ঢাকা ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নেপালের শেষ রাজার অজানা ইতিহাস

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:১১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নেপালের শেষ রাজা৷ রাজপাটের সাথে সাথে রাজার ক্ষমতাও গেছে৷ তবে এই গত রবিবারেই দীর্ঘ কয়েক দশকের অপেক্ষার শেষে কাঠমাণ্ডুর ‘রাজপথে’ পা রেখেছেন তিনি৷ আর তিনি কাঠমাণ্ডুতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নেপাল ‘প্রজা’দের একাংশ রব তুলেছেন, “আমরা আমাদের রাজাকে ফিরিয়ে আনতে চাই৷”

জ্ঞানেন্দ্র শাহ৷ বছর ৭৭৷ ২০০৮ সালে সিংহাসন চ্যূত হওয়ার পরে এই ফিরলেন নিজের শহরে৷ সে সময় নিজের রাজপ্রাসাদটাকেও ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে৷ কিন্তু, জানেন কি নেপালের রাজার এই ইতিহাস৷ বর্তমানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কত? অদূর ভবিষ্যতে তিনি কি সত্যিই নেপালে ফের ক্ষমতায় ফিরছেন? রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছেন?

জ্ঞানেন্দ্রর বড় ভাই বীর বিক্রম শাহ তাঁর পরিবারকে রাজপ্রাসাদে গুলি করে খুন করার পরে ২০০২ সালে জ্ঞানেন্দ্র শাহই নেপালের রাজা হিসাবে অভিষিক্ত হন৷ ২০০৫ সাল পর্যন্ত কার্যত নেপালে একনায়কতন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি৷ তিনি সরকার ও সংসদ ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাদণ্ড দেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং দেশ শাসনের জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেন।

তবে, ২০০৬ সালে রাজপথের বিক্ষোভ জ্ঞানেন্দ্রকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। এরপর জ্ঞানেন্দ্র শাহ একটি বহুদলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন৷ ২০০৮ সালে, নেপালের সংসদ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার পক্ষে ভোট দেয়। জ্ঞানেন্দ্র শাহ পদত্যাগ করেন এবং একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন শুরু করেন। তারপর থেকে তিনি নেপালের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই জীবনযাপন করতেন, কোনও ক্ষমতা বা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ছাড়াই।

২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হলে, ২৮ মে নেপালকে একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই, প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে প্রাসাদটি খালি করতে বলা হয়। প্রাসাদ খালি করার পরে তিনি কিছু সময়ের জন্য নাগার্জুন প্রাসাদে চলে গিয়েছিলেন। আগে রাজপরিবার গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে সেই প্রাসাদে যেত। তারপর থেকে তিনি সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

জ্ঞানেন্দ্রর শৈশব কেটেছে চূড়ান্ত একাকীত্বে৷ যুবরাজ মহেন্দ্রর দ্বিতীয় সন্তান জ্ঞানেন্দ্রর জন্মের সময় রাজ জ্যোতিষী তাঁর বাবাকে জানিয়েছিলেন, এই সন্তানের সঙ্গে বসবাস করলে তিনি তাঁর দুর্ভাগ্য ডেকে আনবে৷ তাই ছোট থেকেই তাঁকে নারায়ণহিটি প্রাসাদে দিদিমার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷

রাজা জ্ঞানেন্দ্র দার্জিলিঙে তাঁর স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করেন৷ দার্জিলিঙের সেন্ট জোসেফ স্কুলে পড়াশোনা, তারপরে কাঠমাণ্ডু থেকে স্নাতক৷

সিংহাসনচ্যুত হওয়ার পরে, জ্ঞানেন্দ্রকে নারায়ণহিটি প্রাসাদ ছেড়ে দিতে হয়। এ ছাড়া, প্রাক্তন রাজা এবং তাঁর ভাই বীরেন্দ্রের কাছ থেকে তিনি যা সম্পত্তি পেয়েছিলেন তাও ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে।

তবে তা সত্ত্বেও নেপালের এই শেষ রাজার সম্পত্তির পরিমাণ বিপুল৷ সারা বিশ্বজুড়েই তাঁর নানা ব্যবসা রয়েছে৷ যার মোট পরিমাণ প্রায় কয়েক মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি৷ ২০০৮ সালে শুধুমাত্র Soaltee Hotel-এ তাঁর বিনিয়োগ ১০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ছিল৷

হিমালয়ান গুডরিক, সূর্য নেপাল টোব্যাকো এবং অন্নপূর্ণা হোটেলের মতো অনেক বড় কোম্পানিতে বড় শেয়ার রয়েছে তাঁর। এছাড়াও, নেপালে তার চা বাগান আছে, মালদ্বীপে তিনি একটি সম্পূর্ণ দ্বীপ কিনেছেন এবং নাইজেরিয়ার একটি তেল কোম্পানিতে তার শেয়ার আছে। এছাড়াও, নেপালে জ্ঞানেন্দ্রর প্রচুর জমি আছে। তিনি মহারাজগঞ্জে একটি ব্যক্তিগত বাসভবন, নির্মল মহল, শাহ ও রানা রাজবংশের অমূল্য উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জিনিসপত্র, মূল্যবান রত্ন এবং শিল্পকর্মের মালিক।

