ঢাকা ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনেও বদলায়নি চাঁদাবাজির চিত্র

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গণঅভ্যুত্থানের মতো বিরাট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও বদলায়নি নগরীর সড়ক ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির চিত্র। হিসেব করে দেখা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোর অন্তত ৮০ ভাগ সড়ক দখলে থাকায়, তীব্র যানজটসহ অচলাবস্থা তৈরি হয় পুরো নগরীতে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুধু গুলিস্তানেই বার্ষিক চাঁদাবাজির পরিমাণ অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরো নগরীতে এসব অবৈধ দখলদারিত্ব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ তৈরি করছে।

চলছে চাঁদা আদায়। রাজি না হলে হবে, এই পরিণতি! সকালের গুলিস্তানের ফাঁকা সড়ক, বেলা গড়াতেই যে বাজার, তার পেছনে অনেক হিসেব। আছে রাজনীতি, আছে ভয়। আছে ক্যামেরা দেখলে উচ্ছেদের অভিনয়। ইঁদুর বেড়াল খেলা।

এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন তিন চারবার উঠাই। ওদিকে গেলে আবার এসে বসে। এটা তো পার্মানেন্ট সলিউশন না।

নগরীর প্রাণকেন্দ্রে, যান চলাচলের জন্যই যে সড়ক, সেখানে যে বাসটিকে মনে হচ্ছে ভুলে বাজারে ঢুকে পড়া কোনো বাহন, সে চিত্র প্রতিদিনের।

দুপুর গড়ানোর পর এসব সড়কে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, একজনের হেটে যাওয়াই দায়। প্রতিদিন অফিস ধরার সময় থেকে অফিস ফেরা পর্যন্ত পুরো সময়টাতে গুলিস্তানের এই অচলাবস্থার ভুক্তভোগী কে নয়?

কিন্তু কেন গুলিস্তানের সবগুলো সড়ক দখলে? তার উত্তর পাওয়া যায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের এই হিসেবের দিকে তাকালে। আপাত দৃষ্টিতে, সরকারি জায়গা পেয়ে বসা পড়া সাড়ি সাড়ি হকার দল মনে হলেও, বাস্তবে এখানে প্রতিটি জায়গা নির্ধারিত।

প্রতি ৫০ ইঞ্চি জায়গা মিলিয়ে একেকটি ভিটি, ভ্যান বা দোকান। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বছরে ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা এককালীন এবং প্রতিদিন ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত তাদের খাজনা দিতে হতো প্রতিটি ভিটি বাবদ।

গুলিস্তান মনুমেন্ট থেকে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত সংযোগ করা এই সড়কটুকুতেই এমন ভিটি আছে, প্রায় ২০০টি, যা থেকে প্রতি বছরে আয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের এসব সড়ক, ফুটপাত দখল করে আসলে এমন কত ভিটি আছে এই গুলিস্তানে তার কোনো হিসেব সংস্থাটির কাছেও নেই।

তবে আমরা হিসেব করে দেখেছি, সব মিলিয়ে এখানে এমন সব ভিটির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এবং সরকারি সড়ক ব্যবহার করে এই গুলিস্তান থেকে এক দিনে চাঁদাবাজির পরিমাণ: কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকা। বছর শেষে এই গুলিস্তান থেকেই বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে তো আওয়ামী লীগ নেই, তাহলে তাদের জায়গায় কারা?

ভয়ে সামনাসামনি সব ঠিকঠিক বললেও, গোপনে ভেসে আসে অনেক আক্ষেপ। একজন অভিযোগ করে বলেন, এরা ক্ষমতায় আসার আগেই এগুলো করছে, ক্ষমতায় আসলে এরা কী করবে? আমরা চিন্তিত।

পরিচয় গোপন করে, নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, আরও কিছু তথ্য। একজন বলেন, ‘এখানে কোনো কাস্টমার গ্যাঞ্জাম লাগালে, সমস্ত দোকানদার দৌঁড়িয়ে আসবে।’ অ্যাডভান্সের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স। মাসে ভাড়া ১৫ হাজার টাকা।’

অনুসন্ধানে আমরা দেখি, পুরো গুলিস্তানকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনৈতিক বিভিন্ন পক্ষ। এর মধ্যে জাতীয় স্টেডিয়াম, ভাসানী স্টেডিয়াম ও আউট স্টেডিয়াম; ইউনিট বিএনপি ও যুবদলের পরিচয়ে নিয়ন্ত্রণ করে এস এম আব্বাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সম্প্রতি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মিজানুর রহমান টিপু।

বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট থেকে উৎসব কাউন্টার হয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার বন্ধন কাউন্টার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ একই নেতৃত্বের। গুলিস্তান নাট্যমঞ্চ পার্ক ও পশ্চিম পাশের ফল পট্টি নিয়ন্ত্রণ করা হয় যুবদলের নামে।

বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের ফুটপাতের ২০০ দোকান থেকে চাঁদা নেন ইউনিট বিএনপি ও যুবদলের নামে কাদের ও খোকন। একই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে আছে মোবাইল চোরা মার্কেট থেকে আউটার স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশ।

একইভাবে নিয়ন্ত্রণ আছে, মুক্তাঙ্গন ও পল্টন মোড়ে। বায়তুল মোকাররমের লিংক রোড নিয়ন্ত্রণে আছে যুবদল ইউনিটের জিয়া, শহীদ, লুচ্চা কামালের আধিপত্যে।

এবং এর পেছনে যে মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজের আস্কারা আছে, তা বোঝা যায় ক্যামেরার সামনেই দলবল নিয়ে হকারদের দেয়া এই হুমকি ধামকি থেকে।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, যিনি আবার ঐ শ্রমিক দল নেতার আপন বড় ভাই, তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ সম্পর্কে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু বলেন, ‘পুলিশকেও কয়েকবার বলা হয়েছে ধরে ফেলুক। আমরা চাইনা কেউ সাধারণ মানুষের সাথে চাঁদাবাজি করুক।’

যদিও সিটি করপোরেশন বলছে, বড় সমস্যা এসব হকারদের পেছনে থাকা রাজনৈতিক ইন্ধনদাতারাই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, ‘এখানে যে পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স পার্টি আছে, তারা হয়ত এখানে বসাচ্ছে। এখন আইন তো মান্য করার বিষয়। আইন প্রয়োগ করে কাউকে শোধরানোর তো সুযোগ নেই। তবে আমি বিশ্বাস করি এখানে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা থাকলে দলগুলোর নজরে বিষয়টা আনা উচিত।’

এটা স্পষ্ট ফুটপাত দখল করে হকারদের এই ব্যবসা সেটা মোটেও সহজ সরল কোনো ব্যাপার নয় এবং এসব কাজের পেছনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একধরনের প্রচ্ছন্ন আস্কারা থাকে সেটিও বলছেন সবাই। কিন্তু এখন বিরাট একটা গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তনের একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে এবং বলা হচ্ছে, এ সরকারের সেভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই, তাহলে এসব বন্ধ করতে সরকারের অনীহা কেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীর সড়ক আর ফুটপাতগুলো কালো টাকা উৎপাদনের একটি প্রচ্ছন্ন কারাখানা। যা এখনো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এই দুষ্টচক্রেই আবর্তিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যে অর্থ তারা সংগ্রহ করেন সেটা যে একা ওই ব্যক্তি ভোগ করেন ব্যাপারটা কিন্তু ওরকম না। ওখানেও একটা সিন্ডিকেট আছে। ওটা অনুসরণ করে তাকে টাকা অনেকদূর পৌঁছে দিতে হয়। এ ধরনের অপরাধগুলো এক ধরনের রাজনৈতিক ক্ষমতা পুঁজি করে বা ব্যবহার করে দুর্বৃত্তায়ন, অস্থিরতা সৃষ্টি করা বা দখল করা, চাঁদাবাজি করা এ ধরনের ঘটনার নামন্তর।’

তিনি বলেন, এখান থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে সেগুলোর তো রাষ্ট্রীয় কোনো হিসাব নাই। রাজনৈতিক থেকে ব্যক্তি প্রয়োজন ও ইচ্ছায় যে যেভাবে খুশি এসব অর্থ ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক দৃর্বত্তায়নের মাধ্যমে যদি এ অর্থ ব্যবহার হয় তাহলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনিয়ম ও উছ্শৃঙ্খল আচরণ করা সম্ভব। এখান থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সিটি করপোরেশনকেই জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। তার আইনে যা আছে সেটার প্রয়োগ ঘটানো। এবং এখানে আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সোচ্চার ভূমিকা ব্যতীত এ অবস্থা থেকে কোনো মুক্তি মিলবে না।’

প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশেই হকার বাজারের ব্যবস্থা আছে। যেখানে নির্ধারিত সরকারি ফি’য়ের বিনিময়ে হকাররা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সড়ক দখল করে ব্যবসার নামে চাঁদাবাজির সেই আগের ধারাই কি থাকবে, নাকি তা বন্ধ হবে নাকি ফি’ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকার হকারদের একটি বৈধ পুনর্বাসনের দিকে যাবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনেও বদলায়নি চাঁদাবাজির চিত্র

