জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে ফোন করলে পুলিশ আসে। কিন্তু অপরাধীর দাপটে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে অনেক ভুক্তভোগীর। শতকের হিসাবে অভিযোগের মাত্র ৩.৩৮ শতাংশ পেয়েছেন ট্রিপল নাইনের সহায়তা, যা বলছে খোদ পুলিশ বিভাগ। তাই কেউ কেউ জরুরি সেবার নম্বরে ভরসা না রেখে সরাসরি চলে আসেন থানায়। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভীতি কীভাবে কাটবে সে পথ খুঁজছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে ভাটারা থানার সামনে অপেক্ষা করছেন দুবাই প্রবাসী রনি। ঠুনকো ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশীর হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। পরে ফোন দিয়েছিলেন ৯৯৯ এ। পুলিশ ঘটনা স্থলে গেলেও অপরাধী আটক না করেই ফিরে আসেন। এখন দিচ্ছে হুমকি ।
দুবাই প্রবাসী রনি বলেন, ‘দেখছেন তো কীভাবে আমাকে কুপিয়েছে। হুমকি দিচ্ছে। ৯৯৯ কলে দিয়েছি। তিনবার আমার পুলিশ চেঞ্জ করে দিয়েছে একটা অফিসারও যায় না।’
অনেকে ৯৯৯ এ কল না দিয়েই সরাসরি চলে এসেছেন থানায়।
একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে হুমকি দিয়েছে মেরে ফেলবে যার জন্য থানায় আসা।’
৯৯৯ সেবা নিয়ে প্রশ্ন করায় কিছুটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা পুলিশের।
পুলিশ সদস্য বলেন, ‘কল আসার পরে আমরা রিসিভ করে নাগরিকের সাথে কথা বলে তার ঠিকানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় যে অফিসার ডিউটিতে থাকে তাকে জানায় দেয়া হয়।’
ভীতির কারণ কী? এই প্রশ্নের উত্তর এখন সবার জানা। নাম না প্রকাশ করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরতে থাকা কয়েকটি ভিডিও দেখিয়ে জানালেন কারণ।
অনেকটা খোলামেলা ভাবেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পুলিশের উপর হামলার কথা জানালেন। দায় চাপালেন উচ্ছৃঙ্খল জনতার ঘাড়ে। বললেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কারো অভিযান চালানোর সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের উপর আক্রমণ হচ্ছে। এইগুলোর ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করতে হবে। উচ্ছৃঙ্খল জনতার কারণে সমস্যা হয়।’
জাতীয় ইমার্জেন্সি সার্ভিসের অফিস ঘুরে জানা গেলো এখন পর্যন্ত ৬ কোটি বেশি কল এসেছে ৯৯৯ এ। যার মধ্যে ২০ লাখ ৫৯ হাজার মানুষ সেবা পেয়েছে।
জরুরি সেবাপ্রার্থী কলের মধ্যে ৮৩ শতাংশ পুলিশের সহায়তা চেয়েছে, এছাড়া ৮ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস ও ৯ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা চেয়ে কল করেছে। অবান্তর কলের সংখ্যাও কম নয়।
জাতীয় ইমার্জেন্সি সার্ভিসের একজন সদস্য বলেন, ‘সামান্য কথা-কাটাকাটি ও মারামারি দেখে তারা কল করছে। এইটাকে তারা বড় ঘটনা ভাবছে।’
আরেকজন বলেন, ‘এখন বর্তমান সময়ে ছিনতাই, ডাকাতি, মারামারি হচ্ছে। এইসব কলই বেশি আসছে।’
পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি হলেই সেবা নিশ্চিত হবে সাধারণ মানুষের বলছে বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘৯৯৯ কলে করে যারা সেবা দিচ্ছে ও যেসব পুলিশ দায়িত্বে আছে তাদের সাথে কানেক্ট করে দেয়া। এই সেবাতে যদি তারা দায়িত্বে অবহেলা করে বা দেরি করে সেখানে উপস্থিত হয়, আবার যে অভিযুক্ত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এছাড়া যে ভিক্টিম তাকে সেবা দেয়ার জন্য যেখানে পাঠানো দরকার সেখানে পাঠাচ্ছে না। এইসব যখন থাকে না তখন নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।’
আইনের শাসন নিশ্চিত না হলে দেশের শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হবে বলেও মনে করেন সাধারণ মানুষ।