আগামী ২ এপ্রিল থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, গেল কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনের ওপর অন্যায্যভাবে শুল্ক চাপিয়ে দিচ্ছে নয়াদিল্লি। দ্য ইকোনোমিক টাইমস বলছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি কার্যকর হলে বছরে ভারতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭০০ কোটি রুপি ছাড়াতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি কোনো প্রতিশোধের ইঙ্গিত নয়, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার কৌশল মাত্র।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে বাণিজ্যযুদ্ধ ঘোষণার পর ট্রাম্পের প্রথম টার্গেট ছিল চীন, মেক্সিকো ও কানাডা। ধারণা করা হচ্ছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোও ছাড় পাবে না ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রকোপ থেকে। এমন পরিস্থিতিতেই গেল মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্দেশ্য ছিল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদারের পাশাপাশি শুল্ক কমানোর আলোচনা তরান্বিত করা।
যদিও ট্রাম্পের মন গলাতে পারেননি মোদি। এবার, কংগ্রেসে দেয়া ভাষণে ভারতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গাড়ির ওপর ভারত একশো শতাংশেরও বেশি শুল্ক চাপিয়ে দিচ্ছে। ট্রাম্প আরও বলেন, শুধু ভারত নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও কানাডার মতো এমন অনেক দেশ আছে; যারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অন্যায্য শুল্ক আরোপ করে আসছে। এবার তাদের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে রীতিমতো বাণিজ্য যুদ্ধে নামবেন নয়া প্রেসিডেন্ট।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'এটা একেবারেই অন্যায্য। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গাড়ির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আসছে ভারত । চীনা পণ্যে আমরা যে শুল্ক আরোপ করেছি, তার দ্বিগুণ শুল্ক চীন আমাদের থেকে নেয়। দক্ষিণ কোরিয়ার শুল্ক আমাদের তুলনায় চারগুণ। অথচ আমরা তাদের সামরিক সহায়তা থেকে শুরু করে নানাভাবে সাহায্য করি।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন বলছে, কংগ্রেসের ভাষণ থেকে এটি স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর একটি দেশ যে পরিমাণ শুল্ক আরোপ করবে, ঐ দেশের থেকে একই পরিমাণ শুল্ক আদায় করে ছাড়বেন ট্রাম্প। কংগ্রেসের ভাষণ থেকে এটি স্পষ্ট, এ তালিকার শুরুতেই এখন ভারত, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্তদেশ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে যদি নিজেদের পণ্য উৎপাদন করতে না চান, তাহলে বর্তমান প্রশাসন আপনার কাছ থেকে শুল্ক আদায় করবে। অন্যান্য দেশ বহু আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একই আচরণ করছে। এবার আমরা তাদের বিরুদ্ধে একই পদক্ষেপ নেবো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রাজিন, ভারত, মেক্সিকো, কানাডার নাম শুনেছেন?'
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতির কারণে সবচেয়ে বিপদে পড়বে ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মতো উন্নয়নশীল দেশ। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য, টেক্সটাইল ও ওষুধখাতে বেশি লোকসান গুনতে হবে নয়াদিল্লিকে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থানীয় মুদ্রার মান নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল করার জন্য নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিচ্ছে কোনো কোনো গণমাধ্যম।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন বর্তমান প্রশাসন অর্থনীতির কাঠামো পুনর্গঠন করতে চায়। বাণিজ্যযুদ্ধের কোনো আলাপই এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হওয়ার্ড লাটনিক বলেন, 'এটা কোনো বাণিজ্যযুদ্ধ নয়। ২ এপ্রিল আমরা নতুন বাণিজ্যনীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছি। চীন আমাদের থেকে চড়া শুল্ক আদায় করে। কানাডার কথা আগেও বলেছি। আমরা কেন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি কানাডায় রপ্তানি করব? আমরা নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করব। দেশের উৎপাদন সক্ষমতা আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন ট্রাম্প।'
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এত কিছু থাকতে হঠাৎ শুল্ক নিয়ে পড়েলেন কেন ট্রাম্প? মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ভিত্তিই মূলত শুল্কনীতি। উৎপাদনমুখী বাণিজ্য, চাকরির নিশ্চয়তা, রাজস্ব বৃদ্ধি, অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান উন্নতি- এই চারটি বিষয় জড়িয়ে আছে শুল্কনীতিতে।