চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে এ বৈঠক হয়। চীনের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমকে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে শি জিনপিং উল্লেখ করেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীন সিল্ক রোড উভয় দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করেছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে উভয় পক্ষ সবসময় একে অপরকে সমর্থন করেছে, সমতার ভিত্তিতে আচরণ করেছে এবং পারস্পরিক কল্যাণের জন্য সহযোগিতা করেছে। চীনের বাংলাদেশ-নীতি অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং ধারাবাহিক। এটি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি অনুসরণ করে এবং বিশ্বস্ত প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু ও অংশীদার হওয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
চলতি বছর চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী এবং চীন-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময় বর্ষ। চীন বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে এবং উভয় দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে আগ্রহী।
শি জিনপিং জোর দিয়ে বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশকে রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস আরও গভীর করতে হবে এবং একে অপরের মৌলিক স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগের বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিতে হবে। চীন বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে এবং দেশটির নিজস্ব বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন পথ অনুসন্ধানের উদ্যোগকে উৎসাহিত করে।’
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চীন উচ্চপর্যায়ের উন্মুক্ত অর্থনীতির মাধ্যমে বৈশ্বিক দেশগুলোর, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে চায়। দুই দেশকে ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ অর্থনীতি, সামুদ্রিক অর্থনীতি, অবকাঠামো নির্মাণ, পানি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে হবে, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়িয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’
শি জিন পিং বলেন, ‘চীন বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থার ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশ্বিকায়নকে সমর্থন করে। এ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে বহুপাক্ষিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়াতে, গ্লোবাল সাউথের ঐক্য ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে এবং মানবজাতির অভিন্ন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চীন আগ্রহী।’
এ সময় উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে এবং উভয় দেশ সবসময় একে অপরকে বুঝেছে, সম্মান করেছে ও বিশ্বাস করেছে। চীন বাংলাদেশের জন্য এক নির্ভরযোগ্য অংশীদার ও বন্ধু। বাংলাদেশ এক-চীন নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার’ বিরোধিতা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ ও চীন তাদের কৌশলগত সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে চায়। বাংলাদেশ যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী এবং চীনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করবে।’
বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রস্তাবিত তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলোর প্রতি গভীর প্রশংসা প্রকাশ করেছেন এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে চায়।