ঢাকা ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদের চুক্তিতে রাজি ইউক্রেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:০১:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৫২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চীনা নির্ভরতা কমাতে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে নজর দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাইন ইন্ডাস্ট্রি চীন-রাশিয়ার তুলনায় বিস্তৃত না হওয়ায় ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ালে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। এছাড়া চলমান সংঘাত বন্ধে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হওয়ায়, ‘রেয়ার আর্থ মিনারেল’ চুক্তির এটাই উপযুক্ত সময় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলমান সংঘাত বন্ধের আলোচনায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে রীতিমতো উঠে পড়ে লেগেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। তাই জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফরের আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বার্তা- শিগগিরই বড় ধরনের চুক্তি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, ওয়াশিংটনের সাথে ‘রেয়ার আর্থ মিনারেল’ বা খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্মত হয়েছে কিয়েভ।

গেল সপ্তাহে জেলেনস্কিকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। চাপিয়েছেন যুদ্ধ শুরুর দায়ও। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করেই জেলেনস্কি যেভাবে খনিজ চুক্তি নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাতে এটি স্পষ্ট, ইউরোপ নয় বরং ওয়াশিংটনের কাছেই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায় কিয়েভ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই খনিজ চুক্তির মধ্য দিয়েই ট্রাম্পের আস্থাভাজন হতে চাইছেন জেলনস্কি। আর ইউক্রেন থেকে খনিজ উপাদানের সহায়তা নিয়ে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, দুর্লভ খনিজ উত্তোলনে যুক্তরাষ্ট্র চীন বা রাশিয়ার মতো পারদর্শী না হওয়ায় এই চুক্তি ওয়াশিংটনের জন্যেও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞানী ও খনিজ বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যাকোব কুলিক বলেন, ‘ট্রাম্প দুর্লভ খনিজ চুক্তি নিয়ে এতটা তৎপর হয়েছেন কারণ সংশ্লিষ্ট খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চীনা প্রতিষ্ঠান নির্ভর। যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দ্বিতীয় কারণ, খনিজ উপাদান উত্তোলনে সক্ষম এমন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও হাতেগোনা।’

উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন চুম্বক, বৈদ্যুতিক মোটর, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, ইলেকট্রনিক গেজেট এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে রেয়ার আর্থ মিনারেলের বিকল্প নেই। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের দাবি, রাশিয়ার কাছ থেকে এসব দুর্লভ খনিজ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে উত্তর কোরিয়া ও ইরান। এমনটা কার্যকর হলে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি এভিয়েশন ও মহাকাশযান নির্মাণ শিল্পে প্রয়োজনীয় টাইটেনিয়াম ও পরমাণু সক্ষমতার জন্য অপরিহার্য ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে বড় মজুদ আছে ইউক্রেনে। যা ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিশ্লেষকদের দাবি, জেলেনস্কির ভাষ্যমতে প্রতিরোধ অক্ষ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি খনিজ উত্তোলনেও ইউক্রেনেরও ওপর নির্ভর করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কারণ, ইউক্রেনে উত্তোলনযোগ্য রেয়ার আর্থের অধিকাংশই চীনের নিয়ন্ত্রণে।

দ্য ইন্সটিটিউট ফর হিউম্যান সাইন্সেসের ভূগোলবিদ জুলি মিশেল ক্লিঙ্গার বলেন, ‘পর্যায় সারণিতে ১৭টি বিরল খনিজ উপাদান পাশাপাশি অবস্থান করে। এর অর্থ ভূগর্ভে বা পৃষ্টে সঞ্চিত এই উপাদান উৎপত্তিস্থল থেকে আলাদা করা ভীষণই কঠিন। এছাড়া রয়েছে দূষণের ঝুঁকিও। খনিজ পরিশোধনের সাথে পরিবেশ দূষণের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে সত্য এবং অসংখ্য উদাহরণও আছে।’

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই নিজ দেশেই জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলনে জোর দিয়েছেন ট্রাম্প। গ্রিনল্যান্ড দখলের যে হুঁশিয়ারি দেন সেখানেও আছে রেয়ার আর্থ মিনারেলের যথেষ্ট মজুত।

ফলে ইউক্রেনের সাথে খনিজ চুক্তির পর দেশটিতে পাঠানো সামরিক সহায়তার ক্ষতিপূরণ তুলবেন ট্রাম্প, গণমাধ্যমগুলো এই খবর নিয়ে মাতামাতি করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খনিজ উপাদানের বাজার ধরার মাধ্যমে মূলত চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধে এগিয়ে থাকতে চান নয়া প্রেসিডেন্ট।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদের চুক্তিতে রাজি ইউক্রেন

আপডেট সময় : ০২:০১:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চীনা নির্ভরতা কমাতে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে নজর দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাইন ইন্ডাস্ট্রি চীন-রাশিয়ার তুলনায় বিস্তৃত না হওয়ায় ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ালে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। এছাড়া চলমান সংঘাত বন্ধে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হওয়ায়, ‘রেয়ার আর্থ মিনারেল’ চুক্তির এটাই উপযুক্ত সময় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলমান সংঘাত বন্ধের আলোচনায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে রীতিমতো উঠে পড়ে লেগেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। তাই জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফরের আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বার্তা- শিগগিরই বড় ধরনের চুক্তি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, ওয়াশিংটনের সাথে ‘রেয়ার আর্থ মিনারেল’ বা খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্মত হয়েছে কিয়েভ।

গেল সপ্তাহে জেলেনস্কিকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। চাপিয়েছেন যুদ্ধ শুরুর দায়ও। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করেই জেলেনস্কি যেভাবে খনিজ চুক্তি নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাতে এটি স্পষ্ট, ইউরোপ নয় বরং ওয়াশিংটনের কাছেই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায় কিয়েভ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই খনিজ চুক্তির মধ্য দিয়েই ট্রাম্পের আস্থাভাজন হতে চাইছেন জেলনস্কি। আর ইউক্রেন থেকে খনিজ উপাদানের সহায়তা নিয়ে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, দুর্লভ খনিজ উত্তোলনে যুক্তরাষ্ট্র চীন বা রাশিয়ার মতো পারদর্শী না হওয়ায় এই চুক্তি ওয়াশিংটনের জন্যেও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞানী ও খনিজ বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যাকোব কুলিক বলেন, ‘ট্রাম্প দুর্লভ খনিজ চুক্তি নিয়ে এতটা তৎপর হয়েছেন কারণ সংশ্লিষ্ট খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চীনা প্রতিষ্ঠান নির্ভর। যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দ্বিতীয় কারণ, খনিজ উপাদান উত্তোলনে সক্ষম এমন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও হাতেগোনা।’

উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন চুম্বক, বৈদ্যুতিক মোটর, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, ইলেকট্রনিক গেজেট এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে রেয়ার আর্থ মিনারেলের বিকল্প নেই। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের দাবি, রাশিয়ার কাছ থেকে এসব দুর্লভ খনিজ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে উত্তর কোরিয়া ও ইরান। এমনটা কার্যকর হলে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি এভিয়েশন ও মহাকাশযান নির্মাণ শিল্পে প্রয়োজনীয় টাইটেনিয়াম ও পরমাণু সক্ষমতার জন্য অপরিহার্য ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে বড় মজুদ আছে ইউক্রেনে। যা ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিশ্লেষকদের দাবি, জেলেনস্কির ভাষ্যমতে প্রতিরোধ অক্ষ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি খনিজ উত্তোলনেও ইউক্রেনেরও ওপর নির্ভর করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কারণ, ইউক্রেনে উত্তোলনযোগ্য রেয়ার আর্থের অধিকাংশই চীনের নিয়ন্ত্রণে।

দ্য ইন্সটিটিউট ফর হিউম্যান সাইন্সেসের ভূগোলবিদ জুলি মিশেল ক্লিঙ্গার বলেন, ‘পর্যায় সারণিতে ১৭টি বিরল খনিজ উপাদান পাশাপাশি অবস্থান করে। এর অর্থ ভূগর্ভে বা পৃষ্টে সঞ্চিত এই উপাদান উৎপত্তিস্থল থেকে আলাদা করা ভীষণই কঠিন। এছাড়া রয়েছে দূষণের ঝুঁকিও। খনিজ পরিশোধনের সাথে পরিবেশ দূষণের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে সত্য এবং অসংখ্য উদাহরণও আছে।’

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই নিজ দেশেই জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলনে জোর দিয়েছেন ট্রাম্প। গ্রিনল্যান্ড দখলের যে হুঁশিয়ারি দেন সেখানেও আছে রেয়ার আর্থ মিনারেলের যথেষ্ট মজুত।

ফলে ইউক্রেনের সাথে খনিজ চুক্তির পর দেশটিতে পাঠানো সামরিক সহায়তার ক্ষতিপূরণ তুলবেন ট্রাম্প, গণমাধ্যমগুলো এই খবর নিয়ে মাতামাতি করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খনিজ উপাদানের বাজার ধরার মাধ্যমে মূলত চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধে এগিয়ে থাকতে চান নয়া প্রেসিডেন্ট।