আদালত চাইলে ডিএনএ ছাড়াই ধর্ষণের বিচার করতে পারবে: আইন উপদেষ্টা

- আপডেট সময় : ০৯:৩৩:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

আদালত চাইলে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই পারিপার্শ্বিক তথ্য এবং মেডিকেল রিপোর্ট দিয়ে ধর্ষণের বিচার করতে পারবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এমন একটা ধারা যুক্ত করছে সরকার। পাশাপাশি এই আইনে আরও বেশকিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘শুধু পুরুষের দ্বারা নয়, বরং যে কারো দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ধর্ষণের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বলৎকার। শুধু শিশুদের ধর্ষণের বিচারের জন্য গঠন করা হচ্ছে আলাদা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।’
বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অনেক সময় পার পেয়ে যায় ধর্ষক। সমাজে নিগ্রহের মুখে পড়তে হয় ধর্ষণের শিকার নারীকে। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে সরকার। আনা হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কার্যকর পরিবর্তন। বিশেষ করে ডিএনএ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে করতে যাতে বিচারে জট লেগে না যায় সেজন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ (সোমবার, ১৭ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন সরকারের দুই উপদেষ্টা। বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রিজুয়ানা হাসান জানান, দ্রুততার সাথে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে আরও দু’টি ল্যাব স্থাপন করা হবে।
এছাড়া আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘ধর্ষণের সংজ্ঞায় বেশ কয়েকটি পরিবর্তন হচ্ছে। শুধু পুরুষের দ্বারা নয়, বরং যে কারো দ্বারা যৌন নিপীড়ন এবং বলৎকারকেও ধর্ষণের সংজ্ঞায় যুক্ত করা হচ্ছে। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ- এই দুটি অপরাধও আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে সংশোধিত আইনে।’
শুধু শিশু ধর্ষণের বিচার করার জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কাউকে ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে, মামলাকারীর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘শুধু শিশু ধর্ষণের বিচার করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) এ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন হবে।
বৃহস্পতিবার সংশোধিত এই আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিবে উপদেষ্টা পরিষদ। তার পরদিনই প্রকাশ করা হবে গেজেট।
সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, নারী-শিশুর ওপর নির্যাতন ও সহিংসতায় আপন বা পরিচিতজনরাই এগিয়ে। এসবের ৮৫ শতাংশই বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ধর্ষক বা যৌন নির্যাতনকারী ভিকটিমের পরিচিত। মাগুরায় আট বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয় তারই বোনের স্বামীর সহায়তায়।
ধর্ষণসহ নারীদের প্রতি সহিংসতার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারেও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ বৈঠকে প্রচলিত এই আইনটি সংশোধনে নীতিগত অনুমোদন দেয়ার কথা জানান বন ও পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
ব্রিফিং আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর আসিফ নজরুল বলেন, দু-এক দিনের মধ্যেই আছিয়া নির্যাতনের ডিএনএ পাওয়া যাবে। এর পরপরই শুরু হবে বিচারকার্য। দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে এই নৃশংসতার বিচার।
ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়া পারিপার্শ্বিক স্বাক্ষ্য-প্রমানের ভিত্তিতে বিচারক চাইলে বিচার করতে পারবেন বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।