ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাকিস্তানে ট্রেন থেকে ১০৪ জন উদ্ধার, নিহত ১৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:১৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একটি ট্রেনের যাত্রীদের জিম্মির ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এরই মধ্যে অন্তত ১০৪ জন উদ্ধার হয়েছেন। আর সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্তত ১৬ সদস্য নিহত হয়েছে।

নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে এ তথ্য দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম জিও টিভি। এতে বলা হয়েছে, জিম্মি হওয়া যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ঘটনাটি ঘটেছে বোলান অঞ্চলের পেরু কানরি এলাকায়।

অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলেও দাবি করেছে নিরাপত্তা সূত্র। এ ঘটনায় আহত যাত্রীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। বন্দুকধারীরা ট্রেনে ওঠার আগে রেললাইনে বোমা হামলা চালায় বলে জানানো হয়েছে এক বিবৃতিতে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জঙ্গিরা দ্রুত ট্রেনটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সব যাত্রীকে জিম্মি করে।’

জিও নিউজ বলছে, হামলার পেছনে সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে তাদের মাস্টারমাইন্ডের সাথে যোগাযোগ করছে এবং নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখানে বেসামরিক লোকদের উপস্থিতির কারণে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অভিযান চালানো হচ্ছে।

নিরাপত্তা সূত্রগুলো বিশদভাবে জানিয়েছে, এলাকাটি দুর্গম অঞ্চলে হওয়ায় অভিযানটি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ট্রেনটির যাত্রীদের জিম্মি করা হয়েছে সেখানে একটি টানেল রয়েছে এবং এটি আফগান সীমান্তের কাছে অবস্থিত।

মঙ্গলবার বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশোয়ারে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় জাফফার এক্সপ্রেসটি। ওই সময় বেশ কিছু জঙ্গি রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলি ছুড়ে ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। ট্রেনটির ৯টি বগিতে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন যাত্রী ছিল।

এদিকে ট্রেনে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। তিনি বলেছেন, ‘নিরপরাধ যাত্রীদের ওপর যেসব পশু হামলা চালিয়েছে’, তাদের কোনো ছাড় দেবে না সরকার।

বালুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে অস্থির প্রদেশ। ১৯৪৮ সাল থেকে এখানে বালুচ এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। বালুচিস্তানের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতার দাবি করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলে চিনের হস্তক্ষেপ বেড়েছে। চীন এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে কাজ করছে, যার কারণে এটি ক্রমাগত আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে।

BLA দাবি করে, তাদের পাকিস্তান থেকে আলাদা করা উচিত। BLA-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো, বালুচিস্তানে পাকিস্তান সরকার বা নিরাপত্তা সংস্থার কোনও প্রতিনিধি থাকা উচিত নয়। এছাড়াও, বালুচরা বিশ্বাস করেন , চীনের সঙ্গে সিপিইসি প্রকল্প চলছে। প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের খনিজ সম্পদ শোষণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলির কারণে বিপুল সংখ্যক সম্প্রদায়ের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারপর থেকে বালুচ জনগণ বহু বছর ধরে এখান থেকে এই প্রকল্পগুলি অপসারণের দাবি করে আসছে। এটি পাকিস্তানের উপর বিএলএ-এর নতুন আক্রমণ নয়, বিএলএ গত বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের উপর এই ধরনের আক্রমণ চালিয়ে আসছে। কখনও এটি চিনা প্রযুক্তিবিদদের লক্ষ্য করে, আবার কখনও পাকিস্তানি কূটনীতিকদের লক্ষ্য করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

পাকিস্তানে ট্রেন থেকে ১০৪ জন উদ্ধার, নিহত ১৬

আপডেট সময় : ১১:১৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একটি ট্রেনের যাত্রীদের জিম্মির ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এরই মধ্যে অন্তত ১০৪ জন উদ্ধার হয়েছেন। আর সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্তত ১৬ সদস্য নিহত হয়েছে।

নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে এ তথ্য দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম জিও টিভি। এতে বলা হয়েছে, জিম্মি হওয়া যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ঘটনাটি ঘটেছে বোলান অঞ্চলের পেরু কানরি এলাকায়।

অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলেও দাবি করেছে নিরাপত্তা সূত্র। এ ঘটনায় আহত যাত্রীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। বন্দুকধারীরা ট্রেনে ওঠার আগে রেললাইনে বোমা হামলা চালায় বলে জানানো হয়েছে এক বিবৃতিতে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জঙ্গিরা দ্রুত ট্রেনটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সব যাত্রীকে জিম্মি করে।’

জিও নিউজ বলছে, হামলার পেছনে সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে তাদের মাস্টারমাইন্ডের সাথে যোগাযোগ করছে এবং নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখানে বেসামরিক লোকদের উপস্থিতির কারণে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অভিযান চালানো হচ্ছে।

নিরাপত্তা সূত্রগুলো বিশদভাবে জানিয়েছে, এলাকাটি দুর্গম অঞ্চলে হওয়ায় অভিযানটি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ট্রেনটির যাত্রীদের জিম্মি করা হয়েছে সেখানে একটি টানেল রয়েছে এবং এটি আফগান সীমান্তের কাছে অবস্থিত।

মঙ্গলবার বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশোয়ারে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় জাফফার এক্সপ্রেসটি। ওই সময় বেশ কিছু জঙ্গি রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলি ছুড়ে ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। ট্রেনটির ৯টি বগিতে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন যাত্রী ছিল।

এদিকে ট্রেনে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। তিনি বলেছেন, ‘নিরপরাধ যাত্রীদের ওপর যেসব পশু হামলা চালিয়েছে’, তাদের কোনো ছাড় দেবে না সরকার।

বালুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে অস্থির প্রদেশ। ১৯৪৮ সাল থেকে এখানে বালুচ এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। বালুচিস্তানের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতার দাবি করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলে চিনের হস্তক্ষেপ বেড়েছে। চীন এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে কাজ করছে, যার কারণে এটি ক্রমাগত আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে।

BLA দাবি করে, তাদের পাকিস্তান থেকে আলাদা করা উচিত। BLA-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো, বালুচিস্তানে পাকিস্তান সরকার বা নিরাপত্তা সংস্থার কোনও প্রতিনিধি থাকা উচিত নয়। এছাড়াও, বালুচরা বিশ্বাস করেন , চীনের সঙ্গে সিপিইসি প্রকল্প চলছে। প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের খনিজ সম্পদ শোষণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলির কারণে বিপুল সংখ্যক সম্প্রদায়ের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারপর থেকে বালুচ জনগণ বহু বছর ধরে এখান থেকে এই প্রকল্পগুলি অপসারণের দাবি করে আসছে। এটি পাকিস্তানের উপর বিএলএ-এর নতুন আক্রমণ নয়, বিএলএ গত বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের উপর এই ধরনের আক্রমণ চালিয়ে আসছে। কখনও এটি চিনা প্রযুক্তিবিদদের লক্ষ্য করে, আবার কখনও পাকিস্তানি কূটনীতিকদের লক্ষ্য করে।