ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে ৩টি পরিকল্পনা জ্বালানি বিভাগের। প্রাথমিকভাবে সিএনজি ও এলএনজি করে ঢাকায় আসবে গ্যাস, এর পর পাইপলাইনে পাঠানো হবে দক্ষিণাঞ্চলে। তবে, এলএনজি সাশ্রয়ী বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুই হাজার সালের আগে ভোলায় একাধিক গ্যাস ক্ষেত্র মিললেও নেয়া হয়নি জাতীয় গ্রিডে। এরইমধ্যে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, বিপরীতে উৎপাদন ও আমদানির পরেও ঘাটতি বেড়ে প্রায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ অবস্থায় বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচনার শীর্ষে ভোলার গ্যাস।
পাইপলাইন নির্মাণে বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করেন আওয়ামী সরকার। তবে একচেটিয়া ভোলার গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকায় নিতে তৎকালীন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছ থেকে বিশেষ আইন ২০১০ এর অধীনে বিনা দরপত্রে কাজ বাগিয়ে নেয় ইনট্রাকো সিএনজি। ৫ আগস্টের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও তার আগে ৭ মাসে সাড়ে ৪৭ টাকা দরে প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে ইনট্রাকো।
বাপেক্স বলছে, শাহবাজপুর, ভোলা উত্তর ও ইলিশা- এই তিন খনিতে গ্যাসের মজুদ অন্তত ৮ টিসিএফ। এতে খনন করা ৯টি কূপ উৎপাদনে গেলে প্রতিদিন মিলবে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এর মধ্যে চলমান ৫ কূপ থেকে মিলবে দেড়শো মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিতে নতুন ৩টি পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার। দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা ও ফেনীতে হবে একাধিক পাইপলাইন। এতে খুলনা পর্যন্তই ব্যয় হবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে, এর আগে দরপত্রের মাধ্যমে আপাতত ঢাকায় গ্যাস আসবে সিএনজি ও এলএনজি করে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, ‘পাইপলাইনে যদি হাত দেয়া হয় তাহলে চার বছরের আগে কাজ হবে না। তাহলে আমি কী গ্যাস নিয়ে আসবো না। এ কারণে বিকল্প হিসেবে সিএনজি, এলএনজি এগুলো চিন্তা করা হচ্ছে।’
প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসবে ভোলা থেকে। এর মধ্যে ইনট্রাকো ৫ মিলিয়ন সিএনজি দিচ্ছে তিতাসকে। বাকি ৫৫ মিলিয়নের মধ্যে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট তারা সরবরাহ করার কথা থাকলেও নতুন করে সিএনজি ও এলএনজির জন্য দরপত্র ছাড়বে পেট্রোবাংলা।
যার মধ্যে অংশ নেবে ইনট্রাকোও। এদিকে কোম্পানিটির পুরনো নথিপত্র খতিয়ে দেখা হবে জানালেও চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত তারা গ্যাস সরবরাহ করবে বললেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
৩ হাজার পিএসআই চাপে প্রতি সিলিন্ডারে ইনট্রাকো সিএনজি সরবরাহ করে সাড়ে ৩ হাজার ঘনমিটার। প্রতি ইউনিট ১৭ টাকায় কিনে তাদের বিক্রি ৪৭ টাকা।
বিপরীতে এলএনজি পড়বে ২৬ টাকা। অপরদিকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হলেও নদীতে পাইপলাইন বসাতে ভাবতে হবে ঝুঁকি, খরচ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে। তাই ভোলার গ্যাস এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহের পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।
এমআইএসটির অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে শুধু পাইপলাইনের খরচ না। নদী শাসন করা, নদীর চ্যানেল ঠিক রাখা যাতে অতিরিক্ত ইরোসন না হয় এরকম অনেক বিষয় আছে।’
ঢাকায় এলএনজি সরবরাহে মেঘনা নদীতে তৈরি হবে ছোট টার্মিনাল। অপরদিকে পাইপলাইন হলে প্রাধান্য পাবে দক্ষিণের শিল্প খাত।
প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে প্রস্তাব যাবে উন্নয়ন অংশীদারের কাছে।