দিন দিন সংঘাত বেড়েই চলেছে সিরিয়ায়। মহিলাদের উপর নৃশংস অত্যাচার এবং হত্যার অভিযোগ উঠছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে। সংবাদ সংস্থা এপি একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, সিরিয়ায় মহিলাদের রাস্তা দিয়ে নগ্ন হয়ে হাঁটতে বাধ্য করা হচ্ছে। তার পর সেই অবস্থাতেই তাঁদের গুলি করছে সশস্ত্র বাহিনী। রাস্তায় জমছে লাশের পাহাড়।
প্রায় দেড় দশকের গৃহযুদ্ধের পর গত ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী দামাস্কাস দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী। তার পর সিরিয়ায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এখনও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আসাদ রাশিয়ায় চলে গিয়েছেন। কিন্তু সিরিয়ার সেই অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা অফিসিয়ালদের সঙ্গে তাঁর অনুগামীদের সংঘাত চলছে। গত দু’দিন ধরে সেই সংঘাত প্রবল আকার নিয়েছে। দু’দিনে মৃত্যু হয়েছে হাজারের বেশি মানুষের। অধিকাংশই সিরিয়ার সাধারণ নাগরিক। তাঁদের মধ্যে মহিলা এবং শিশুরাও রয়েছেন।
আসাদের অনুগামীরা সিরিয়ায় প্রত্যাঘাত হেনেছেন বলে অভিযোগ। সরকারি অফিসিয়াল এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘লক্ষ্য’ করে হামলা চালাচ্ছেন তাঁরা। আবার ‘প্রতিশোধ-হত্যা’র শিকারও হচ্ছেন। সিরিয়ার আলওয়াইট নামের সংখ্যালঘু শ্রেণি আসাদের অনুগত। অভিযোগ, বেছে বেছে তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের নিযুক্ত বাহিনী। তারাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের উপর অত্যাচার করছে বলে অভিযোগ।
সিরিয়ার এই সংঘাতের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বৃহস্পতিবার। সেদিন রাতে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে বর্তমান সরকারের সমর্থক গুণ্ডাদের এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি অনুগত আলওয়াইট জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। জাবলেহ্ শহরে এক অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চালিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে তাদের বাধা দেন আসাদ-অনুগামীরা। ক্রমে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে।
ব্রিটেনে অবস্থিত সিরিয়ার পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে এখনও পর্যন্ত সিরিয়ায় ৭৪৫ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও নিহতদের তালিকায় আছেন সিরিয়ায় ১২৫ জন সরকারি ও নিরাপত্তা আধিকারিক এবং আসাদের অন্তত ১৪৮ জন অনুগামী। অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, দেশের বেশির ভাগ অংশেই নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে পৌঁছোনোর রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নতুন একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতায় ১,০০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাধারণ নাগরিক এবং সিরিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। শনিবার সিরিয়ান নিরাপত্তা বাহিনী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনে।
আক্রান্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দারা এপি’কে জানান যে, রাস্তা এবং ছাদের উপরে বেশ কিছু লাশ পড়ে ছিল, যা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সৎকার করা হয়নি। শনিবার মৃতদের জন্য গণকবর এবং সমাধি প্রক্রিয়া শুরু হয় যখন সহিংসতা থেমে যায়।
আলওয়াইট গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে অনেক বাড়িঘর লুট করা হয়েছে এবং তারপর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যেখানে মানুষ তাদের পরিবারের এবং বাড়ির ক্ষতি নিয়ে শোক পালন করছিল।
এছাড়া সাক্ষীদের মতে, মহিলাদের নগ্নভাবে রাস্তায় প্রদর্শন করা হয় এবং তারপর গুলি করে হত্যা করা হয়, সহিংসতার এই ভয়াবহ দৃশ্য ছিল খুবই ভয়াবহ ও লজ্জার।
আসাদ ক্ষমতাসীন থাকাকালীন আলওয়াইট সম্প্রদায়ের সদস্যেরা সরকারের উচ্চপদে আসীন ছিলেন। সিরিয়ার সামরিক বাহিনীতেও তাঁদের জায়গা ছিল পাকা। কিন্তু আসাদ দেশ ছাড়ার পর এই সম্প্রদায় সিরিয়া জুড়ে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ। নানা সময়ে নানা ভাবে তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। ব্রিটিশ পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, রাস্তার উপর যাঁদের দেহ পড়ে আছে, তাঁদের খুব কাছ থেকে আঘাত করা হয়েছে, যা ‘প্রতিশোধ-হত্যা’র অন্যতম নির্দেশক। প্রাণ বাঁচাতে আলওয়াইট শ্রেণির অনেকে লেবাননে পালিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস ও এপি