এক মাস স্থগিতের পর অবশেষে কার্যকর হলো কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে দুই প্রতিবেশী দেশ। এদিকে, চীনা পণ্যে শুল্কারোপ দ্বিগুণ করার ঘোষণায় মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে বেইজিং। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে বাণিজ্য যুদ্ধের মুখে পড়তে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম একটি বিষয় ছিল শুল্ক। মার্কিন পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি বাড়াতে বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্কারোপ তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল। ট্রাম্পের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারের জন্য প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও মেক্সিকো জড়িত। চীন থেকে মাদকের বড় চালান আসে যুক্তরাষ্ট্রে। তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে শুল্কারোপের ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
ট্রাম্পের শুল্কারোপের হুঁশিয়ারির পর সমস্যা সমাধানে কাজ করার আশ্বাস দেয় কানাডা ও মেক্সিকো। পরে গেল ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এই পরিকল্পনা এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। হোয়াইট হাউজ জানায়, শুল্কারোপ স্থগিতাদেশের সময় শেষ। কানাডা ও মেক্সিকোর আর কোনো সুযোগ নেই বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আগামী ২ এপ্রিল থেকে তাদের ওপর বাড়তি শুল্কও আরোপ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘বাড়তি শুল্কারোপের বিষয়টি পহেলা এপ্রিলে শুরু করার পরিকল্পনা ছিল। তবে এপ্রিল ফুল দিবসে তা করতে চাইনি। তাই ২ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হচ্ছে। আর কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫% শুল্কারোপ কার্যকর হচ্ছে মঙ্গলবার থেকেই।’
কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক বাণিজ্য ৯০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কারোপে মার্কিন অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে। এতে করে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে গোটা বিশ্বে। কানাডিয়ানরা এই পদক্ষেপকে পাগলামি বলছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্যই মেক্সিকো প্রস্তুত আছে বলে জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেনবাউম বলেন, ‘শুল্কারোপের সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর নির্ভর করছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করেছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন কি সিদ্ধান্ত নেন তা দেখার বিষয়। তবে যেকোনো অবস্থার জন্য মেক্সিকো প্রস্তুত আছে।’
ট্রাম্পের নতুন শুল্কারোপের ঘোষণায় এশিয়ার শেয়ার বাজারে পতন ঘটেছে। জাপান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়ার স্টক মার্কেটের সবগুলো সূচক নিম্নমুখী। মার্কিন শেয়ার বাজার ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান সূচকগুলোও হ্রাস পেয়েছে।
শুল্কারোপে গাড়ি, জ্বালানিসহ বেশকিছু খাদ্য পণ্যের দাম বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রে। ম্যাপেল সিরাপ ও অ্যাভোকাডোর জন্য মার্কিন জনগণ কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের বৃহত্তম বিদেশী সরবরাহকারী কানাডা।
চীনা পণ্যে শুল্ক হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বেইজিং। মুরগি, গম, ভুট্টা, তুলাসহ মার্কিন কৃষি পণ্যে ১৫% শুল্ক বসিয়েছে চীন। এছাড়া, সয়াবিন, মাংস, ফল, শাকসবজি ও দুগ্ধজাত পণ্যে ১০% শুল্ক আরোপ করেছে। যা আগামী ১০ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
এদিকে, মার্কিন বায়োটেক, বিমান চলাচল ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন।