প্রধান উপদেষ্টার সফরে চীন থেকে যা পেল বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ০৪:৪৯:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
- / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে বিশাল বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত কোটা ও শুল্ক সুবিধারও প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন এবং বাংলাদেশ চীনের ‘এক চীন নীতি’তে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
২১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে বাংলাদেশ ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশের চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে।
২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে কোটা ও শুল্ক সুবিধা
চীন বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা আরও দুই বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াং এই ঘোষণা দেন।
চীনে আম রপ্তানি
চীন যেমন বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী তেমনি বাংলাদেশও চীনে আম পাঠাতে চায়। বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির জন্য ৬ বছর আগে দেশটির কাছে আবেদন করেছিল। তবে নানা জটিলতায় সেটা আর কার্যকর হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মধ্যে দিয়ে সেদেশে আম রপ্তানির দুয়ার খুলেছে। আগামী মে-জুন মাস থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এর মধ্যে দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বাড়বে।
তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে তিস্তা নদী প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস পেয়েছেন। এছাড়া, নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন তিনি। সফরে সেদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোইয়িংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও ঢাকার চারপাশের দূষিত পানি পরিষ্কারের বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ইউনূস।
এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশ সবসময় এক চীন নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেও মনে করে বাংলাদেশ। তবে এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে। একইসঙ্গে চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ব্যাপারে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা স্পষ্ট করেছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলায় সমর্থনের কথাও বলেছে চীন।
তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেছেন, এই বাক্যটি হয়তো চীনের আগ্রহে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হোক বা না হোক, এটি কোনো পার্থক্য তৈরি করে না।
৯ চুক্তি-সমঝোতা সই
সফরকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের একটি চুক্তি ও ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের চিরায়ত সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে সই হয়েছে ৮টি সমঝোতা স্মারক।
গত ২৬ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চারদিনের চীন সফরে যান। প্রধান উপদেষ্টার এটাই প্রথম কোনো দেশে দ্বিপক্ষীয় সফর। স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৫টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি।