ঢাকা ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

‘৭১ এর মতোই ‘২৪ এর আন্দোলনও ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:০২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পথ চিরতরে বন্ধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঘুমন্ত মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু করে ইয়াহিয়া বাহিনী। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সরকারি তথ্য বলছে, এক রাতেই শহীদ হন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ৭১’র মতোই ‘২৪ এর আন্দোলনও ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, যা একই সূত্রে গাঁথা। দুই প্রেক্ষাপটে হলেও শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

২৫ মার্চ কাল রাতে ঢাকার নিরীহ মানুষের ওপর হঠাৎই হামলে পড়ে ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনী। অপারেশন সার্চলাইটের নামে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পিলখানায় চলে নির্বিচার হত্যা।

মূল পরিকল্পনা ছিল পুলিশ ও ইপিআরকে ধ্বংস করা। যেন পাকবাহিনী ছাড়া আর কারো কাছে অস্ত্র না থাকে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণের মাধ্যমে জাতিকে মেধা ও নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল দখলদার বাহিনী।

১৯৭১, ২৫ মার্চ রাত ১০ টা ৪০ তেজগাঁও দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের একটা ওয়ার্লেস বার্তা পৌঁছায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। জানানো হয়, ঢাকায় ঢুকে পড়েছে পাকবাহিনীর ৩৭টি গাড়ি, যেগুলো রাত সাড়ে ১১ টায় পৌঁছায় রাজারবাগ। আর তখন বেজে ওঠে পাগলা ঘণ্টা।

বাংলাদেশ পুলিশের সার্জেন্ট শামীনা আক্তার শুচি বলেন, ‘গাড়ি বহর থেকে যখন পাকসেনারা নেমে পড়েন তখন আমাদের একজন পুলিশ সদস্য প্রথম গুলি ছোড়েন যেটা ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্রশ্রস্ত প্রতিরোধের গুলি।’

পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রথম প্রতিরোধ হামলা করে রাজারবাগে অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা।

এই অপারেশনে পুলিশের ৭৫১ জন শহীদ হন। যাদের অনেককেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রাত ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হল, জহুরুল হক হল, বেগম রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় হামলা শুরু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অপারেশন সার্চলাইটের একটা অংশ হিসেবে তারা ঢাবিকে টার্গেট করে। তার বিভিন্ন হলে আক্রমণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসায় বাসায় আক্রমণ করে। এখানকার বহু শিক্ষক কর্মচারীকে হত্যা করে।’

তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানায় যখন পাকবাহিনী পৌঁছায় তখন সময় ১২টা। আগে থেকেই ওয়ারলেস যন্ত্র বন্ধ করে রাখায় ইপিআর সেনাসদস্যরা কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহুরমুহু গুলিতে শহীদ হন।

রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মাজহার বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য পাকিস্তানের দিক থেকে তা হলো পুলিশরা অর্গানাইজ হয়ে লড়বে যারা ফলে মিলিটারি কৌশলে যেখানে যেখানে অস্ত্র আছে সেখানে আক্রমণ করবে। আমাদের তো প্রস্তুতি ছিল না। যার ফলে আমাদের অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

৭১’র মতোই ২৪ এর আন্দোলনও ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, যা একই সূত্রে গাঁথা। দুই প্রেক্ষাপটে হলেও শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মাজহার বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান অবশ্যই দ্বিতীয় যুদ্ধ। এইটা হয়েছে রাষ্ট্র গঠন করবার ব্যর্থতা। এইটা হয়েছে বলেই আমরা দ্বিতীয় যুদ্ধ বলছি।’

২৫ মার্চ এর গণহত্যার প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই যে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, তার শেষ হয় ১৬ই ডিসেম্বর নতুন বাংলাদেশের জন্মে।

নিউজটি শেয়ার করুন

‘৭১ এর মতোই ‘২৪ এর আন্দোলনও ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে

আপডেট সময় : ০৩:০২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পথ চিরতরে বন্ধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঘুমন্ত মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু করে ইয়াহিয়া বাহিনী। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সরকারি তথ্য বলছে, এক রাতেই শহীদ হন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ৭১’র মতোই ‘২৪ এর আন্দোলনও ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, যা একই সূত্রে গাঁথা। দুই প্রেক্ষাপটে হলেও শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

২৫ মার্চ কাল রাতে ঢাকার নিরীহ মানুষের ওপর হঠাৎই হামলে পড়ে ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনী। অপারেশন সার্চলাইটের নামে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পিলখানায় চলে নির্বিচার হত্যা।

মূল পরিকল্পনা ছিল পুলিশ ও ইপিআরকে ধ্বংস করা। যেন পাকবাহিনী ছাড়া আর কারো কাছে অস্ত্র না থাকে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণের মাধ্যমে জাতিকে মেধা ও নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল দখলদার বাহিনী।

১৯৭১, ২৫ মার্চ রাত ১০ টা ৪০ তেজগাঁও দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের একটা ওয়ার্লেস বার্তা পৌঁছায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। জানানো হয়, ঢাকায় ঢুকে পড়েছে পাকবাহিনীর ৩৭টি গাড়ি, যেগুলো রাত সাড়ে ১১ টায় পৌঁছায় রাজারবাগ। আর তখন বেজে ওঠে পাগলা ঘণ্টা।

বাংলাদেশ পুলিশের সার্জেন্ট শামীনা আক্তার শুচি বলেন, ‘গাড়ি বহর থেকে যখন পাকসেনারা নেমে পড়েন তখন আমাদের একজন পুলিশ সদস্য প্রথম গুলি ছোড়েন যেটা ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্রশ্রস্ত প্রতিরোধের গুলি।’

পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রথম প্রতিরোধ হামলা করে রাজারবাগে অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা।

এই অপারেশনে পুলিশের ৭৫১ জন শহীদ হন। যাদের অনেককেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রাত ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হল, জহুরুল হক হল, বেগম রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় হামলা শুরু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অপারেশন সার্চলাইটের একটা অংশ হিসেবে তারা ঢাবিকে টার্গেট করে। তার বিভিন্ন হলে আক্রমণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসায় বাসায় আক্রমণ করে। এখানকার বহু শিক্ষক কর্মচারীকে হত্যা করে।’

তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানায় যখন পাকবাহিনী পৌঁছায় তখন সময় ১২টা। আগে থেকেই ওয়ারলেস যন্ত্র বন্ধ করে রাখায় ইপিআর সেনাসদস্যরা কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহুরমুহু গুলিতে শহীদ হন।

রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মাজহার বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য পাকিস্তানের দিক থেকে তা হলো পুলিশরা অর্গানাইজ হয়ে লড়বে যারা ফলে মিলিটারি কৌশলে যেখানে যেখানে অস্ত্র আছে সেখানে আক্রমণ করবে। আমাদের তো প্রস্তুতি ছিল না। যার ফলে আমাদের অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

৭১’র মতোই ২৪ এর আন্দোলনও ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, যা একই সূত্রে গাঁথা। দুই প্রেক্ষাপটে হলেও শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মাজহার বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান অবশ্যই দ্বিতীয় যুদ্ধ। এইটা হয়েছে রাষ্ট্র গঠন করবার ব্যর্থতা। এইটা হয়েছে বলেই আমরা দ্বিতীয় যুদ্ধ বলছি।’

২৫ মার্চ এর গণহত্যার প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই যে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, তার শেষ হয় ১৬ই ডিসেম্বর নতুন বাংলাদেশের জন্মে।