ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে তীব্র বাকযুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:৫১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তীব্র বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন যে, তাঁর “হাতে কোন তাস নেই” এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে যে সহায়তা দিয়েছে তার জন্য তিনি “কৃতজ্ঞ নন”।

এই দুই নেতার মধ্যে বিস্ফোরক সংবাদ সম্মেলনে বিনিময় হয়, যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং উল্লেখ করেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও তার দেশের বিরুদ্ধে তার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছিলেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও জেলেনস্কির মন্তব্যের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে এসে আপনার দেশের ধ্বংস রোধ করার চেষ্টা করছে এমন প্রশাসনকে আক্রমণ করা অসম্মানজনক।”ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং হত্যাকাণ্ড রোধ করার জন্য চুক্তির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং জেলেনস্কিকে বলেন, “আমাদের সামরিক সরঞ্জাম না থাকলে এই যুদ্ধ দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যেত।”তিনি (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি) হয়তো ওবামা এবং বুশের সঙ্গে চুক্তি ভেঙেছেন এবং তিনি হয়তো বাইডেনের সঙ্গে হওয়া চুক্তি ভেঙেছেন…কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে ভাঙেননি। তিনি একটি চুক্তি করতে চান। আমি জানি না আপনি একটি চুক্তি করতে পারবেন কিনা। সমস্যা হলো আমি আপনাকে একজন কঠোর ব্যক্তি হিসেবে ক্ষমতায়ন করেছি, এবং আমি মনে করি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আপনি একজন কঠোর ব্যক্তি হতেন…আপনি হয় একটি চুক্তি করবেন নাহয় আমরা বের হয়ে যাব এবং যদি আমরা বের হয়ে যাই, তাহলে আপনি লড়াই করবেন। আমি মনে করি না এটা সুন্দর হবে…কিন্তু আপনার হাতে তাস নেই।

কিন্তু একবার আমরা সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে, আপনি অনেক ভালো অবস্থানে থাকবেন। কিন্তু আপনি মোটেও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আচরণ করছেন না এবং এটা ভালো কথা নয়,” ট্রাম্প বলেন।”আপনাকে (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি) কৃতজ্ঞ হতে হবে। আপনার হাতে তাস নেই। আপনি সেখানে সমাহিত। মানুষ মারা যাচ্ছে। আপনার সৈন্য সংখ্যা কমে যাচ্ছে…তারপর আপনি আমাদের বলছেন। আমি যুদ্ধবিরতি চাই না…যদি আপনি এখনই যুদ্ধবিরতি করতে পারেন, আমি আপনাকে বলব এটা নিয়ে নিন যাতে গুলি বন্ধ হয় এবং আপনার লোকজন মারা যাওয়া বন্ধ হয়…আমি আপনাকে জ্যাভেলিন দিয়েছিলাম সব ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার জন্য।

ওবামা আপনাকে চাদর দিয়েছিলেন…আপনাকে আরও কৃতজ্ঞ হতে হবে কারণ, আমি আপনাকে বলছি, আপনার হাতে তাস নেই। আমাদের সঙ্গে, আপনার হাতে তাস আছে, কিন্তু আমাদের ছাড়া, আপনার কোন তাস নেই,” ট্রাম্প আরও বলেন।ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কি কী অনুভব করেন তা নির্দেশ করার মতো অবস্থানে নেই এবং বলেন যে ইউক্রেনের নেতা “কোটি কোটি মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন”।”আমাদের বলবেন না আমরা কী অনুভব করব।

আমরা একটি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমাদের বলবেন না আমরা কী অনুভব করব…আপনি কী অনুভব করব তা নির্দেশ করার মতো অবস্থানে নেই…আমরা খুব ভালো এবং খুব শক্তিশালী অনুভব করব…আপনি নিজেকে খুব খারাপ অবস্থানে রেখেছেন…আপনার হাতে এখন তাস নেই…আপনি কোটি কোটি মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন। আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন এবং আপনি যা করছেন তা দেশের প্রতি খুবই অসম্মানজনক,” ট্রাম্প বলেন।”আপনি অনেক কথা বলেছেন।

আপনার দেশ বড় সমস্যায় পড়েছে…আপনি এটা জিতছেন না। আমাদের জন্য আপনার ঠিকঠাক বেরিয়ে আসার ভালো সুযোগ আছে…আমরা আপনাকে, এই বোকা প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে, ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছি। আমরা আপনাকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছি, এবং আপনার লোকেরা সাহসী, কিন্তু তাদের আমাদের সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়েছে…আমাদের সামরিক সরঞ্জাম না থাকলে, এই যুদ্ধ দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যেত,” তিনি আরও বলেন।জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন “ইউক্রেনের আমাদের বড় অংশ দখল করেছেন”। “২০১৪ সালে, কেউ তাকে (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) থামায়নি। তিনি শুধু দখল করে নিয়েছেন। তিনি মানুষ হত্যা করেছেন।

