ঢাকা ০৫:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ফারুকীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সৈয়দ জামিল আহমেদের

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২৮:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ ছাড়াও মুনীর চৌধুরী ১ম জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামিল আহমেদ। বক্তৃতাতেও তাঁর ইস্তফার বিষয়টি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব।

পরে তিনি পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করে সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’’

গত ১৬ আগস্ট উপদেষ্টাদের দায়িত্ব পুনঃবণ্টন করে ড. আসিফ নজরুলকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সৈয়দ জামিল তাঁর বক্তব্যে মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৎকালীন সংস্কৃতি উপদেষ্টার (আসিফ নজরুল) পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে আমি বলেছিলাম, শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে এবং আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন–সংবলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সকল প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন। তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সম্মত হই। কিন্তু উপদেষ্টা পরিবর্তনের পর থেকে আমার সকল বিধিসম্মত কাজে নীতিবহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একাডেমির সকল কর্মকাণ্ডকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।’

উদহারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‌‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। অথচ একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করার বিধান রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে জামিল আহমেদ কাজ করতে গিয়ে বাধা পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে আদিবাসী কথাটা বলতে বাধা দিয়েছিল, আমরা আদিবাসী কথাটা বলতে পারব না। আমি আজকে বলছি, আদিবাসীদের দাবি পূর্ণ হোক। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হোক। তাদের অধিকার অর্জিত হোক। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কায়েম হোক। আনাসের মতো শহীদের রক্ত যেন সার্থক হয়।’

জামিল আহমেদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা বুঝুক, গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিল্পীদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তাদের ব্যাপক কর্মকাণ্ডের জন্য বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে প্রচুর নাট্যচর্চা হচ্ছে, সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ আসলেই সৃষ্টি হয়েছে। আমি এখন সঠিক সময় বলে মনে করি, আর বোধ হয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শিল্পকলার মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন নাট্যনির্দেশক ও গবেষক সৈয়দ জামিল আহমেদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ফারুকীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সৈয়দ জামিল আহমেদের

আপডেট সময় : ০১:২৮:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ ছাড়াও মুনীর চৌধুরী ১ম জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামিল আহমেদ। বক্তৃতাতেও তাঁর ইস্তফার বিষয়টি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব।

পরে তিনি পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করে সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’’

গত ১৬ আগস্ট উপদেষ্টাদের দায়িত্ব পুনঃবণ্টন করে ড. আসিফ নজরুলকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সৈয়দ জামিল তাঁর বক্তব্যে মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৎকালীন সংস্কৃতি উপদেষ্টার (আসিফ নজরুল) পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে আমি বলেছিলাম, শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে এবং আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন–সংবলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সকল প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন। তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সম্মত হই। কিন্তু উপদেষ্টা পরিবর্তনের পর থেকে আমার সকল বিধিসম্মত কাজে নীতিবহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একাডেমির সকল কর্মকাণ্ডকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।’

উদহারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‌‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। অথচ একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করার বিধান রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে জামিল আহমেদ কাজ করতে গিয়ে বাধা পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে আদিবাসী কথাটা বলতে বাধা দিয়েছিল, আমরা আদিবাসী কথাটা বলতে পারব না। আমি আজকে বলছি, আদিবাসীদের দাবি পূর্ণ হোক। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হোক। তাদের অধিকার অর্জিত হোক। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কায়েম হোক। আনাসের মতো শহীদের রক্ত যেন সার্থক হয়।’

জামিল আহমেদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা বুঝুক, গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিল্পীদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তাদের ব্যাপক কর্মকাণ্ডের জন্য বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে প্রচুর নাট্যচর্চা হচ্ছে, সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ আসলেই সৃষ্টি হয়েছে। আমি এখন সঠিক সময় বলে মনে করি, আর বোধ হয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শিল্পকলার মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন নাট্যনির্দেশক ও গবেষক সৈয়দ জামিল আহমেদ।