ঢাকা ০৭:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন বিতর্কের সমাধান কি গণভোট?

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:১৭:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবি সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়নে গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন হোক একইসাথে। অন্যদিকে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের মত, শুধুই সংসদ নির্বাচনে। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিতর্কের সমাধান হতে পারে গণভোট।

এই বিতর্কের সমাধান কি? নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের পর থেকেই আলোচনার তুঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচন। যেটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে শুরু থেকেই দুই মেরুতে অবস্থান বিএনপি ও এনসিপির।

এমন বিতর্কের স্থায়ী সমাধানে ইতোমধ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সব সুপারিশ ছক আকারে দেয়া হয়েছে ৩৪টি রাজনৈতিক দলকে। তবে যেহেতু সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত বেশি সেহেতু দেখা যাক সংবিধান সংস্কারে কী প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতির সংযোজন-বিয়োজন, চার বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যসহ কিছু অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির প্রস্তাব আসে। যেখানে রয়েছে ৭ এর ক ও খ, ১৪১ ও ১৫০ অনুচ্ছেদ। এছাড়া আংশিক পরিবর্তন হবে আরও কিছু অনুচ্ছেদ।

যদিও এসব সংস্কারের বেশিরভাগ বিষয়েই একমত দলগুলো। মূল অনৈক্য সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে। জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একসাথে করা সম্ভব। তাতেই কেবল রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল পরিবর্তন হবে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘যেভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সকল দল অংশগ্রহণ করে সেভাবেই গণপরিষদ নির্বাচনেও সকল দল একইভাবে অংশগ্রহণ করবেন। গণপরিষদে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারাই আইনসভায় পরিণত হয়ে যাবেন। তাতে করে আমি স্টেটমেন্ট পাচ্ছি এবং সেই সাথে আমার সংবিধান প্রণয়ন কমিটিও পাচ্ছি।’

তবে বিএনপি বলছে, গণপরিষদ চাওয়ার কোনো ভিত্তি নেই। সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদের প্রয়োজন নেই।

বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে সমস্ত কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে নতুন করে সবকিছু লিখতে হবে বলতে হবে এটার মনে হয় কোনো ভিত্তি নেই। এটার কোনো প্রয়োজন নেই। গণপরিষদ গঠন করার কোনো মৌল ভিত্তি নেই এবং এটা কোনো রাজনৈতিক কারণও নেই।’

বিএনপির সাথে অনেকটা সুর মিলিয়ে জামায়াত বলছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেই সংবিধান সংস্কার করতে পারবে। তার জন্য দরকার নেই গণপরিষদের।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলার উদ্দিন বলেন, ‘৫ আগস্টেই গণরায় হয়ে গেছে যে ৭২ এর সংবিধানের কার্যকারিতা নেই। সেজন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দরকার নেই। জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার করতে পারে। আমাদের দল চাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাহলে জাতির জন্য বেশি উপকার হবে।’

অন্যদিকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর এসব মতকে রাজনৈতিক অজ্ঞতা হিসেবে দেখছেন- এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।

তিনি বলেন, ‘যারা বলছেন যে এটা নির্বাচনকে পেছানোর একটা ষড়যন্ত্র, তারা আরও একটু জেনেশুনে কথা বললে ভালো হয়। কারণ এটা নিজেই একটা জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন দুই ধরনের হয়, একটা গণপরিষদ নির্বাচন আর একটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা দাম্ভিক অজ্ঞতা মনে হয়েছে আমার কাছে। একটা জিনিস আপনি নাই জানতে পারেন। প্রথমত আপনাকে জানার চেষ্টা করতে হবে। তাদের জায়গা থেকে এই অজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই ভালো হতো।’

গণপরিষদ নির্বাচনেও ঝুঁকি দেখছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। বলছেন, গণভোটের মাধ্যমে এই বিতর্কের সমাধান সম্ভব।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রুবী আমাতুল্লা বলেন, ‘গণপরিষদ দিয়ে চলতে পারে, কিন্তু গণপরিষদ মানে হচ্ছে কোনো দলের বিশেষভাবে প্রাধান্য থাকতে পারে। সেই দলটি নিজের স্বার্থের জন্য, তার কর্মকর্তারা সেই সংস্কারগুলোই বাস্তবায়িত করবেন কি না? এর একটা বিরাট ঝুঁকি থাকছে। মৌলিক জিনিসগুলোতে যদি একজায়গায় আসতে পারে তারা একটা চুক্তি করবে। সেই চুক্তিটাই একদম গণভোটে নিয়ে যাওয়া হবে যে জনগণ এই জিনিসগুলোতে তাদের ম্যান্ডেট দিচ্ছে কি না।’

বিতর্ক চলমান থাকলেও সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে নিজেদের লিখিত মতামত এখনও দিতে পারেনি প্রধান দলগুলোর কেউই।

নিউজটি শেয়ার করুন

গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন বিতর্কের সমাধান কি গণভোট?