২০১৯ সালে, আমি তার সাথে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলাম। তিনি যুদ্ধবিরতি ভেঙেছেন, আমাদের লোকজনকে হত্যা করেছেন এবং বন্দীদের বিনিময় করেননি। আপনি কী ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন?”তাকে উত্তর দিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স বলেন, তারা যে ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন তা আমাদের দেশের ধ্বংসের অবসান ঘটাবে।”এখন, আপনারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং সৈন্যদের সামনের সারিতে জোর করে পাঠাচ্ছেন কারণ আপনার জনবলের সমস্যা আছে।

আপনার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত…আমি আসলে গল্পগুলি দেখেছি এবং শুনেছি এবং আমি জানি কী ঘটে, আপনি লোকদের নিয়ে আসেন, আপনি তাদের একটি প্রচারিত সফরে নিয়ে আসেন, মিঃ প্রেসিডেন্ট…মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে এসে আপনার দেশের ধ্বংস রোধ করার চেষ্টা করছে এমন প্রশাসনকে আক্রমণ করা অসম্মানজনক,” তিনি বলেন।ট্রাম্প বলেন, তিনি পুতিনের সাথে মিত্র নন, তবে একটি শান্তি চুক্তি চান।”যদি আমি তাদের উভয়ের সাথে মিত্র না হতাম, তাহলে আপনার কখনই কোন চুক্তি হত না…আমি পুতিনের সাথে মিত্র নই। আমি কারও সঙ্গে মিত্র নই, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এবং বিশ্বের মঙ্গলের জন্য মিত্র…তার (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি) পুতিনের প্রতি যে ঘৃণা আছে তা আমার পক্ষে সেই ধরনের ঘৃণা নিয়ে চুক্তি করা খুব কঠিন…যদি আপনি চান আমি কঠোর হই, আমি যে কোন মানুষের চেয়ে কঠোর হতে পারি,” তিনি বলেন।

এই ঘটনা অথবা দুর্ঘটনার পর ইউরোপের দেশগুলো অবশ্য একাট্টা হয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষ শান্তি চান। শান্তি কত জরুরি, তা ওঁদের চেয়ে বেশি কেউ জানেন না। সেই কারণেই আমরা সকলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির দাবি করে আসছি। জার্মানি এবং ইউরোপের উপর ভরসা রাখতে পারে ইউক্রেন।’

ফান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ‘আমরা তিন বছর আগেও ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এবং রাশিয়ার ওপর বিধিনিষেধ চাপাতে সম্মত হয়েছিলাম। এখনও তা-ই করতে চাই। আমরা বলতে আমি আমেরিকা, সমগ্র ইউরোপ, জাপান, কানাডা— সকলের কথাই বলছি।’

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, ‘ইউক্রেনের পেটে তো ঘুষি মারা হলো। বন্ধুদের মধ্যে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে হবে। কিন্তু সেটা এভাবে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে হলে একজনই জিতে যান। আর তিনি ক্রেমলিনে বসে আছেন।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডার লেইন বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষের সাহসকে সম্মান জানাই। কঠোর হোন, সাহসী হোন, ভয় পাবেন না। প্রেসিডেন্ট, আপনি একা নন। আমরা শান্তির জন্য আপনার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।’

এ ছাড়া মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া স্যান্ডু, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেস, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাক্স, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পিটার প্যাভেলও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

এসব মিষ্টি মিষ্টি কথায় অবশ্য চিড়ে ভিজবে না। ইউক্রেনকে লড়াইটা শেষ পর্যন্ত লড়তে হবে অস্ত্র দিয়েই। আর সেই অস্ত্রের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র তথা ট্রাম্প যদি আর অস্ত্রের জোগান না দেন, তাহলে জেলেনস্কিকে এ যুদ্ধে অবশ্যই পরাজয় মেনে নিতে হবে।

যদিও ইউক্রেনবাসীর কাছে জেলেনস্কি এখন ‘নায়কের মর্যাদা’ পাচ্ছেন, প্রচুর ‘বাহবা’ পাচ্ছেন, যেমন গতকাল একজন ইউক্রেনীয় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘মর্যাদা একটি অত্যন্ত মূল্যবান বিষয়, রাশিয়া এত নৃশংসতা চালিয়েও আমাদের মর্যাদা ভাঙতে পারেনি, আমেরিকা কী করে আশা করে সেটি পারবে?’ তারপরও বলা যায়, শুধু আত্মমর্যাদার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে একটি সশস্ত্র যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চালানো যায় না।

জেলেনস্কি কি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারছেন? তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স, এনবিসি নিউজ ও ফক্স নিউজ

