ঢাকা ১১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখতে এনসিপি ভেঙে নতুন দল!

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৩২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়কের নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির ঘোষণায় আলোচনা চলছে নতুন দল এনসিপির ভাঙন নিয়ে। প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তারা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের এই উদ্যোগ। আর এনসিপির সদস্য সচিবের প্রত্যাশা কেউ দল ছেড়ে অন্য প্লাটফর্মে গেলেও সবাই অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করবে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে নতুন প্লাটফর্মটি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশের আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল দলটির অভ্যন্তরে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দল ঘোষণার দু’দিন আগেই এনসিপি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদসহ একাধিক সংগঠক।

ছাত্রদের দল গঠনের আগ থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়েও চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। যার অধিকাংশ ঘিরে আছে দলের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জুলাইয়ে ভূমিকা রাখা সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারা নিয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে এপ্রিলে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ।

নতুন এই প্লাটফর্ম গঠন নিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের কাছে প্রশ্ন ছিল, এই উদ্যোগ এনসিপিতে ভাঙন ধরাবে কি না?

আখতার হোসেন বলেন, ‘সবাই এক হয়ে থাকার নিয়ত করেই আমাদের যাত্রাটা শুরু করেছি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষের জুলাইয়ের যে অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার জায়গাটা আছে সেটার বাস্তবায়নে এনসিপি তার কার্যক্রম বিস্তৃত করে যাবে। এবং এই যাত্রাপথে অবশ্যই অনেকে আসবেন অনেকে যুক্ত হবেন। অনেকে হয়তো ব্যক্তিগত কারণে হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক রাজনীতিতে নতুন কোনোকিছুর সঙ্গে যুক্ত হবেন। এটা রাজনীতিতে খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ জানান, যে স্বপ্ন নিয়ে তারা স্বৈরাচার হটিয়েছেন, তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রাথমিকভাবে জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগঠনের ইঙ্গিত দেন তিনি।

আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘সোশ্যাল রেজিস্টেন্সের মধ্য দিয়ে যদি আমরা সোশ্যাল ফোর্সটা ক্রিয়েট করতে পারি এই অপকর্মগুলো যদি দূর হয়ে যায় এবং জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা যদি রিলেভেন্ট হয়ে উঠে তাহলে তো রাজনীতি সবার জন্য কল্যাণকর হবে। রাজনীতিটা আনন্দদায়ক হবে, শুভকর হবে। কারণ তখন রাজনীতির মধ্যে এই অপকর্মগুলো থাকছে না। তখন শুধু দেশের স্বার্থটাই গুরুত্ব পাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলছেন, ছাত্রদের দল এনসিপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে নতুন প্লাটফর্মটি। মানুষের কাছে দলের এজেন্ডা পৌঁছাতে না পারলে ভাঙনের আশঙ্কা ও দেখছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এরা তো এনসিপির লোক হওয়ার কথা ছিল। যেহেতু ওরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিল। কিন্তু এরা এনসিপিতে না গিয়ে নতুন দল গঠন করছে সেক্ষেত্রে এটা এনসিপির জন্য চ্যালেঞ্জ। এনসিপির জন্য তো এদের নিজেদের দলে রাখতে পারলেই সফলতা ছিল। যত লোক এনসিপিতে থাকবে না তত এনসিপির জন্য চ্যালেঞ্জ।’

তরুণদের নতুন দল থেকে বের হয়ে কেউ অন্য প্লাটফর্মে যুক্ত হলেও, সেটা ভবিষ্যতের জোটভিত্তিক রাজনীতির কৌশল হিসেবেই ঘটতে পারে বলে মনে করছেন এই বিশ্লেষক।

কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটা যদ তাদের মত দ্বৈততার কারণে হয় তাহলে খারাপ। কিন্তু তারা যদি এগুলো নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী করে থাকে এবং একটা পর্যায়ে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ে তাহলে তো শক্তি থেকে যাবে। দল ভেঙে ভেঙে দল করে আবার নতুন করে জোট বাধে তাহলে তো আবার একইরকম শুক্তি হয়ে যাবে।’

এখনও পর্যন্ত নাম ঠিক না হলেও আগামী এপ্রিলের শেষ নাগাদ আত্মপ্রকাশ ঘটবে নতুন প্লাটফর্মটির, যার যাত্রা শুরু হবে আহ্বায়ক কমিটির মধ্য দিয়ে। আর লক্ষ্য হবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিসহ জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।

নিউজটি শেয়ার করুন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখতে এনসিপি ভেঙে নতুন দল!

আপডেট সময় : ০১:৩২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়কের নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির ঘোষণায় আলোচনা চলছে নতুন দল এনসিপির ভাঙন নিয়ে। প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তারা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের এই উদ্যোগ। আর এনসিপির সদস্য সচিবের প্রত্যাশা কেউ দল ছেড়ে অন্য প্লাটফর্মে গেলেও সবাই অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করবে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে নতুন প্লাটফর্মটি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশের আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল দলটির অভ্যন্তরে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দল ঘোষণার দু’দিন আগেই এনসিপি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদসহ একাধিক সংগঠক।

ছাত্রদের দল গঠনের আগ থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়েও চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। যার অধিকাংশ ঘিরে আছে দলের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জুলাইয়ে ভূমিকা রাখা সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারা নিয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে এপ্রিলে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ।

নতুন এই প্লাটফর্ম গঠন নিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের কাছে প্রশ্ন ছিল, এই উদ্যোগ এনসিপিতে ভাঙন ধরাবে কি না?

আখতার হোসেন বলেন, ‘সবাই এক হয়ে থাকার নিয়ত করেই আমাদের যাত্রাটা শুরু করেছি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষের জুলাইয়ের যে অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার জায়গাটা আছে সেটার বাস্তবায়নে এনসিপি তার কার্যক্রম বিস্তৃত করে যাবে। এবং এই যাত্রাপথে অবশ্যই অনেকে আসবেন অনেকে যুক্ত হবেন। অনেকে হয়তো ব্যক্তিগত কারণে হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক রাজনীতিতে নতুন কোনোকিছুর সঙ্গে যুক্ত হবেন। এটা রাজনীতিতে খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ জানান, যে স্বপ্ন নিয়ে তারা স্বৈরাচার হটিয়েছেন, তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রাথমিকভাবে জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগঠনের ইঙ্গিত দেন তিনি।

আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘সোশ্যাল রেজিস্টেন্সের মধ্য দিয়ে যদি আমরা সোশ্যাল ফোর্সটা ক্রিয়েট করতে পারি এই অপকর্মগুলো যদি দূর হয়ে যায় এবং জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা যদি রিলেভেন্ট হয়ে উঠে তাহলে তো রাজনীতি সবার জন্য কল্যাণকর হবে। রাজনীতিটা আনন্দদায়ক হবে, শুভকর হবে। কারণ তখন রাজনীতির মধ্যে এই অপকর্মগুলো থাকছে না। তখন শুধু দেশের স্বার্থটাই গুরুত্ব পাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলছেন, ছাত্রদের দল এনসিপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে নতুন প্লাটফর্মটি। মানুষের কাছে দলের এজেন্ডা পৌঁছাতে না পারলে ভাঙনের আশঙ্কা ও দেখছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এরা তো এনসিপির লোক হওয়ার কথা ছিল। যেহেতু ওরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিল। কিন্তু এরা এনসিপিতে না গিয়ে নতুন দল গঠন করছে সেক্ষেত্রে এটা এনসিপির জন্য চ্যালেঞ্জ। এনসিপির জন্য তো এদের নিজেদের দলে রাখতে পারলেই সফলতা ছিল। যত লোক এনসিপিতে থাকবে না তত এনসিপির জন্য চ্যালেঞ্জ।’

তরুণদের নতুন দল থেকে বের হয়ে কেউ অন্য প্লাটফর্মে যুক্ত হলেও, সেটা ভবিষ্যতের জোটভিত্তিক রাজনীতির কৌশল হিসেবেই ঘটতে পারে বলে মনে করছেন এই বিশ্লেষক।

কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটা যদ তাদের মত দ্বৈততার কারণে হয় তাহলে খারাপ। কিন্তু তারা যদি এগুলো নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী করে থাকে এবং একটা পর্যায়ে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ে তাহলে তো শক্তি থেকে যাবে। দল ভেঙে ভেঙে দল করে আবার নতুন করে জোট বাধে তাহলে তো আবার একইরকম শুক্তি হয়ে যাবে।’

এখনও পর্যন্ত নাম ঠিক না হলেও আগামী এপ্রিলের শেষ নাগাদ আত্মপ্রকাশ ঘটবে নতুন প্লাটফর্মটির, যার যাত্রা শুরু হবে আহ্বায়ক কমিটির মধ্য দিয়ে। আর লক্ষ্য হবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিসহ জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।