ঢাকা ০৯:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ইমরান খানের জনপ্রিয়তা সরকারের জন্য বড় হুমকি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:০৮:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফ সরকারের টিকে থাকার পথে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ কারণে ইমরান খানের বিচার থেকে শুরু করে শুনানির দিন পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত আসছে সরকারের তরফ থেকে। যদিও শেহবাজ শরিফের সমর্থকদের দাবি, ইমরানের শুনানি কেন্দ্র করে দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয় তা নিয়ন্ত্রণে আনতেই আদালত তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।

চলতি সপ্তাহে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের তথ্য উপদেষ্টা অভিযোগ করেন তাদের নেতা ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে আদিয়ালা জেলের ডেথ সেলে। মূলত উগ্র জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত অপরাধীদের এ ধরনের নির্জন কারাবাসে পাঠানো হয়। অথচ ইমরান খানের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগই ছিল না।

এ অভিযোগের পর রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসেন পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সের চিকিৎসক দল। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইমরান খানের ব্যক্তিগত আইনজীবী।

দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, গেল ফেব্রুয়ারির ১৬ ও ১৭ তারিখে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা যে দু’টি মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে মার্চের ১১ ও ১২ তারিখ নেয়া হয়েছে। অথচ এর আগে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন দুর্নীতি ও তোশাখানা মামলার শুনানিতে হাজির হতে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তগুলো আসছে ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে। যদিও তা মানতে নারাজ শেহবাজ সরকারের সমর্থকগোষ্ঠী।

ইমরান খানের সমর্থকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘সব কিছু পর্যালোচনার পর মনে হচ্ছে, পিটিআই সমর্থক ও নেতাকর্মীরা ইমরান খানের সাথে ঘনঘন দেখা করুক, ক্ষমতাসীনরা এটা চায় না। মামলার শুনানি থাকলে এই যোগাযোগটা বেশি হয়। সহকর্মীদের সাথে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেখা যায় এই বিশেষ সময়েই ইমরান খানও নানা বক্তব্য-বিবৃতি দেন।’

ভূমি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় গেল ১৭ জানুয়ারি ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। স্ত্রী বুশরা বিবিকে দেয়া হয় সাত বছরের জেল। এর আগে, ২০২৩ এর জানুয়ারিতে গোপন নথি ফাঁস বা সাইফার মামলায় ১০ বছরের সাজা দেয়া হয় ইমরান খান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশিকে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা অন্তত ১৮৮টি। ২০২৫ এর জানুয়ারিতে এসে মামলার সংখ্যা ২শ’র কাছাকাছি। এরমধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশে তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৯৯টি মামলা। আর রাজধানীতে ইমরানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৭৬।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেট কিংবদন্তির বিরুদ্ধে আনা গুরুতর অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ১৯ কোটি পাউন্ডের আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা। সেখানে বলা হয়, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় টাউন লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি থেকে কয়েক কোটি রুপি এবং জমি নিয়েছিলেন ইমরান খান। রয়টার্সের তথ্য বলছে, ইমরানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার যুক্তরাজ্য থেকে যে পাঁচ হাজার কোটি রুপি ফেরত পেয়েছিল, তা বৈধ করতে এসব লেনদেন করা হয়েছে। এই মামলায় ২০২৩ সালের মে মাসে ইমরানকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

ঐ একই বছর তোশাখানা মামলায় ফেঁসে যান ইমরান। অভিযোগ ওঠে ১৪ কোটি রুপি সমমূল্যের সরকারি উপহার বিক্রি করে সেই অর্থ আত্মসাৎ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ২০২৩ এর মে মাসে ইমরান খানকে আটকের পর দেশজুড়ে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে সেখানেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের পাঠানো গোপন বার্তা ফাঁস করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন ইমরান।

২০১৮ সালে অভিযোগ ওঠে, বিবাহ বিচ্ছেদের পর নির্ধারিত সময়ের আগে বুশরা বিবিকে বিয়ে করেন ইমরান। যা ইসলামিক আইন পরিপন্থি। যদিও এই মামলা থেকে ইমরান ও তার স্ত্রী মুক্তি পেয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ইমরান খানের জনপ্রিয়তা সরকারের জন্য বড় হুমকি!

আপডেট সময় : ০৬:০৮:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফ সরকারের টিকে থাকার পথে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ কারণে ইমরান খানের বিচার থেকে শুরু করে শুনানির দিন পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত আসছে সরকারের তরফ থেকে। যদিও শেহবাজ শরিফের সমর্থকদের দাবি, ইমরানের শুনানি কেন্দ্র করে দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয় তা নিয়ন্ত্রণে আনতেই আদালত তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।

চলতি সপ্তাহে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের তথ্য উপদেষ্টা অভিযোগ করেন তাদের নেতা ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে আদিয়ালা জেলের ডেথ সেলে। মূলত উগ্র জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত অপরাধীদের এ ধরনের নির্জন কারাবাসে পাঠানো হয়। অথচ ইমরান খানের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগই ছিল না।

এ অভিযোগের পর রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসেন পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সের চিকিৎসক দল। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইমরান খানের ব্যক্তিগত আইনজীবী।

দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, গেল ফেব্রুয়ারির ১৬ ও ১৭ তারিখে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা যে দু’টি মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে মার্চের ১১ ও ১২ তারিখ নেয়া হয়েছে। অথচ এর আগে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন দুর্নীতি ও তোশাখানা মামলার শুনানিতে হাজির হতে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তগুলো আসছে ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে। যদিও তা মানতে নারাজ শেহবাজ সরকারের সমর্থকগোষ্ঠী।

ইমরান খানের সমর্থকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘সব কিছু পর্যালোচনার পর মনে হচ্ছে, পিটিআই সমর্থক ও নেতাকর্মীরা ইমরান খানের সাথে ঘনঘন দেখা করুক, ক্ষমতাসীনরা এটা চায় না। মামলার শুনানি থাকলে এই যোগাযোগটা বেশি হয়। সহকর্মীদের সাথে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেখা যায় এই বিশেষ সময়েই ইমরান খানও নানা বক্তব্য-বিবৃতি দেন।’

ভূমি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় গেল ১৭ জানুয়ারি ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। স্ত্রী বুশরা বিবিকে দেয়া হয় সাত বছরের জেল। এর আগে, ২০২৩ এর জানুয়ারিতে গোপন নথি ফাঁস বা সাইফার মামলায় ১০ বছরের সাজা দেয়া হয় ইমরান খান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশিকে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা অন্তত ১৮৮টি। ২০২৫ এর জানুয়ারিতে এসে মামলার সংখ্যা ২শ’র কাছাকাছি। এরমধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশে তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৯৯টি মামলা। আর রাজধানীতে ইমরানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৭৬।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেট কিংবদন্তির বিরুদ্ধে আনা গুরুতর অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ১৯ কোটি পাউন্ডের আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা। সেখানে বলা হয়, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় টাউন লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি থেকে কয়েক কোটি রুপি এবং জমি নিয়েছিলেন ইমরান খান। রয়টার্সের তথ্য বলছে, ইমরানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার যুক্তরাজ্য থেকে যে পাঁচ হাজার কোটি রুপি ফেরত পেয়েছিল, তা বৈধ করতে এসব লেনদেন করা হয়েছে। এই মামলায় ২০২৩ সালের মে মাসে ইমরানকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

ঐ একই বছর তোশাখানা মামলায় ফেঁসে যান ইমরান। অভিযোগ ওঠে ১৪ কোটি রুপি সমমূল্যের সরকারি উপহার বিক্রি করে সেই অর্থ আত্মসাৎ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ২০২৩ এর মে মাসে ইমরান খানকে আটকের পর দেশজুড়ে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে সেখানেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের পাঠানো গোপন বার্তা ফাঁস করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন ইমরান।

২০১৮ সালে অভিযোগ ওঠে, বিবাহ বিচ্ছেদের পর নির্ধারিত সময়ের আগে বুশরা বিবিকে বিয়ে করেন ইমরান। যা ইসলামিক আইন পরিপন্থি। যদিও এই মামলা থেকে ইমরান ও তার স্ত্রী মুক্তি পেয়েছেন।