ওসাসুনার বিপক্ষে বার্সেলোনার ম্যাচটা হওয়ার কথা ছিল গত ৮ মার্চ। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণ আগে বার্সেলোনার মূল দলের চিকিৎসক কার্লেস মিনেইরা মারা যাওয়ায় ম্যাচটা স্থগিত করা হয়। সে ঘটনার পর গতকাল রাতে ম্যাচটি খেলার জন্য নতুন সূচি নির্ধারণ করে লা লিগা কর্তৃপক্ষ। এ সূচি নিয়ে অসন্তোষ ছিল দুই দলের মাঝেই।
তবে অসন্তোষের মাত্রাটা বেশি ছিল হানসি ফ্লিকের দলের। এ ম্যাচের মাত্র ৪২ ঘণ্টা আগে যে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলেছেন বার্সার ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনিয়া! অনুমিতভাবে ক্লাবের জার্সিতে ফর্মের তুঙ্গে থাকা রাফিনিয়াকে এ ম্যাচে পায়নি বার্সা। একই কারণে পায়নি উরুগুয়ে ডিফেন্ডার রোনাল্দ আরাউহোকেও।
তা অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেলতে নেমে ওসাসুনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ফ্লিকের শিষ্যরা। বার্সার হয়ে গোল তিনটি করেছেন ফেরান তোরেস, দানি অলমো ও রবের্ত লেভানদফস্কি।
মৌসুমের প্রথম মুখোমুখি দেখায় ওসাসুনার মাঠে গিয়ে ৪-২ গোলে হেরে এসেছিল বার্সা। সেদিক থেকে ফ্লিকের দলের জন্য ম্যাচটা ছিল প্রতিশোধের। গতকাল ঘরের মাঠ স্তাদিও অলিম্পিক লুইস কোম্পানিতে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটাও পাকাপাকি করেছে বার্সা। ২৮ ম্যাচে বার্সার পয়েন্ট ৬৩। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রেয়াল মাদ্রিদের (২৮ ম্যাচে ৬০) চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে গেল ফ্লিকের দল।
একদিকে প্রতিশোধ, অন্যদিকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান বাড়ানো- এমন স্বস্তির ম্যাচেও বার্সার অস্বস্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দানি অলমোর চোট। অম্লমধুর এক জয় বটে!
আর এজন্য ঠাসা সূচিকেই দায়ী করেছেন ফ্লিক। ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন, এমন সূচি খেলার সৌন্দর্য নষ্ট করে দিচ্ছে। আর বার্সা ডিফেন্ডার জুলস কুন্দে জানিয়েছেন, এটা খেলোয়াড়দের প্রতি অসম্মান।
ফ্লিকের ভাষায়, ‘এ ম্যাচটা খেলার জন্য এটা মোটেও সঠিক সময় নয়। আন্তর্জাতিক বিরতির পরেই এটা ভালো (সূচি) হতে পারে না। আমরা তিন পয়েন্ট পেয়েছি বটে, তবে এর জন্য আমাদের চড়া মূল্য চোকাতে হয়েছে। দানি (অলমো) চোটে পড়েছে। এটা মোটেও স্বস্তির খবর নয়।’
ফ্লিক যোগ করেন, ‘জানি না সে (অলমো) কতদিন মাঠের বাইরে থাকবে। যদি এটা দুই সপ্তাহের জন্য হয়, তার মানে সে অনেক ম্যাচ খেলতে পারবে না। তিন সপ্তাহ হলে আরও বেশি ম্যাচ মিস করবে। এটা মোটেও ভালো পরিস্থিতি হতে পারে না। তিন পয়েন্টের জন্য মূল্যটা বেশিই দিতে হচ্ছে।’
ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পেশির সমস্যায় ভোগা অলমো আজ শুক্রবার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। তবে তাঁকে দুই-তিন সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
শুধু যে আন্তর্জাতিক বিরতির পরই ম্যাচ বলে ফ্লিকের এত রাগ, ব্যাপারটা এমন নয়। গতকালের ম্যাচ থেকে পরবর্তী ২০ দিনে বার্সাকে মোট ৭টি ম্যাচ খেলতে হবে। এর মধ্যে ওসাসুনা ম্যাচের ধকল না কাটতেই ৬৪ ঘণ্টা পরই লিগ ম্যাচে জিরোনার মুখোমুখি হবে কাতালান ক্লাবটি।
এ নিয়ে ফ্লিক জানিয়েছেন, এমন সূচি খেলার সৌন্দর্য ধ্বংস করে দিচ্ছে। এমন অবস্থার জন্য গ্রীষ্মের ক্লাব বিশ্বকাপকে দায়ী করেন বার্সা কোচ। অবশ্য সে টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পায়নি কাতালান ক্লাবটি।
ফ্লিক এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, খেলোয়াড় কথাও শোনা উচিত। সঙ্গে কোচদের কথাও। বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মে ক্লাব বিশ্বকাপ আছে। এর বাইরে নেশনস লিগ, আন্তর্জাতিক বিরতি…. এটা খুব কঠিন।’
‘আমার মতে এ বিশ্বকাপটা ভালো কিছু বয়ে আনবে না। ঠিক আছে, আপনি অনেক টাকা আয় করতে পারেন। কিন্তু খেলোয়াড়দের জন্য এটা মোটেও ভালো নয়। খেলোয়াড়ের কথা ভেবে হলেও আমাদের থামা উচিত’- যোগ করেন বার্সা কোচ।
শুধু কোচ নয়, বার্সার এ ম্যাচের সূচি নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ডিফেন্ডার জুলস কুন্দেও। ফ্রান্স তারকা জমে থাকা রাগ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘এ ম্যাচটার জন্য যে তারিখ বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি ক্ষুব্ধ। এটা মোটেও স্বাভাবিক হতে পারে না। বার্সা ও ওসাসুনা দুদলেরই অনেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে এসেছে। খেলার জন্য এ তারিখটি ক্লাবের প্রতি সম্মানের অভাবকেই প্রকাশ করে। খেলোয়াড়দের প্রতি অসম্মানটা বেশি।’
কুন্দে আরও বলেন, ‘আমরা যন্ত্র নই। নিজেদের খেলাটা খেলার জন্য এবং ভক্তদের আমরা যেটা দিতে চাই, সেটার জন্য আমাদের বিশ্রাম জরুরি। শুধু লা লিগা নয়, সব প্রতিষ্ঠানকেই এটা বোঝা উচিত।’