আপডেট সময় : ০১:২৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানের মতো বিরাট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও বদলায়নি নগরীর সড়ক ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির চিত্র। হিসেব করে দেখা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোর অন্তত ৮০ ভাগ সড়ক দখলে থাকায়, তীব্র যানজটসহ অচলাবস্থা তৈরি হয় পুরো নগরীতে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুধু গুলিস্তানেই বার্ষিক চাঁদাবাজির পরিমাণ অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরো নগরীতে এসব অবৈধ দখলদারিত্ব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ তৈরি করছে।

চলছে চাঁদা আদায়। রাজি না হলে হবে, এই পরিণতি! সকালের গুলিস্তানের ফাঁকা সড়ক, বেলা গড়াতেই যে বাজার, তার পেছনে অনেক হিসেব। আছে রাজনীতি, আছে ভয়। আছে ক্যামেরা দেখলে উচ্ছেদের অভিনয়। ইঁদুর বেড়াল খেলা।

এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন তিন চারবার উঠাই। ওদিকে গেলে আবার এসে বসে। এটা তো পার্মানেন্ট সলিউশন না।

নগরীর প্রাণকেন্দ্রে, যান চলাচলের জন্যই যে সড়ক, সেখানে যে বাসটিকে মনে হচ্ছে ভুলে বাজারে ঢুকে পড়া কোনো বাহন, সে চিত্র প্রতিদিনের।

দুপুর গড়ানোর পর এসব সড়কে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, একজনের হেটে যাওয়াই দায়। প্রতিদিন অফিস ধরার সময় থেকে অফিস ফেরা পর্যন্ত পুরো সময়টাতে গুলিস্তানের এই অচলাবস্থার ভুক্তভোগী কে নয়?

কিন্তু কেন গুলিস্তানের সবগুলো সড়ক দখলে? তার উত্তর পাওয়া যায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের এই হিসেবের দিকে তাকালে। আপাত দৃষ্টিতে, সরকারি জায়গা পেয়ে বসা পড়া সাড়ি সাড়ি হকার দল মনে হলেও, বাস্তবে এখানে প্রতিটি জায়গা নির্ধারিত।

প্রতি ৫০ ইঞ্চি জায়গা মিলিয়ে একেকটি ভিটি, ভ্যান বা দোকান। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বছরে ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা এককালীন এবং প্রতিদিন ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত তাদের খাজনা দিতে হতো প্রতিটি ভিটি বাবদ।

গুলিস্তান মনুমেন্ট থেকে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত সংযোগ করা এই সড়কটুকুতেই এমন ভিটি আছে, প্রায় ২০০টি, যা থেকে প্রতি বছরে আয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের এসব সড়ক, ফুটপাত দখল করে আসলে এমন কত ভিটি আছে এই গুলিস্তানে তার কোনো হিসেব সংস্থাটির কাছেও নেই।

তবে আমরা হিসেব করে দেখেছি, সব মিলিয়ে এখানে এমন সব ভিটির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এবং সরকারি সড়ক ব্যবহার করে এই গুলিস্তান থেকে এক দিনে চাঁদাবাজির পরিমাণ: কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকা। বছর শেষে এই গুলিস্তান থেকেই বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে তো আওয়ামী লীগ নেই, তাহলে তাদের জায়গায় কারা?

ভয়ে সামনাসামনি সব ঠিকঠিক বললেও, গোপনে ভেসে আসে অনেক আক্ষেপ। একজন অভিযোগ করে বলেন, এরা ক্ষমতায় আসার আগেই এগুলো করছে, ক্ষমতায় আসলে এরা কী করবে? আমরা চিন্তিত।

পরিচয় গোপন করে, নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, আরও কিছু তথ্য। একজন বলেন, ‘এখানে কোনো কাস্টমার গ্যাঞ্জাম লাগালে, সমস্ত দোকানদার দৌঁড়িয়ে আসবে।’ অ্যাডভান্সের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স। মাসে ভাড়া ১৫ হাজার টাকা।’

অনুসন্ধানে আমরা দেখি, পুরো গুলিস্তানকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনৈতিক বিভিন্ন পক্ষ। এর মধ্যে জাতীয় স্টেডিয়াম, ভাসানী স্টেডিয়াম ও আউট স্টেডিয়াম; ইউনিট বিএনপি ও যুবদলের পরিচয়ে নিয়ন্ত্রণ করে এস এম আব্বাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সম্প্রতি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মিজানুর রহমান টিপু।

বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট থেকে উৎসব কাউন্টার হয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার বন্ধন কাউন্টার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ একই নেতৃত্বের। গুলিস্তান নাট্যমঞ্চ পার্ক ও পশ্চিম পাশের ফল পট্টি নিয়ন্ত্রণ করা হয় যুবদলের নামে।

বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের ফুটপাতের ২০০ দোকান থেকে চাঁদা নেন ইউনিট বিএনপি ও যুবদলের নামে কাদের ও খোকন। একই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে আছে মোবাইল চোরা মার্কেট থেকে আউটার স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশ।

একইভাবে নিয়ন্ত্রণ আছে, মুক্তাঙ্গন ও পল্টন মোড়ে। বায়তুল মোকাররমের লিংক রোড নিয়ন্ত্রণে আছে যুবদল ইউনিটের জিয়া, শহীদ, লুচ্চা কামালের আধিপত্যে।

এবং এর পেছনে যে মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজের আস্কারা আছে, তা বোঝা যায় ক্যামেরার সামনেই দলবল নিয়ে হকারদের দেয়া এই হুমকি ধামকি থেকে।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, যিনি আবার ঐ শ্রমিক দল নেতার আপন বড় ভাই, তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ সম্পর্কে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু বলেন, ‘পুলিশকেও কয়েকবার বলা হয়েছে ধরে ফেলুক। আমরা চাইনা কেউ সাধারণ মানুষের সাথে চাঁদাবাজি করুক।’

যদিও সিটি করপোরেশন বলছে, বড় সমস্যা এসব হকারদের পেছনে থাকা রাজনৈতিক ইন্ধনদাতারাই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, ‘এখানে যে পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স পার্টি আছে, তারা হয়ত এখানে বসাচ্ছে। এখন আইন তো মান্য করার বিষয়। আইন প্রয়োগ করে কাউকে শোধরানোর তো সুযোগ নেই। তবে আমি বিশ্বাস করি এখানে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা থাকলে দলগুলোর নজরে বিষয়টা আনা উচিত।’

এটা স্পষ্ট ফুটপাত দখল করে হকারদের এই ব্যবসা সেটা মোটেও সহজ সরল কোনো ব্যাপার নয় এবং এসব কাজের পেছনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একধরনের প্রচ্ছন্ন আস্কারা থাকে সেটিও বলছেন সবাই। কিন্তু এখন বিরাট একটা গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তনের একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে এবং বলা হচ্ছে, এ সরকারের সেভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই, তাহলে এসব বন্ধ করতে সরকারের অনীহা কেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীর সড়ক আর ফুটপাতগুলো কালো টাকা উৎপাদনের একটি প্রচ্ছন্ন কারাখানা। যা এখনো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এই দুষ্টচক্রেই আবর্তিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যে অর্থ তারা সংগ্রহ করেন সেটা যে একা ওই ব্যক্তি ভোগ করেন ব্যাপারটা কিন্তু ওরকম না। ওখানেও একটা সিন্ডিকেট আছে। ওটা অনুসরণ করে তাকে টাকা অনেকদূর পৌঁছে দিতে হয়। এ ধরনের অপরাধগুলো এক ধরনের রাজনৈতিক ক্ষমতা পুঁজি করে বা ব্যবহার করে দুর্বৃত্তায়ন, অস্থিরতা সৃষ্টি করা বা দখল করা, চাঁদাবাজি করা এ ধরনের ঘটনার নামন্তর।’

তিনি বলেন, এখান থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে সেগুলোর তো রাষ্ট্রীয় কোনো হিসাব নাই। রাজনৈতিক থেকে ব্যক্তি প্রয়োজন ও ইচ্ছায় যে যেভাবে খুশি এসব অর্থ ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক দৃর্বত্তায়নের মাধ্যমে যদি এ অর্থ ব্যবহার হয় তাহলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনিয়ম ও উছ্শৃঙ্খল আচরণ করা সম্ভব। এখান থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সিটি করপোরেশনকেই জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। তার আইনে যা আছে সেটার প্রয়োগ ঘটানো। এবং এখানে আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সোচ্চার ভূমিকা ব্যতীত এ অবস্থা থেকে কোনো মুক্তি মিলবে না।’

প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশেই হকার বাজারের ব্যবস্থা আছে। যেখানে নির্ধারিত সরকারি ফি’য়ের বিনিময়ে হকাররা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সড়ক দখল করে ব্যবসার নামে চাঁদাবাজির সেই আগের ধারাই কি থাকবে, নাকি তা বন্ধ হবে নাকি ফি’ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকার হকারদের একটি বৈধ পুনর্বাসনের দিকে যাবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।