মার্কিন সহায়তা ছাড়াই ন্যাটো টিকে থাকতে পারবে

- আপডেট সময় : ০২:৩৭:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
- / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ন্যাটো টিকে থাকতে পারবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। বিশেষ করে ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগযুদ্ধের পর ইউরোপীয় নেতাদের একজোট হওয়া বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এদিকে, ন্যাটো থেকে ট্রাম্পের সরে আসার হুমকি জোটের ভবিষ্যতকে আরো অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন সহায়তা ছাড়াই ন্যাটো টিকে থাকতে পারবে।
১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন থেকে ইউরোপকে নিরাপত্তা গড়ে উঠে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো। মূলত আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ে অবস্থিত উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের ৩২টি দেশ এই জোটের সদস্য। জোটভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক সংস্থা।
দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতায় এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ন্যাটো দেশগুলো প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে জোটে পর্যাপ্ত অর্থ প্রদান করছে না। তিনি বলেন, এমনটা চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে না। সম্প্রতি ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বাগবিতণ্ডার পর দেশটিতে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘বাকি সদস্য দেশগুলো পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়াবে না। অনেকেই বলছে এতে ন্যাটোর নিয়ম লঙ্ঘন হবে। তবে আমি তাদের ভালো করে চিনি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু। তবে ন্যাটোর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো সমস্যায় পড়লে তারা কখনোই এগিয়ে আসবে না।’
ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় নতুন এক বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়েছে ইউরোপ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৭৬ বছর ধরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে জোটটি। তবে এখন তা আর নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রকাশ্য বিদ্বেষ ও রাশিয়ার সঙ্গে আলিঙ্গন জোটকে আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ, সামরিক এই জোটে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সবচেয়ে বেশি প্রায় ১৬ শতাংশ।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ন্যাটো অক্ষম নয়। জোটের বাকি দেশগুলোর দশ লাখের বেশি সেনা ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। নিজেদের রক্ষায় ইউরোপের যথেষ্ট সম্পদ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে। তবে এই মুহূর্তে ইউরোপীয়দের একজোট থাকতে হবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ডেভিড ব্লাগডেন বলেন, ‘ইউরোপীয়রা কৌশলগতভাবে নিজেদের স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জোটে চাঁদার পরিমাণ বাড়ালে নিজস্ব প্রতিরক্ষায় আরও বেশি ব্যয় করতে পারবে। এতে মার্কিন নির্ভরতা কমবে। তবে ইউরোপীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ও দ্বিধা মূলত বহু দশক ধরে তাদের এক হতে দিচ্ছে না। এখন তাদের বেছে নিতে হবে তারা অন্যান্য অর্থনৈতিক খাত নাকি সামরিক খাতে বেশি ব্যয় করবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্র না থাকলে তাদের অভাব পূরণে ইউরোপের খুব বেশি সময় লাগবে না। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে জয়লাভেও ইউরোপ সক্ষম। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের মিত্রের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে।
সামরিক জোট ন্যাটো তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে বলে ধারণা অনেকের। তবে সম্প্রতি নানা হুমকিতে জোটটির পথচলায় কিছুটা বাধা আসতে পারে।