দখলীকৃত ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেয়া হবে না: জেলেনস্কি

- আপডেট সময় : ০৫:০৬:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
- / ৩৩৯ বার পড়া হয়েছে

ইউক্রেনের যে সব অঞ্চল আপাতত রাশিয়ার দখলে তা কোনোভাবেই মস্কোর হাতে ছেড়ে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার (১৫ মার্চ) ইউরোপের নেতাদের সাথে ভার্চুয়াল সামিটে অংশ নেয়ার পর জেলেনস্কি আরো বলেন, অস্ত্রবিরতি কার্যকরের আগে অঞ্চল ভাগাভাগির আলোচনায় বসবে না কিয়েভ। এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হলে ইউক্রেনের নিরাপত্তার প্রশ্নে জেলেনস্কির পাশে থাকবে ইউরোপ ও পশ্চিমা মিত্রশক্তি।
কিয়েভের রাস্তায় আচমকাই দেখা গেল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনকে। দুই রাষ্ট্রনায়কের হাতে তুরুপের তাস। কার ভাগ্য নিয়ে জুয়া খেলছেন সেও বোঝা দায়।
দৃশ্যটি ইউক্রেনের রাজধানীতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের। শনিবার এভাবেই দূতাবাসের সামনে প্রতীকী বিক্ষোভ করেন ইউক্রেনের বাসিন্দারা। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় রাশিয়াকে একের পর এক ছাড় দেয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চটেছেন এই বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘পুতিন কে যদি থামানো না যায়, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মিত্রদেশগুলো যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমেরিকানদের মূল্যবোধ বোঝেন না। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মতো শব্দ তার অভিধানে নেই।
এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ফোনালাপের পর ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতির কার্যকরে নতুন কিছু শর্ত জুড়ে দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিপরীতে ইউরোপের নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল সামিটের ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
শনিবারের ঐ ভার্চুয়াল সামিটে অংশ নেয় পশ্চিমা ২৬ দেশের প্রতিনিধি। উপস্থিত ছিলেন, ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বৈঠকে ইউরোপের নেতারা মন্তব্য করেন, অস্ত্র বিরতি কার্যকর হলে ইউক্রেনের নিরাপত্তা যেন কোনো ভাবেই বিঘ্নিত না হয়-সে দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রকেও নিতে হবে।
বৈঠকের পর সংবাদ ডাউনিং স্ট্রিটে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইউক্রেনে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হলে দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে নয়া পশ্চিমা জোট। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ ‘কলিশন অব দ্য উইলিং’ নামের এই জোটে থাকবে এশিয়ার দেশ জাপানও। পাশাপাশি আরো জানান, ইউক্রেনের নিরাপত্তা ইস্যুতে বৃহস্পতিবার বৈঠক করবেন ইউরোপের দেশগুলোর সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
ভার্চুয়াল সামিট শেষে কিয়েভে সংবাদ সম্মেলন করেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, দখলকৃত অঞ্চলের ভাগাভাগি নিয়ে রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কী কথা হয়েছে তিনি জানেন না। কিন্তু এই জটিল আলোচনা যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগে সম্ভব না বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি পশ্চিমা মিত্রদের উদ্দেশে বলেন, অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ওপরই নির্ভর করবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘অঞ্চল ভাগাভাগির আলোচনা অত্যন্ত জটিল। অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এ নিয়ে বৈঠক হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় আমার আপত্তি নেই। তবে একটা কথা সাফ জানাতে চাই, ইউক্রেনের যে সব অঞ্চল রাশিয়ার দখলে তা কোনোভাবেই মস্কোর হাতে ছেড়ে দেয়া হবে না। কখনোই না।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘রাশিয়াকে চাপে রাখার বিষয়ে ইউরোপের দেশ ও পশ্চিমা মিত্ররা সম্মত হয়েছেন। আমরা ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখব। অর্থনৈতিক নানা বিষয়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি থাকবে। আমাদের উদ্দেশ্য পুতিনকে দুর্বল করে ফেলা। যেন তিনি সমঝোতার টেবিলে বসতে বাধ্য হন।’
ট্রাম্প-পুতিন দ্বিতীয় দফা ফোনালাপের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ৩০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে ইউক্রেন ও রাশিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অঞ্চল ভাগাভাগির প্রশ্নে কিয়েভ বা মস্কো- কোনো পক্ষই যদি ছাড় না দেয়- তাহলে এই অস্থায়ী অস্ত্রবিরতি ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোত প্রশ্নে আদৌ কোনো সমাধান কী না সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।