রশ্নে বলবো, ইউক্রেনে আমরা পোলিশ সেনা পাঠাবো না।’
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোস ম্যানুয়েল অ্যালবারে বলেন, ‘ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর আলোচনা অনেক দূরের বিষয়। এই মুহূর্তে শান্তি নেই এবং যতো দ্রুত সম্ভব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা শুরু করা উচিত। ইউরোপ সবসময়ই শান্তি চেয়েছে। শুধু ইউরোপ কিংবা ইউক্রেনের ওপর শান্তি নির্ভর করলে এ যুদ্ধ কখনো শুরুই হতো না।’
জার্মানি চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেন, ‘নিরাপত্তা আর দায়িত্বের প্রশ্নে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিংবা আলাদাভাবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে কিনা, সেটিই ছিল বৈঠকের আলোচ্য বিষয়। এতে, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না এলেও প্যারিস বৈঠকের মাধ্যমে মূলত নিজেদের ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা, মত বিশ্লেষকদের।
ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এক্সিটারের অধ্যাপক ড. ডেভিড ব্ল্যাগডেন বলেন, ‘এই বৈঠকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফল হলো এই যে বৈঠকটি হচ্ছে। প্রধান ইউরোপীয় শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যসহ, ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেটাই দৃশ্যমান হলো। অর্থাৎ স্রেফ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো নয় বরং ন্যাটোভুক্ত প্রধান ইউরোপীয় শক্তির একতা এটি। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে আসলে এই বার্তাই পৌঁছে দেয়া হলো।’
এদিকে, রাশিয়ায় বন্দি ইউক্রেনীয় সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে মধ্যস্থতা ও আলোচনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফর করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আবুধাবিতে আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সাথে সাক্ষাতে জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার আলোচনায় ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের চুক্তি মেনে নেবে না কিয়েভ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘রিয়াদ আলোচনায় ইউক্রেন অংশ নেবে না। ইউক্রেন এ বিষয়ে কিছু জানেই না। ইউক্রেনকে ছাড়া ইউক্রেনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হলে তাতে কোনো লাভ হবে বলে মনে করেনা ইউক্রেন। আমাদের বাদ দিয়ে কোনো সমঝোতা হলে তা মেনে নেয়াও ইউক্রেনের পক্ষে সম্ভব নয় এবং এ ধরনের কোনো চুক্তি আমরা মানবো না।’