ঢাকা ০৯:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক নিয়ে যা বলল রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:৫৩:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

হোয়াইট হাইসের ওভাল অফিস শুক্রবার এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হলো। পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে বসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নজিরবিহীন ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বৈঠকে ট্রাম্প ‘বদমাশ’ জেলেনস্কিকে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছেন।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘আমি মনে করি, জেলেনস্কির একগাদা মিথ্যা কথার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিথ্যাটি ছিল, হোয়াইট হাউসে তিনি দাবি করেছেন, ২০২২ সালে কিয়েভ সরকার একা ছিল। কোনো সমর্থন পায়নি।’

মারিয়া জাখারোভা আরও লেখেন, ‘ট্রাম্প ও ভ্যান্স (যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট) কীভাবে সেই বদমাশকে আঘাত করা থেকে বিরত ছিলেন; সেটা সংযম প্রদর্শনের এক অলৌকিক ঘটনা।’

এদিকে, এই ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। এক্স পোস্টে তিনি জেলেনস্কিকে একজন ‘উদ্ধত শূকর’ বলে মন্তব্য করেন।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শুরু হয়েছিল চিরপরিচিত সৌহার্দ্যপূর্ণ দেহভঙ্গির মধ্য দিয়েই। প্রথা অনুযায়ী দুই প্রেসিডেন্ট হাত মেলানোর মধ্য দিয়ে বৈঠক শুরু হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাদের দুইজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে বৈঠক বার বার সংঘাতে রূপ নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেইনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করা এবং তা সই করার আগে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ট্রাম্প ও জেলেনস্কির এই বৈঠক।

কিন্তু বৈঠকে জেলেনস্কি প্রকাশ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের নরম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। তিনি বলেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনোভাবেই আপোস হওয়া উচিত নয়।

ওদিকে ট্রাম্প বলেন, পুতিন একটি চুক্তি করতে চান। রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে কিছু ছাড় দিতে হবে। জেলেনস্কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন বলেও একপর্যায়ে গর্জে ওঠেন ট্রাম্প।

আলোচনার একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, “একটি চুক্তি করুন, নইলে আমরা বেরিয়ে যাই।” জেলেনস্কিকে আরও কৃতজ্ঞ হতেও বলেন তিনি।

জবাবে জেলেনস্কি বলেন, আমরা নিজেদের দেশেই আছি। (যুদ্ধের) পুরো সময় আমরা দৃঢ়তার সাথেই আছি। আপনাদের সাহায্যের জন্য আমরা এমনকি ধন্যবাদও জানিয়েছি।

এখানে থামলেও চলত। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জেলেনস্কিকে ‘অভদ্র’ বলেও অভিযোগ করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতার এমন আচরণে, বিশেষত রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে যাবতীয় কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে জলাঞ্জলি দেওয়ার এই ঘটনায় গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে বলা যায়।

বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এভাবে চললে সবকিছু অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠবে বলে আমার আশঙ্কা। জেলেনস্কিকে তিনি বলেন, কোটি মানুষের জীবন নিয়ে আপনি জুয়া খেলছেন। আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। আপনার কাজ এই দেশের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক।

রীতিমতো চিৎকার করছিলেন ট্রাম্প। এই পর্যায়ে জেলেনস্কি তাঁকে উচ্চস্বরে কথা না বলার অনুরোধ করেন।

এই বৈঠকের পর নিজের প্রতিষ্ঠিত সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, আমেরিকা যুক্ত থাকলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শান্তির জন্য প্রস্তুত নন বলে আমি নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের গৌরব ওভাল অফিসকে তিনি অপমান করেছেন। শান্তির জন্য প্রস্তুত হলে তিনি পরে কখনো ফের আসতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক নিয়ে যা বলল রাশিয়া

আপডেট সময় : ০২:৫৩:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

হোয়াইট হাইসের ওভাল অফিস শুক্রবার এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হলো। পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে বসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নজিরবিহীন ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বৈঠকে ট্রাম্প ‘বদমাশ’ জেলেনস্কিকে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছেন।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘আমি মনে করি, জেলেনস্কির একগাদা মিথ্যা কথার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিথ্যাটি ছিল, হোয়াইট হাউসে তিনি দাবি করেছেন, ২০২২ সালে কিয়েভ সরকার একা ছিল। কোনো সমর্থন পায়নি।’

মারিয়া জাখারোভা আরও লেখেন, ‘ট্রাম্প ও ভ্যান্স (যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট) কীভাবে সেই বদমাশকে আঘাত করা থেকে বিরত ছিলেন; সেটা সংযম প্রদর্শনের এক অলৌকিক ঘটনা।’

এদিকে, এই ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। এক্স পোস্টে তিনি জেলেনস্কিকে একজন ‘উদ্ধত শূকর’ বলে মন্তব্য করেন।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শুরু হয়েছিল চিরপরিচিত সৌহার্দ্যপূর্ণ দেহভঙ্গির মধ্য দিয়েই। প্রথা অনুযায়ী দুই প্রেসিডেন্ট হাত মেলানোর মধ্য দিয়ে বৈঠক শুরু হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাদের দুইজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে বৈঠক বার বার সংঘাতে রূপ নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেইনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করা এবং তা সই করার আগে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ট্রাম্প ও জেলেনস্কির এই বৈঠক।

কিন্তু বৈঠকে জেলেনস্কি প্রকাশ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের নরম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। তিনি বলেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনোভাবেই আপোস হওয়া উচিত নয়।

ওদিকে ট্রাম্প বলেন, পুতিন একটি চুক্তি করতে চান। রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে কিছু ছাড় দিতে হবে। জেলেনস্কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন বলেও একপর্যায়ে গর্জে ওঠেন ট্রাম্প।

আলোচনার একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, “একটি চুক্তি করুন, নইলে আমরা বেরিয়ে যাই।” জেলেনস্কিকে আরও কৃতজ্ঞ হতেও বলেন তিনি।

জবাবে জেলেনস্কি বলেন, আমরা নিজেদের দেশেই আছি। (যুদ্ধের) পুরো সময় আমরা দৃঢ়তার সাথেই আছি। আপনাদের সাহায্যের জন্য আমরা এমনকি ধন্যবাদও জানিয়েছি।

এখানে থামলেও চলত। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জেলেনস্কিকে ‘অভদ্র’ বলেও অভিযোগ করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতার এমন আচরণে, বিশেষত রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে যাবতীয় কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে জলাঞ্জলি দেওয়ার এই ঘটনায় গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে বলা যায়।

বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এভাবে চললে সবকিছু অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠবে বলে আমার আশঙ্কা। জেলেনস্কিকে তিনি বলেন, কোটি মানুষের জীবন নিয়ে আপনি জুয়া খেলছেন। আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। আপনার কাজ এই দেশের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক।

রীতিমতো চিৎকার করছিলেন ট্রাম্প। এই পর্যায়ে জেলেনস্কি তাঁকে উচ্চস্বরে কথা না বলার অনুরোধ করেন।

এই বৈঠকের পর নিজের প্রতিষ্ঠিত সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, আমেরিকা যুক্ত থাকলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শান্তির জন্য প্রস্তুত নন বলে আমি নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের গৌরব ওভাল অফিসকে তিনি অপমান করেছেন। শান্তির জন্য প্রস্তুত হলে তিনি পরে কখনো ফের আসতে পারেন।