ঢাকা ০৪:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আশ্বস্ত নন পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:১৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাশ না করতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও কোনোভাবেই এই প্রস্তাব আশ্বস্ত করতে পারছে না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। এদিকে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকায় পুরো বিষয়টিতে ইউক্রেনসহ গোটা ইউরোপকে উহ্য রেখে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার স্বার্থ দেখা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক কতটা গভীর, তা হয়ত দৃশ্যমান হবে কিছুদিনের মধ্যেই, ইউক্রেনে রাশিয়ার তিন বছরের সেনা অভিযানের ইতি টেনে হয়ত নির্ধারণ করা হবে কিয়েভের ভবিষ্যৎ।

এতোদিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনের নানা দাবি পূরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এবার যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে বিপরীতে নিজের অসংখ্য দাবি তুলে ধরেছেন পুতিন। যা ইউক্রেনের জন্য গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাশ না করে পুতিন চাইছেন, ইউক্রেন যেন ন্যাটোর পথে হাঁটতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে। কোনো সমঝোতায় রাখা হচ্ছে না ইউরোপকে, নেয়া হচ্ছে না তাদের কোনো মতামত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এই যুদ্ধবিরতি কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, সেই বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানায়নি কোন পক্ষই। থিংকট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজ বলছে, সম্মুখসারির ২ হাজার কিলোমিটার এলাকায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি তদারকি করবে কে, জানা নেই কারো। এই দেশে পুতিনের দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকবে অপরিবর্তনীয়। সেক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি শতভাগ কার্যকরে দুই পাশ থেকে সচেষ্ট থাকতে হবে হাজার হাজার মনিটরকে। নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করলে এবারের সংঘাতের তীব্রতা হতে পারে আরও ভয়াবহ। যদিও এখন ড্রোন, আকাশযান, স্যাটেলাইটের কারণে পুরো বিষয়টি তদারকি করা সহজ হবে।

তবে এই প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেনের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে দোদুল্যমান অবস্থায় পড়ে গেছে, তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। যদি কোনোভাবে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প সমঝোতায় আসতে পারেন, পরবর্তী ধাপে ইউক্রেনসহ পশ্চিম ইউরোপকে মুখোমুখি হতে হবে নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার। কারণ ইউরোপকে বাদ দিয়ে সব ধরনের আলোচনা শেষ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউক্রেনের সামরিক খাতে পশ্চিম ইউরোপের কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগও কোন কাজে আসবে না। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের মতো করেই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পুরো বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। যদি ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান ট্রাম্প, এই অর্জন হয়ে যাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার শামিল। পাশাপাশি রুশ অধ্যুষিত কোনো এলাকাই ইউক্রেন আর পুনর্দখল করতে পারবে না। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে অতিরিক্ত সখ্যতা আর যুদ্ধবিরতি নিয়ে এতো চাপ দেয়ায় ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটো সেনা সরিয়ে নিতে বলা হলে প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এমনকি যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে ট্রাম্প – পুতিন কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেই প্রশ্নও ঘুরে ফিরে আসছে বারবার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের ভাগ্য এখন আর জেলেনস্কি, ইউরোপ কিংবা দেশের সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। ওয়াশিংটন আর মস্কো মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবে, কিয়েভকে তাই মেনে নিতে হবে। তবে এই বার্তা স্পষ্ট, রাশিয়ার বিপরীতে ইউক্রেনের পাশে পশ্চিমাদের যেই পিলার এতোদিন দৃশ্যমান ছিল, তা ধীরে ধীরে কর্পূরের মতো উবে যেতে শুরু করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আশ্বস্ত নন পুতিন

আপডেট সময় : ০৯:১৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাশ না করতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও কোনোভাবেই এই প্রস্তাব আশ্বস্ত করতে পারছে না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। এদিকে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকায় পুরো বিষয়টিতে ইউক্রেনসহ গোটা ইউরোপকে উহ্য রেখে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার স্বার্থ দেখা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক কতটা গভীর, তা হয়ত দৃশ্যমান হবে কিছুদিনের মধ্যেই, ইউক্রেনে রাশিয়ার তিন বছরের সেনা অভিযানের ইতি টেনে হয়ত নির্ধারণ করা হবে কিয়েভের ভবিষ্যৎ।

এতোদিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনের নানা দাবি পূরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এবার যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে বিপরীতে নিজের অসংখ্য দাবি তুলে ধরেছেন পুতিন। যা ইউক্রেনের জন্য গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাশ না করে পুতিন চাইছেন, ইউক্রেন যেন ন্যাটোর পথে হাঁটতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে। কোনো সমঝোতায় রাখা হচ্ছে না ইউরোপকে, নেয়া হচ্ছে না তাদের কোনো মতামত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এই যুদ্ধবিরতি কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, সেই বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানায়নি কোন পক্ষই। থিংকট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজ বলছে, সম্মুখসারির ২ হাজার কিলোমিটার এলাকায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি তদারকি করবে কে, জানা নেই কারো। এই দেশে পুতিনের দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকবে অপরিবর্তনীয়। সেক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি শতভাগ কার্যকরে দুই পাশ থেকে সচেষ্ট থাকতে হবে হাজার হাজার মনিটরকে। নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করলে এবারের সংঘাতের তীব্রতা হতে পারে আরও ভয়াবহ। যদিও এখন ড্রোন, আকাশযান, স্যাটেলাইটের কারণে পুরো বিষয়টি তদারকি করা সহজ হবে।

তবে এই প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেনের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে দোদুল্যমান অবস্থায় পড়ে গেছে, তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। যদি কোনোভাবে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প সমঝোতায় আসতে পারেন, পরবর্তী ধাপে ইউক্রেনসহ পশ্চিম ইউরোপকে মুখোমুখি হতে হবে নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার। কারণ ইউরোপকে বাদ দিয়ে সব ধরনের আলোচনা শেষ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউক্রেনের সামরিক খাতে পশ্চিম ইউরোপের কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগও কোন কাজে আসবে না। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের মতো করেই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পুরো বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। যদি ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান ট্রাম্প, এই অর্জন হয়ে যাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার শামিল। পাশাপাশি রুশ অধ্যুষিত কোনো এলাকাই ইউক্রেন আর পুনর্দখল করতে পারবে না। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে অতিরিক্ত সখ্যতা আর যুদ্ধবিরতি নিয়ে এতো চাপ দেয়ায় ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটো সেনা সরিয়ে নিতে বলা হলে প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এমনকি যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে ট্রাম্প – পুতিন কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেই প্রশ্নও ঘুরে ফিরে আসছে বারবার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের ভাগ্য এখন আর জেলেনস্কি, ইউরোপ কিংবা দেশের সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। ওয়াশিংটন আর মস্কো মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবে, কিয়েভকে তাই মেনে নিতে হবে। তবে এই বার্তা স্পষ্ট, রাশিয়ার বিপরীতে ইউক্রেনের পাশে পশ্চিমাদের যেই পিলার এতোদিন দৃশ্যমান ছিল, তা ধীরে ধীরে কর্পূরের মতো উবে যেতে শুরু করেছে।