নিউজটি শেয়ার করুন

নেপালের শেষ রাজার অজানা ইতিহাস

আপডেট সময় : ১১:১১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

নেপালের শেষ রাজা৷ রাজপাটের সাথে সাথে রাজার ক্ষমতাও গেছে৷ তবে এই গত রবিবারেই দীর্ঘ কয়েক দশকের অপেক্ষার শেষে কাঠমাণ্ডুর ‘রাজপথে’ পা রেখেছেন তিনি৷ আর তিনি কাঠমাণ্ডুতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নেপাল ‘প্রজা’দের একাংশ রব তুলেছেন, “আমরা আমাদের রাজাকে ফিরিয়ে আনতে চাই৷”

জ্ঞানেন্দ্র শাহ৷ বছর ৭৭৷ ২০০৮ সালে সিংহাসন চ্যূত হওয়ার পরে এই ফিরলেন নিজের শহরে৷ সে সময় নিজের রাজপ্রাসাদটাকেও ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে৷ কিন্তু, জানেন কি নেপালের রাজার এই ইতিহাস৷ বর্তমানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কত? অদূর ভবিষ্যতে তিনি কি সত্যিই নেপালে ফের ক্ষমতায় ফিরছেন? রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছেন?

জ্ঞানেন্দ্রর বড় ভাই বীর বিক্রম শাহ তাঁর পরিবারকে রাজপ্রাসাদে গুলি করে খুন করার পরে ২০০২ সালে জ্ঞানেন্দ্র শাহই নেপালের রাজা হিসাবে অভিষিক্ত হন৷ ২০০৫ সাল পর্যন্ত কার্যত নেপালে একনায়কতন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি৷ তিনি সরকার ও সংসদ ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাদণ্ড দেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং দেশ শাসনের জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেন।

তবে, ২০০৬ সালে রাজপথের বিক্ষোভ জ্ঞানেন্দ্রকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। এরপর জ্ঞানেন্দ্র শাহ একটি বহুদলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন৷ ২০০৮ সালে, নেপালের সংসদ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার পক্ষে ভোট দেয়। জ্ঞানেন্দ্র শাহ পদত্যাগ করেন এবং একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন শুরু করেন। তারপর থেকে তিনি নেপালের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই জীবনযাপন করতেন, কোনও ক্ষমতা বা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ছাড়াই।

২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হলে, ২৮ মে নেপালকে একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই, প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে প্রাসাদটি খালি করতে বলা হয়। প্রাসাদ খালি করার পরে তিনি কিছু সময়ের জন্য নাগার্জুন প্রাসাদে চলে গিয়েছিলেন। আগে রাজপরিবার গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে সেই প্রাসাদে যেত। তারপর থেকে তিনি সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

জ্ঞানেন্দ্রর শৈশব কেটেছে চূড়ান্ত একাকীত্বে৷ যুবরাজ মহেন্দ্রর দ্বিতীয় সন্তান জ্ঞানেন্দ্রর জন্মের সময় রাজ জ্যোতিষী তাঁর বাবাকে জানিয়েছিলেন, এই সন্তানের সঙ্গে বসবাস করলে তিনি তাঁর দুর্ভাগ্য ডেকে আনবে৷ তাই ছোট থেকেই তাঁকে নারায়ণহিটি প্রাসাদে দিদিমার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷

রাজা জ্ঞানেন্দ্র দার্জিলিঙে তাঁর স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করেন৷ দার্জিলিঙের সেন্ট জোসেফ স্কুলে পড়াশোনা, তারপরে কাঠমাণ্ডু থেকে স্নাতক৷

সিংহাসনচ্যুত হওয়ার পরে, জ্ঞানেন্দ্রকে নারায়ণহিটি প্রাসাদ ছেড়ে দিতে হয়। এ ছাড়া, প্রাক্তন রাজা এবং তাঁর ভাই বীরেন্দ্রের কাছ থেকে তিনি যা সম্পত্তি পেয়েছিলেন তাও ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে।

তবে তা সত্ত্বেও নেপালের এই শেষ রাজার সম্পত্তির পরিমাণ বিপুল৷ সারা বিশ্বজুড়েই তাঁর নানা ব্যবসা রয়েছে৷ যার মোট পরিমাণ প্রায় কয়েক মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি৷ ২০০৮ সালে শুধুমাত্র Soaltee Hotel-এ তাঁর বিনিয়োগ ১০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ছিল৷

হিমালয়ান গুডরিক, সূর্য নেপাল টোব্যাকো এবং অন্নপূর্ণা হোটেলের মতো অনেক বড় কোম্পানিতে বড় শেয়ার রয়েছে তাঁর। এছাড়াও, নেপালে তার চা বাগান আছে, মালদ্বীপে তিনি একটি সম্পূর্ণ দ্বীপ কিনেছেন এবং নাইজেরিয়ার একটি তেল কোম্পানিতে তার শেয়ার আছে। এছাড়াও, নেপালে জ্ঞানেন্দ্রর প্রচুর জমি আছে। তিনি মহারাজগঞ্জে একটি ব্যক্তিগত বাসভবন, নির্মল মহল, শাহ ও রানা রাজবংশের অমূল্য উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জিনিসপত্র, মূল্যবান রত্ন এবং শিল্পকর্মের মালিক।