ঢাকা ০১:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মাগুরার নিজ গ্রামেই আছিয়াকে দাফন, এলাকায় শোকের মাতম

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:০০:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দুই দফা জানাজা শেষে নিজ গ্রামেই দাফন করা হলো মাগুরায় নির্যাতিত শিশু আছিয়াকে। শিশুটির গ্রামের বাড়ি শ্রীপুরের সোনাইকুণ্ডীতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে দাফন সম্পন্ন হয়। শিশুটির মৃত্যুকে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় শোকের মাতম। কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি আর কান্নায় তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়। এদিকে শিশু আছিয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আজ (বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় শহরের নোমানী ময়দানে শিশু আছিয়ার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে নেয়া হয় নিজ গ্রামের বাড়ি সোনাইকুণ্ডীতে নেয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় দফায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এশার নামাজের পর শ্রীপুরের সোনাইকুণ্ডীতে তাকে দাফন করা হয়।

প্রথম জানাজায় বক্তব্য দেন— জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হেফাজত নেতা মামুনুল হক, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন ও মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম। এ সময় শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন।

এর আগে শিশুটির মরদেহ দাফনের জন্য ঢাকা থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে নিজ জেলায় নেয়া হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার মাগুরায় পোঁছায়।

বিকেলে সিএমএইচ থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে নেয়া হয়। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় হেলিকপ্টারে করে মাগুরায় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় শিশুটির মরদেহ।

সন্ধ্যায় সোয়া ৬টায় মরদেহবাহী হেলিকপ্টার মাগুরায় পৌঁছায়। সন্ধ্যায় প্রায় একই সময়ে আলাদা একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। এরপর সেখান থেকে শিশুটির মরদেহ জেলার নোমানী ময়দানে নেয়া হয়। এই ময়দানে পৌনে ৭টার দিকে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ দাফনের জন্য নিজ গ্রামে নেয়া হয়।

শিশু আছিয়ার মরদেহ এলাকায় পৌঁছেছে শুনে এলাকায় শোকের মাতম নামে। কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির স্বজন-প্রতিবেশীরা। বিকেল থেকেই তার বাড়িতে জড়ো হন আতীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ এলাকাবাসী। মাগুরার বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসেন শিশুটির বাড়িতে। ছেলে-বুড়ো সবার মুখে একটাই দাবি- ধর্ষকের ফাঁসি চাই, ফাঁসি।

মরদেহের সঙ্গে হেলিকপ্টারে শিশুটির মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় যান। বিমান থেকে নামার পর উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘এটা রাষ্ট্র বা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখছে। কারণ এত ছোট্ট বাচ্চা একটা মেয়ের ধর্ষিত হওয়া মেনে নেয়া যায় না, এটা কারও জন্য মেনে নেয়া যায় না। শিশুটি আমাদেরই মেয়ে, আমরা সেভাবেই দেখছি।’

এদিকে শিশু আছিয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। রাত পৌনে ৮টার দিকে বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী জানান, আসামিদের রিমান্ড চলছে। আসামিরা শিশুটির বড় বোনের শ্বশুর মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামের হিটু শেখ (৪২), দুলাভাই সজীব শেখ (২২), তার বড় ভাই রাতুল শেখ ও রাতুলের মা জায়েদা খাতুন এখন পুলিশ হেফাজতে।

আজ দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাগুরায় নির্যাতিত শিশু। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিত শিশুটির বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। রমজান ও ঈদের ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকায় কয়েক দিন আগে বড় বোনের বাড়ি মাগুরা শহরে বেড়াতে আসে। সেখানেই বড় বোনের শ্বশুরের লালসার শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি।

নিউজটি শেয়ার করুন

মাগুরার নিজ গ্রামেই আছিয়াকে দাফন, এলাকায় শোকের মাতম

আপডেট সময় : ১০:০০:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

দুই দফা জানাজা শেষে নিজ গ্রামেই দাফন করা হলো মাগুরায় নির্যাতিত শিশু আছিয়াকে। শিশুটির গ্রামের বাড়ি শ্রীপুরের সোনাইকুণ্ডীতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে দাফন সম্পন্ন হয়। শিশুটির মৃত্যুকে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় শোকের মাতম। কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি আর কান্নায় তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়। এদিকে শিশু আছিয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আজ (বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় শহরের নোমানী ময়দানে শিশু আছিয়ার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে নেয়া হয় নিজ গ্রামের বাড়ি সোনাইকুণ্ডীতে নেয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় দফায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এশার নামাজের পর শ্রীপুরের সোনাইকুণ্ডীতে তাকে দাফন করা হয়।

প্রথম জানাজায় বক্তব্য দেন— জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হেফাজত নেতা মামুনুল হক, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন ও মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম। এ সময় শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন।

এর আগে শিশুটির মরদেহ দাফনের জন্য ঢাকা থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে নিজ জেলায় নেয়া হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার মাগুরায় পোঁছায়।

বিকেলে সিএমএইচ থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে নেয়া হয়। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় হেলিকপ্টারে করে মাগুরায় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় শিশুটির মরদেহ।

সন্ধ্যায় সোয়া ৬টায় মরদেহবাহী হেলিকপ্টার মাগুরায় পৌঁছায়। সন্ধ্যায় প্রায় একই সময়ে আলাদা একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। এরপর সেখান থেকে শিশুটির মরদেহ জেলার নোমানী ময়দানে নেয়া হয়। এই ময়দানে পৌনে ৭টার দিকে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ দাফনের জন্য নিজ গ্রামে নেয়া হয়।

শিশু আছিয়ার মরদেহ এলাকায় পৌঁছেছে শুনে এলাকায় শোকের মাতম নামে। কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির স্বজন-প্রতিবেশীরা। বিকেল থেকেই তার বাড়িতে জড়ো হন আতীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ এলাকাবাসী। মাগুরার বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসেন শিশুটির বাড়িতে। ছেলে-বুড়ো সবার মুখে একটাই দাবি- ধর্ষকের ফাঁসি চাই, ফাঁসি।

মরদেহের সঙ্গে হেলিকপ্টারে শিশুটির মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় যান। বিমান থেকে নামার পর উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘এটা রাষ্ট্র বা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখছে। কারণ এত ছোট্ট বাচ্চা একটা মেয়ের ধর্ষিত হওয়া মেনে নেয়া যায় না, এটা কারও জন্য মেনে নেয়া যায় না। শিশুটি আমাদেরই মেয়ে, আমরা সেভাবেই দেখছি।’

এদিকে শিশু আছিয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। রাত পৌনে ৮টার দিকে বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী জানান, আসামিদের রিমান্ড চলছে। আসামিরা শিশুটির বড় বোনের শ্বশুর মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামের হিটু শেখ (৪২), দুলাভাই সজীব শেখ (২২), তার বড় ভাই রাতুল শেখ ও রাতুলের মা জায়েদা খাতুন এখন পুলিশ হেফাজতে।

আজ দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাগুরায় নির্যাতিত শিশু। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিত শিশুটির বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। রমজান ও ঈদের ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকায় কয়েক দিন আগে বড় বোনের বাড়ি মাগুরা শহরে বেড়াতে আসে। সেখানেই বড় বোনের শ্বশুরের লালসার শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি।