ঈদের আগেই ক্রেতাশূন্য বাজার, চালের সঙ্গে মুরগিও চড়া

- আপডেট সময় : ০২:৪১:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

চলতি রমজানের অন্যান্য সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে বাজার যতটা জমজমাট ছিল, এ সপ্তাহে তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। বাজারে ক্রেতা একদম নেই বললেই চলে। এ বছর রমজানের শুরু থেকেই লেবু, বেগুন ও শসার দাম বাড়তি ছিল। এই তিন পণ্যের দাম ২০ রোজায় এসেও চড়া। এছাড়া ঈদের আগেই বেড়েছে মুরগির দাম।
রোজার শুরুর দিকে আকারভেদে এক হালি লেবু ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখনো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা হালিতে। বেগুন ও শসারও একই অবস্থা। বেড়েছে সবজির দামও। পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে।
আজ শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ সামনে রেখে মুরগির দাম কিছুটা বাড়ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখন কম।
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীত ও গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি আগের সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধা কপি বড় সাইজের ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পাকা টমেটো কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, মটরশুটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, খিরাই ৬০ টাকা এবং শশা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, পটল ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর মুখী ১২০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, সাজনা ১৬০ টাকা ঝিঙ্গা ৮০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে ধনে পাতা ১৪০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া ৮০ টাকা পিস, কেপসি ক্যাপ ১২০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৫০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আধুনিক শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী লিংকন আহমেদ। তিনি বলেন, বাজারে দুই ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সবজির দাম খুব বেশি, আবার বাকি সবজিগুলোর দাম নাগালের মধ্যেই আছে, সেগুলো কিনে স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে। তবে মৌসুম না হওয়ায় পটল, ঢেঁড়স, বরবটি, করলা এমন সব সবজির দাম ১০০ টাকা বা তার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আজ বেগুনের দাম বেশি। তবে বাকি সবধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে অন্য বার রমজানের সবজির যেমন বাড়তি দাম থাকে, সেই তুলনায় এবার সবজির দাম তুলনামূলক কম।
রাজধানী মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, আজ বাজারে বেগুনের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়ে ১০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি হয়েছে। এগুলোর দাম যারা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে অন্যান্য ৩-৪ আইটেমের সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় সেগুলোর দাম বেশি, সেটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু শুধুমাত্র রমজান মাস হওয়ার জন্য, চাহিদা বেশি থাকায় বেগুনের দাম বাড়িয়ে রেখেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তবে এটা সত্য বাজারে অন্যান্য সবজির দাম বর্তমানে তুলনামূলক কম যাচ্ছে।
এ দিকে সবজির দাম বিষয়ে মগবাজারের সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন বাজারে সবজির দাম শীতের সময়ের মতোই তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পটল, বরবটি, ঢেঁড়স, করলা এই ধরনের সবজির এখন মৌসুম নয়, যে কারণে সরবরাহ খুবই কম। তাই এই নির্দিষ্ট কয়েকটি সবজির দাম বাজারে বর্তমানে বেশি, এছাড়া অন্য সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে। সবমিলিয়ে সবজির বাজার পরিস্থিতি বর্তমানে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। নির্দিষ্ট ৩-৪ আইটেমের সবজি ছাড়া সবগুলোর দামই তুলনামূলক কম।
এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে মুরগির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে ৩৩০ টাকায় এবং সোনালি হাইব্রিড কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগী কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা, সাদা লেয়ার কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ৩০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৬৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ তুলনামূলক কম। এ কারণে দাম বেড়েছে। ‘ঈদে মুরগির কিছুটা বাড়তি চাহিদা থাকে, সেটাও দাম বাড়ার একটি বড় কারণ,’ বলেন এ ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ী মো. রবিউল বলেন, এখন অনেকে ঈদের জন্য আগেভাগে মুরগি কিনছেন। আমাদের ধারণা এসব কারণে দাম বেড়েছে।
এসব বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে প্রাণিজ আমিষের এই সহজলভ্য উৎসের দাম বাড়ায় অসুবিধায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। সালমা বেগম নামের খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা এক ক্রেতা বলেন, গরু ও খাসির মাংসের দাম এত বেশি যে আমরা কিনে খেতে পারি না। ভরসা করতে হয় মুরগির ওপর। সেটারও দাম বাড়লে আমরা অসুবিধায় পড়ি।
রামপুরা বাজারের ক্রেতা রহিম বিশ্বাস বলেন, প্রতি শুক্রবার মুরগি কিনি। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষ সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে। ঈদের মধ্যে দাম আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।
বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে মিনি কেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজির সের ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।
অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৭০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আড়ই মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।