ব্যবসায়ীদের অস্বাভাবিক মুনাফা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ

- আপডেট সময় : ০১:২০:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
- / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে

রমজানে সবজি ও আমিষের সাথে ছোলা, তেল, চিনি ও খেজুরসহ আট থেকে ১০টি পণ্যের চাহিদা কয়েকগুণ বেশি। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিবছরই অস্বাভাবিক মুনাফা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবে এবার মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশকিছু পদক্ষেপে কয়েকটি পণ্যের দাম গেলবছরের তুলনায় ৫-১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরনো নিয়মেই তেল ও চিনির সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা হচ্ছে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য রহমতের বার্তা নিয়ে আসে রমজান। সেহরিতে পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে সারাদিন রোজা রেখে ইফতার হয় মুখরোচক খাবারে। দীর্ঘ একমাস আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এই ইবাদত পালন হয় কিছুটা বাড়তি আয়োজনে।
স্বল্প, মধ্যম বা উচ্চ আয়ের মানুষের সেহরি ও ইফতারের পাতে পদের সংখ্যার পার্থক্য থাকলেও রমজান পালনে সাধ্যের কোনো কমতি রাখা হয় না। কিন্তু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিবছরই বাজারকে অস্থিও করে তোলে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
ছোলা, তেল, চিনি ও খেজুর সহ যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সেগুলো দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়। যার একই চিত্র দেখা যায় কাঁচামরিচ, লেবু বা মাছ ও মুরগীর মত সবজি এবং আমিষের বিশেষ পণ্যে।
তাই এবার আগে থাকতেই দেশীয় বাজারের পাশাপাশি বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে রমজানে চাহিদা থাকে এমন বিশেষ ১০টি পণ্যে। কম আমদানির অজুহাতে সরবরাহের সংকট দেখিয়ে যার দাম কয়েক দফা বাড়ায় অসাধু বাজারজাতকারীরা।
৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু উদ্যোগে রমজানের ১৫ দিনের কম সময়েও সেসব পণ্যের সরবরাহ ও দাম এখনো স্বাভাবিক আছে। আশা করা যাচ্ছে রমজানে চলাকালীন সময়ে একই রকম থাকবে। তবে মাঝে যে সয়াবিন তেল ও চিনির সংকট দেখা গেছে তা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা গেছে।
পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারজাতকারীদের দাম বাড়ানো যে পায়তারা তা প্রতিবছরই হয়ে আসছে। তাই তেল ও চিনির ক্ষেত্রে সেই পুরানো কারসাজির আশঙ্কা করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে সঠিক নজরদারি ও ব্যবস্থা নেয়া গেলে বিগত সময়ের মত এবারের রমজানে দাম বাড়বে না বলে জানান তারা।
গত বছর জানুয়ারিতে রোজায় বহুলব্যবহৃত আট ধরনের পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাখা হয় ৯০ দিন বাকি রেখে পণ্য আমদানির সুযোগ। কিন্তু এরপরও সেসময় কয়েকটি পণ্যে অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। তবে এবছর ইতোমধ্যে সেসব পণ্য আমদানিতে বেশকিছু শর্ত শিথিল করে প্রণোদনা দিয়ে কয়েকটি নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ফলে ডলারের দাম বাড়লেও এসব পণ্যের কয়েকটির দাম গত বছর থেকে কম আছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সেই সাথে তেল ও চিনির সংকট থাকবে না বলে জানান তারা। কিন্তু দাম বাড়ানো হবে কিনা সে বিষয়ে এখনও কিছু জানাতে পারছেন না বাজারজাতকারীরারা।
নিম্ন আয়ের মানুষের জনদুর্ভোগ কমাতে রমজানে অযৌক্তিক দাম বাড়ানো নজরদারি ও কঠিন শাস্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘সবসময় যেটা চেষ্টা করা হয় সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে। এবারো হয়ত সরকারের তরফ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে যে আমদানি বা সরবরাহে কোনো বিঘ্ন নাই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সুষ্ঠু ডিস্ট্রিবিউশন। পণ্য সামগ্রী ঠিক থাকলো কিন্তু দাম নাগালের বাইরে থাকলো। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় পণ্য সরবরাহ করা না গেলে জনদুর্ভোগ কমবে না।’
কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেট ভাঙ্গা গেলে রমজানে মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে বলে জানান ভোক্তা, খুচরা ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।