ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত আজ

- আপডেট সময় : ০২:৫৫:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
- / ৩৩৪ বার পড়া হয়েছে

সেই ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত আজ। ১৯৭১ সালের এ রাতেই বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর ঘনতমসা। পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের একটি ঘটেছিল আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিতে। রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো বর্বর শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরীহ-নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী বাঙালি জনগণের ওপর।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সম্ভার নিয়ে রাত ১০টার পর সারা দেশে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সামরিক ভাষায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল পাক-হানাদারদের এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিল।
অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় বিভীষিকা ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো ঢাকা শহরে। বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়।
এ বর্বরোচিত হামলায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে দেখেছিল উন্মত্ত পাক বাহিনীর গণহত্যাকাণ্ড। মধ্যযুগীয় কায়দায় হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ, করে অগ্নিসংযোগ।
২৫ মার্চের কালরাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিতো করে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি চালিয়ে হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জোগায়।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টে চলে যান। রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন নিরপরাধ বাঙালির ওপর কাপুরুষোচিত সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে।
পাক হানাদার বাহিনী জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে জল্লাদের মতো বাংলার নিরপরাধ জনগণের ওপর মেশিনগান, মর্টার আর ট্যাংক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ (মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ) সারা দেশে রাত ১০টা ৩০ মিনিট হতে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত ১ মিনিটের প্রতীকী ব্ল্যাক আউট পালন করা হবে।
বিকেল ৩টায় বাংলা অ্যাকাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গণহত্যা দিবস স্মরণে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে কালরাত্রি স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শিখা চির-অম্লান প্রাঙ্গণে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হবে।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বালন, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
রাত ৮টা ১৫ মিনিটে জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে অবস্থিত গণ-সমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বালন ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআ’য় শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সুবিধাজনক সময়ে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে।
এছাড়াও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময় দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একই কর্মসূচি পালন করা হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।