ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ট্রাম্পের নতুন মার্কিন নীতিতে হতভম্ব ইউরোপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:০৯:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দীর্ঘকাল ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম কৌশল ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা। তাদের ধারণা ছিল, এই বিভাজন পশ্চিমা জোটকে দুর্বল করবে—যে জোট এতদিন ইউরোপের প্রুশিয়া অঞ্চলে সোভিয়েত ট্যাঙ্কের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করে এসেছে। কিন্তু এখন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একটি সুবিধা মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছেন, যা তারা ‘শীতল যুদ্ধ’ এমনকি তারও আগে থেকে প্রত্যাশা করছিল। শনিবার (৮ মার্চ) দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইউরোপকে হতভম্ব করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভিত্তি স্বাধীনতা। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এলেও এখন মিত্রতে পরিণত হয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। এতে ইউরোপ নিজেদের উপেক্ষিত ভাবছে। তারা আবারও নিজেদের শক্তি-সক্ষমতা (সামরিক) বাড়ানোয় নজর দিচ্ছে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের নীতিতে উদ্বিগ্ন। গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে, যা ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রিনিউ ইউরোপ গ্রুপের সভাপতি ভ্যালেরি হায়ার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এতদিন শান্তির ভিত্তি ছিল, কিন্তু এখন তারা নতুন অবস্থান নিয়েছে।”

ইউরোপ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতি ও আচরণ গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে সমৃদ্ধ ও স্বাধীন ইউরোপ গড়ে ওঠে, তার ভিত্তি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘পশ্চিম’ বলে পরিচিত ঐক্যবদ্ধ ধারণাটি পরিবর্তিত হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও, উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের অঙ্গীকার ছিল অভিন্ন। কিন্তু বর্তমানে সেই ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইউরোপ, রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র—প্রত্যেকেই এখন ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। ‘পশ্চিম’ এখন শুধু একটি ধারণায় পরিণত হয়েছে, যার শূন্যতা কীভাবে পূরণ হবে তা স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্ব শক্তিগুলোর অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, সহিংসতা অনিবার্য।

প্যারিসের পো ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোল বাচারন সতর্ক করে বলেন, “ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো উদার গণতন্ত্রের সংকোচন।”

এদিকে, ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান ইউরোপের জনপ্রিয় রাজনীতিকদের (পপুলিস্ট) বিপাকে ফেলেছে। বিশেষ করে, ন্যাটো নিয়ে তার কঠোর মনোভাব এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করায় মিত্রদের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যয় না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা দেবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এসব অবস্থান পশ্চিমা গণতন্ত্রের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্পের নতুন মার্কিন নীতিতে হতভম্ব ইউরোপ

আপডেট সময় : ০৩:০৯:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

দীর্ঘকাল ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম কৌশল ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা। তাদের ধারণা ছিল, এই বিভাজন পশ্চিমা জোটকে দুর্বল করবে—যে জোট এতদিন ইউরোপের প্রুশিয়া অঞ্চলে সোভিয়েত ট্যাঙ্কের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করে এসেছে। কিন্তু এখন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একটি সুবিধা মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছেন, যা তারা ‘শীতল যুদ্ধ’ এমনকি তারও আগে থেকে প্রত্যাশা করছিল। শনিবার (৮ মার্চ) দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইউরোপকে হতভম্ব করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভিত্তি স্বাধীনতা। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এলেও এখন মিত্রতে পরিণত হয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। এতে ইউরোপ নিজেদের উপেক্ষিত ভাবছে। তারা আবারও নিজেদের শক্তি-সক্ষমতা (সামরিক) বাড়ানোয় নজর দিচ্ছে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের নীতিতে উদ্বিগ্ন। গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে, যা ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রিনিউ ইউরোপ গ্রুপের সভাপতি ভ্যালেরি হায়ার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এতদিন শান্তির ভিত্তি ছিল, কিন্তু এখন তারা নতুন অবস্থান নিয়েছে।”

ইউরোপ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতি ও আচরণ গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে সমৃদ্ধ ও স্বাধীন ইউরোপ গড়ে ওঠে, তার ভিত্তি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘পশ্চিম’ বলে পরিচিত ঐক্যবদ্ধ ধারণাটি পরিবর্তিত হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও, উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের অঙ্গীকার ছিল অভিন্ন। কিন্তু বর্তমানে সেই ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইউরোপ, রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র—প্রত্যেকেই এখন ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। ‘পশ্চিম’ এখন শুধু একটি ধারণায় পরিণত হয়েছে, যার শূন্যতা কীভাবে পূরণ হবে তা স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্ব শক্তিগুলোর অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, সহিংসতা অনিবার্য।

প্যারিসের পো ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোল বাচারন সতর্ক করে বলেন, “ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো উদার গণতন্ত্রের সংকোচন।”

এদিকে, ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান ইউরোপের জনপ্রিয় রাজনীতিকদের (পপুলিস্ট) বিপাকে ফেলেছে। বিশেষ করে, ন্যাটো নিয়ে তার কঠোর মনোভাব এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করায় মিত্রদের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যয় না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা দেবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এসব অবস্থান পশ্চিমা গণতন্ত্রের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।