তিনি কখন কী করেন, কী বলেন বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে তাই নজর আটকে গোটা পৃথিবীর। আর সেই আবহেই ফের ভারতের উদ্বেগ বাড়ালেন ট্রাম্প। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভারতের সমালোচনা করলেন তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের প্রশংসা শোনা গেল তাঁর গলায়। (Donald Trump)
আমেরিকায় কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা করছিলেন ট্রাম্প। সেখানে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। ২ এপ্রিল থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর তাঁর সরকারও চড়া হারে শুল্ক আদায় করবে বলে জানান। আর সেই সঙ্গেই পাকিস্তানের প্রশংসা শোনা যায় তাঁর গলায়। (Donald Trump Praises Pakistan)
২০২১ সালের অগাস্ট মাসে আফগানিস্তান থেকে যখন পাততাড়ি গোটাচ্ছে আমেরিকা, সেই সময় কাবুলের বিমানবন্দরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা, যাতে আমেরিকার ১৩ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়। শুধু তাই নয়, প্রায় ১৭০ নিরীহ আফগান নাগরিকও প্রাণ হারান। সেই বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা গিয়েছে। পাকিস্তানের সহযোগিতায় ওই জঙ্গির নাগাল মিলেছে বলে খবর।
কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নেই প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, “সাড়ে তিন বছর আগে Abbey Gate বোমা বিস্ফোরণে এক (দয়েশ) জঙ্গি আমেরিকার ১৩ সৈনিককে হত্য়া করে। আজ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা ওই নৃশংসতার জন্য দায়ী শীর্ষস্তরের এক জঙ্গিকে ধরেছি। আমেরিকার বিচারব্যবস্থার আওতায় আনা হচ্ছে তাকে।”
পাকিস্তানের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, "বিশেষ করে পাকিস্তান সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ওই দানবকে গ্রেফতার করতে আমাদের সাহায্য় করেছে পাকিস্তান সরকার। যে ১৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হন, আজ তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন। যাঁদের সন্তানরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, আমি তাঁদের তিনি। কী দুঃসহ স্মৃতি।"
ট্রাম্পের মুখে এই প্রশংসা শুনে উচ্ছ্বসিত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি ISKP-র শীর্ষ কমান্ডার শরিফুল্লাকে আটক করেছে, যে আফগানিস্তানের নাগরিক। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে তাকে আটক করা হয়....। সন্ত্রাসদমনে পাকিস্তানের ৮০ হাজার সৈনিক ও নাগরিক প্রাণ বিসজর্ন দিয়েছেন...। সন্ত্রাস দমনে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখতে আমেরিকার সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে কাজ করব আমরা'।
ট্রাম্পের এই পাকিস্তান প্রশস্তিকে ভাল চোখে দেখছে না আন্তর্জাতিক মহল। কারণ অতি সম্প্রতিই পাকিস্তানের জন্য অনুদানের ঘোষণা করেছে তাঁর সরকার। পাকিস্তান সরকারের হাতে যাতে F-16 যুদ্ধবিমানের জোগান অব্যাহত থাকে, তার জন্য ৩৯৭ মিলিয়ন ডলারে অনুমোদন দিয়েছে ট্রাম্প সরকার। আমেরিকার নজরদারিতে সন্ত্রাসবিরোধী কাজকর্মেই ওই টাকা ব্যবহৃত হবে, কোনও ভাবেই ওই টাকা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না বলে যদিও জানানো হয়েছে। কিন্তু ভারত-সহ অন্য দেশের জন্য বরাদ্দ আর্থিক অনুদান বন্ধ করলেও, পাকিস্তানের জন্য কেন টাকার জোগান দিয়ে চলেছে ট্রাম্প সরকার, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
পাকিস্তান নিয়ে আগের কার্যকালেও বার বার অবস্থান পাল্টেছেন ট্রাম্প। প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় কাটছাঁট করেন তিনি। পরবর্তীতে জো বাইডেনের সরকার পাকিস্তানের জন্য ফের অর্থসাহায্য় ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। F-16 যুদ্ধবিমানের জন্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ হয়। পাকিস্তানকে অর্থসাহায্য জোগান দেওয়ার পক্ষে এই মুহূর্তে অবস্থান ট্রাম্পেরও, যা দিল্লির উদ্বেগ বাড়িয়েছে।