আপডেট সময় : ০২:১৭:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবি সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়নে গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন হোক একইসাথে। অন্যদিকে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের মত, শুধুই সংসদ নির্বাচনে। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিতর্কের সমাধান হতে পারে গণভোট।

এই বিতর্কের সমাধান কি? নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের পর থেকেই আলোচনার তুঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচন। যেটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে শুরু থেকেই দুই মেরুতে অবস্থান বিএনপি ও এনসিপির।

এমন বিতর্কের স্থায়ী সমাধানে ইতোমধ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সব সুপারিশ ছক আকারে দেয়া হয়েছে ৩৪টি রাজনৈতিক দলকে। তবে যেহেতু সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত বেশি সেহেতু দেখা যাক সংবিধান সংস্কারে কী প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতির সংযোজন-বিয়োজন, চার বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যসহ কিছু অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির প্রস্তাব আসে। যেখানে রয়েছে ৭ এর ক ও খ, ১৪১ ও ১৫০ অনুচ্ছেদ। এছাড়া আংশিক পরিবর্তন হবে আরও কিছু অনুচ্ছেদ।

যদিও এসব সংস্কারের বেশিরভাগ বিষয়েই একমত দলগুলো। মূল অনৈক্য সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে। জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একসাথে করা সম্ভব। তাতেই কেবল রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল পরিবর্তন হবে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘যেভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সকল দল অংশগ্রহণ করে সেভাবেই গণপরিষদ নির্বাচনেও সকল দল একইভাবে অংশগ্রহণ করবেন। গণপরিষদে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারাই আইনসভায় পরিণত হয়ে যাবেন। তাতে করে আমি স্টেটমেন্ট পাচ্ছি এবং সেই সাথে আমার সংবিধান প্রণয়ন কমিটিও পাচ্ছি।’

তবে বিএনপি বলছে, গণপরিষদ চাওয়ার কোনো ভিত্তি নেই। সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদের প্রয়োজন নেই।

বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে সমস্ত কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে নতুন করে সবকিছু লিখতে হবে বলতে হবে এটার মনে হয় কোনো ভিত্তি নেই। এটার কোনো প্রয়োজন নেই। গণপরিষদ গঠন করার কোনো মৌল ভিত্তি নেই এবং এটা কোনো রাজনৈতিক কারণও নেই।’

বিএনপির সাথে অনেকটা সুর মিলিয়ে জামায়াত বলছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেই সংবিধান সংস্কার করতে পারবে। তার জন্য দরকার নেই গণপরিষদের।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলার উদ্দিন বলেন, ‘৫ আগস্টেই গণরায় হয়ে গেছে যে ৭২ এর সংবিধানের কার্যকারিতা নেই। সেজন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দরকার নেই। জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার করতে পারে। আমাদের দল চাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাহলে জাতির জন্য বেশি উপকার হবে।’

অন্যদিকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর এসব মতকে রাজনৈতিক অজ্ঞতা হিসেবে দেখছেন- এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।

তিনি বলেন, ‘যারা বলছেন যে এটা নির্বাচনকে পেছানোর একটা ষড়যন্ত্র, তারা আরও একটু জেনেশুনে কথা বললে ভালো হয়। কারণ এটা নিজেই একটা জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন দুই ধরনের হয়, একটা গণপরিষদ নির্বাচন আর একটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা দাম্ভিক অজ্ঞতা মনে হয়েছে আমার কাছে। একটা জিনিস আপনি নাই জানতে পারেন। প্রথমত আপনাকে জানার চেষ্টা করতে হবে। তাদের জায়গা থেকে এই অজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই ভালো হতো।’

গণপরিষদ নির্বাচনেও ঝুঁকি দেখছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। বলছেন, গণভোটের মাধ্যমে এই বিতর্কের সমাধান সম্ভব।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রুবী আমাতুল্লা বলেন, ‘গণপরিষদ দিয়ে চলতে পারে, কিন্তু গণপরিষদ মানে হচ্ছে কোনো দলের বিশেষভাবে প্রাধান্য থাকতে পারে। সেই দলটি নিজের স্বার্থের জন্য, তার কর্মকর্তারা সেই সংস্কারগুলোই বাস্তবায়িত করবেন কি না? এর একটা বিরাট ঝুঁকি থাকছে। মৌলিক জিনিসগুলোতে যদি একজায়গায় আসতে পারে তারা একটা চুক্তি করবে। সেই চুক্তিটাই একদম গণভোটে নিয়ে যাওয়া হবে যে জনগণ এই জিনিসগুলোতে তাদের ম্যান্ডেট দিচ্ছে কি না।’

বিতর্ক চলমান থাকলেও সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে নিজেদের লিখিত মতামত এখনও দিতে পারেনি প্রধান দলগুলোর কেউই।