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে তীব্র বাকযুদ্ধ

আপডেট সময় : ০২:৫১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তীব্র বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন যে, তাঁর “হাতে কোন তাস নেই” এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে যে সহায়তা দিয়েছে তার জন্য তিনি “কৃতজ্ঞ নন”।

এই দুই নেতার মধ্যে বিস্ফোরক সংবাদ সম্মেলনে বিনিময় হয়, যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং উল্লেখ করেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও তার দেশের বিরুদ্ধে তার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছিলেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও জেলেনস্কির মন্তব্যের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে এসে আপনার দেশের ধ্বংস রোধ করার চেষ্টা করছে এমন প্রশাসনকে আক্রমণ করা অসম্মানজনক।”ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং হত্যাকাণ্ড রোধ করার জন্য চুক্তির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং জেলেনস্কিকে বলেন, “আমাদের সামরিক সরঞ্জাম না থাকলে এই যুদ্ধ দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যেত।”তিনি (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি) হয়তো ওবামা এবং বুশের সঙ্গে চুক্তি ভেঙেছেন এবং তিনি হয়তো বাইডেনের সঙ্গে হওয়া চুক্তি ভেঙেছেন…কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে ভাঙেননি। তিনি একটি চুক্তি করতে চান। আমি জানি না আপনি একটি চুক্তি করতে পারবেন কিনা। সমস্যা হলো আমি আপনাকে একজন কঠোর ব্যক্তি হিসেবে ক্ষমতায়ন করেছি, এবং আমি মনে করি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আপনি একজন কঠোর ব্যক্তি হতেন…আপনি হয় একটি চুক্তি করবেন নাহয় আমরা বের হয়ে যাব এবং যদি আমরা বের হয়ে যাই, তাহলে আপনি লড়াই করবেন। আমি মনে করি না এটা সুন্দর হবে…কিন্তু আপনার হাতে তাস নেই।

কিন্তু একবার আমরা সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে, আপনি অনেক ভালো অবস্থানে থাকবেন। কিন্তু আপনি মোটেও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আচরণ করছেন না এবং এটা ভালো কথা নয়,” ট্রাম্প বলেন।”আপনাকে (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি) কৃতজ্ঞ হতে হবে। আপনার হাতে তাস নেই। আপনি সেখানে সমাহিত। মানুষ মারা যাচ্ছে। আপনার সৈন্য সংখ্যা কমে যাচ্ছে…তারপর আপনি আমাদের বলছেন। আমি যুদ্ধবিরতি চাই না…যদি আপনি এখনই যুদ্ধবিরতি করতে পারেন, আমি আপনাকে বলব এটা নিয়ে নিন যাতে গুলি বন্ধ হয় এবং আপনার লোকজন মারা যাওয়া বন্ধ হয়…আমি আপনাকে জ্যাভেলিন দিয়েছিলাম সব ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার জন্য।

ওবামা আপনাকে চাদর দিয়েছিলেন…আপনাকে আরও কৃতজ্ঞ হতে হবে কারণ, আমি আপনাকে বলছি, আপনার হাতে তাস নেই। আমাদের সঙ্গে, আপনার হাতে তাস আছে, কিন্তু আমাদের ছাড়া, আপনার কোন তাস নেই,” ট্রাম্প আরও বলেন।ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কি কী অনুভব করেন তা নির্দেশ করার মতো অবস্থানে নেই এবং বলেন যে ইউক্রেনের নেতা “কোটি কোটি মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন”।”আমাদের বলবেন না আমরা কী অনুভব করব।

আমরা একটি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমাদের বলবেন না আমরা কী অনুভব করব…আপনি কী অনুভব করব তা নির্দেশ করার মতো অবস্থানে নেই…আমরা খুব ভালো এবং খুব শক্তিশালী অনুভব করব…আপনি নিজেকে খুব খারাপ অবস্থানে রেখেছেন…আপনার হাতে এখন তাস নেই…আপনি কোটি কোটি মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন। আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন এবং আপনি যা করছেন তা দেশের প্রতি খুবই অসম্মানজনক,” ট্রাম্প বলেন।”আপনি অনেক কথা বলেছেন।

আপনার দেশ বড় সমস্যায় পড়েছে…আপনি এটা জিতছেন না। আমাদের জন্য আপনার ঠিকঠাক বেরিয়ে আসার ভালো সুযোগ আছে…আমরা আপনাকে, এই বোকা প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে, ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছি। আমরা আপনাকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছি, এবং আপনার লোকেরা সাহসী, কিন্তু তাদের আমাদের সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়েছে…আমাদের সামরিক সরঞ্জাম না থাকলে, এই যুদ্ধ দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যেত,” তিনি আরও বলেন।জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন “ইউক্রেনের আমাদের বড় অংশ দখল করেছেন”। “২০১৪ সালে, কেউ তাকে (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) থামায়নি। তিনি শুধু দখল করে নিয়েছেন। তিনি মানুষ হত্যা করেছেন।

২০১৯ সালে, আমি তার সাথে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলাম। তিনি যুদ্ধবিরতি ভেঙেছেন, আমাদের লোকজনকে হত্যা করেছেন এবং বন্দীদের বিনিময় করেননি। আপনি কী ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন?”তাকে উত্তর দিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স বলেন, তারা যে ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন তা আমাদের দেশের ধ্বংসের অবসান ঘটাবে।”এখন, আপনারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং সৈন্যদের সামনের সারিতে জোর করে পাঠাচ্ছেন কারণ আপনার জনবলের সমস্যা আছে।

আপনার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত…আমি আসলে গল্পগুলি দেখেছি এবং শুনেছি এবং আমি জানি কী ঘটে, আপনি লোকদের নিয়ে আসেন, আপনি তাদের একটি প্রচারিত সফরে নিয়ে আসেন, মিঃ প্রেসিডেন্ট…মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে এসে আপনার দেশের ধ্বংস রোধ করার চেষ্টা করছে এমন প্রশাসনকে আক্রমণ করা অসম্মানজনক,” তিনি বলেন।ট্রাম্প বলেন, তিনি পুতিনের সাথে মিত্র নন, তবে একটি শান্তি চুক্তি চান।”যদি আমি তাদের উভয়ের সাথে মিত্র না হতাম, তাহলে আপনার কখনই কোন চুক্তি হত না…আমি পুতিনের সাথে মিত্র নই। আমি কারও সঙ্গে মিত্র নই, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এবং বিশ্বের মঙ্গলের জন্য মিত্র…তার (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি) পুতিনের প্রতি যে ঘৃণা আছে তা আমার পক্ষে সেই ধরনের ঘৃণা নিয়ে চুক্তি করা খুব কঠিন…যদি আপনি চান আমি কঠোর হই, আমি যে কোন মানুষের চেয়ে কঠোর হতে পারি,” তিনি বলেন।

এই ঘটনা অথবা দুর্ঘটনার পর ইউরোপের দেশগুলো অবশ্য একাট্টা হয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষ শান্তি চান। শান্তি কত জরুরি, তা ওঁদের চেয়ে বেশি কেউ জানেন না। সেই কারণেই আমরা সকলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির দাবি করে আসছি। জার্মানি এবং ইউরোপের উপর ভরসা রাখতে পারে ইউক্রেন।’

ফান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ‘আমরা তিন বছর আগেও ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এবং রাশিয়ার ওপর বিধিনিষেধ চাপাতে সম্মত হয়েছিলাম। এখনও তা-ই করতে চাই। আমরা বলতে আমি আমেরিকা, সমগ্র ইউরোপ, জাপান, কানাডা— সকলের কথাই বলছি।’

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, ‘ইউক্রেনের পেটে তো ঘুষি মারা হলো। বন্ধুদের মধ্যে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে হবে। কিন্তু সেটা এভাবে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে হলে একজনই জিতে যান। আর তিনি ক্রেমলিনে বসে আছেন।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডার লেইন বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষের সাহসকে সম্মান জানাই। কঠোর হোন, সাহসী হোন, ভয় পাবেন না। প্রেসিডেন্ট, আপনি একা নন। আমরা শান্তির জন্য আপনার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।’

এ ছাড়া মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া স্যান্ডু, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেস, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাক্স, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পিটার প্যাভেলও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

এসব মিষ্টি মিষ্টি কথায় অবশ্য চিড়ে ভিজবে না। ইউক্রেনকে লড়াইটা শেষ পর্যন্ত লড়তে হবে অস্ত্র দিয়েই। আর সেই অস্ত্রের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র তথা ট্রাম্প যদি আর অস্ত্রের জোগান না দেন, তাহলে জেলেনস্কিকে এ যুদ্ধে অবশ্যই পরাজয় মেনে নিতে হবে।

যদিও ইউক্রেনবাসীর কাছে জেলেনস্কি এখন ‘নায়কের মর্যাদা’ পাচ্ছেন, প্রচুর ‘বাহবা’ পাচ্ছেন, যেমন গতকাল একজন ইউক্রেনীয় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘মর্যাদা একটি অত্যন্ত মূল্যবান বিষয়, রাশিয়া এত নৃশংসতা চালিয়েও আমাদের মর্যাদা ভাঙতে পারেনি, আমেরিকা কী করে আশা করে সেটি পারবে?’ তারপরও বলা যায়, শুধু আত্মমর্যাদার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে একটি সশস্ত্র যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চালানো যায় না।

জেলেনস্কি কি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারছেন? তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স, এনবিসি নিউজ ও ফক্স নিউজ