ঢাকা ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কাশ্মীরে পর্যটক হত্যা: রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের দায় স্বীকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:১০:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে ২৬ পর্যটককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়্যবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। হামলার প্রতিবাদে কাশ্মীরের বিভিন্ন শহরের বিক্ষোভ হয়েছে। এসময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পদত্যাগের দাবিও জানান বিক্ষোভকারীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিকে কাশ্মীর জুড়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে দুই সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আরও একটি সন্ত্রাসী হামলা। আরও একবার রক্তাক্ত পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ খ্যাত ভারতের জম্মু-কাশ্মীর। পেহেলগামে মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) ওই ভয়াবহ হামলার পর চরম নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন পর্যটকরা। অনেকেই ট্যুর বাতিল করে ছেড়ে যাচ্ছেন কাশ্মীর। যারা আছেন তারাও আছেন চরম আতঙ্কে।

পর্যটকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের আরও দুইদিন কাশ্মীরে থাকার কথা ছিল। এ অবস্থায় ট্যুর বাতিল করে আমরা চলে যাচ্ছি।’

স্থানীদের একজন বলেন, ‘সব পর্যটক এখন আতঙ্কের মধ্যে আছে। নিরাপত্তা না থাকলে মানুষজন ঘুরবে কীভাবে?’

এ ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে শুরু হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান। বুধবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে কাশ্মীরে নিহত হয়েছে দুই সন্ত্রাসী। রাজ্যজুড়ে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি জায়গায় চেক পয়েন্ট বসিয়ে চলছে তল্লাশি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ৫ থেকে ৬ জন বন্দুকধারী পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তাদের গুলিবর্ষণে দুই বিদেশি নাগরিকসহ ভারতীয় এক নৌ কর্মকর্তা ও একজন গোয়েন্দা ব্যুরোর কর্মীও প্রাণ হারান।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ‘দুটি গুলির শব্দ শুনেছি। তখন চারপাশে লোকজন হুড়োহুড়ি শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করি।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা ঘটনার তেমন কিছু বুঝতে পারিনি। গুলির শব্দ শুনেই আমরা তৎক্ষণাৎ পালিয়ে যাই।’

পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার বিচারের দাবিতে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন শহরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। হামলার পেছনে পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির পতাকা পুড়িয়ে আন্দোলন করেন তারা। এ সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পদত্যাগও দাবি করেন অনেকে।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। ছুটি কাটাতে এসে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ গেল পর্যটকদের।’

আরেকজন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। এটি সাধারণ মানুষের দাবি।’

অন্য আরেকজন বলেন, ‘কাশ্মীর ভূখণ্ডে পর্যটকদের ওপর এই কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেছে কাশ্মীরের সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা টিআরএফ। যেটি নিষিদ্ধ ঘোষিত পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবার একটি ছায়া সংগঠন।

২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তারা। কাশ্মীর উপত্যকায় অবৈধ বসতি গড়তে চাইলে এই ধরনের হামলা চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।

এ ঘটনায় সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ (বুধবার, ২৩ এপ্রিল) সকালে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও পররাষ্ট্র সচিব। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন মোদি।

হামলার পরই শ্রীনগরে গিয়ে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এসময় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খারগে সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়াও, সৌদি আরব, ইরান, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ সমবেদনা জানিয়েছে। নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবও। ২০১৯ সালে পুলওয়ামার পর এটিই কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।

নিউজটি শেয়ার করুন

কাশ্মীরে পর্যটক হত্যা: রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের দায় স্বীকার

আপডেট সময় : ১১:১০:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে ২৬ পর্যটককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়্যবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। হামলার প্রতিবাদে কাশ্মীরের বিভিন্ন শহরের বিক্ষোভ হয়েছে। এসময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পদত্যাগের দাবিও জানান বিক্ষোভকারীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিকে কাশ্মীর জুড়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে দুই সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আরও একটি সন্ত্রাসী হামলা। আরও একবার রক্তাক্ত পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ খ্যাত ভারতের জম্মু-কাশ্মীর। পেহেলগামে মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) ওই ভয়াবহ হামলার পর চরম নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন পর্যটকরা। অনেকেই ট্যুর বাতিল করে ছেড়ে যাচ্ছেন কাশ্মীর। যারা আছেন তারাও আছেন চরম আতঙ্কে।

পর্যটকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের আরও দুইদিন কাশ্মীরে থাকার কথা ছিল। এ অবস্থায় ট্যুর বাতিল করে আমরা চলে যাচ্ছি।’

স্থানীদের একজন বলেন, ‘সব পর্যটক এখন আতঙ্কের মধ্যে আছে। নিরাপত্তা না থাকলে মানুষজন ঘুরবে কীভাবে?’

এ ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে শুরু হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান। বুধবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে কাশ্মীরে নিহত হয়েছে দুই সন্ত্রাসী। রাজ্যজুড়ে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি জায়গায় চেক পয়েন্ট বসিয়ে চলছে তল্লাশি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ৫ থেকে ৬ জন বন্দুকধারী পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তাদের গুলিবর্ষণে দুই বিদেশি নাগরিকসহ ভারতীয় এক নৌ কর্মকর্তা ও একজন গোয়েন্দা ব্যুরোর কর্মীও প্রাণ হারান।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ‘দুটি গুলির শব্দ শুনেছি। তখন চারপাশে লোকজন হুড়োহুড়ি শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করি।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা ঘটনার তেমন কিছু বুঝতে পারিনি। গুলির শব্দ শুনেই আমরা তৎক্ষণাৎ পালিয়ে যাই।’

পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার বিচারের দাবিতে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন শহরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। হামলার পেছনে পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির পতাকা পুড়িয়ে আন্দোলন করেন তারা। এ সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পদত্যাগও দাবি করেন অনেকে।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। ছুটি কাটাতে এসে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ গেল পর্যটকদের।’

আরেকজন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। এটি সাধারণ মানুষের দাবি।’

অন্য আরেকজন বলেন, ‘কাশ্মীর ভূখণ্ডে পর্যটকদের ওপর এই কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেছে কাশ্মীরের সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা টিআরএফ। যেটি নিষিদ্ধ ঘোষিত পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবার একটি ছায়া সংগঠন।

২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তারা। কাশ্মীর উপত্যকায় অবৈধ বসতি গড়তে চাইলে এই ধরনের হামলা চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।

এ ঘটনায় সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ (বুধবার, ২৩ এপ্রিল) সকালে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও পররাষ্ট্র সচিব। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন মোদি।

হামলার পরই শ্রীনগরে গিয়ে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এসময় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খারগে সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়াও, সৌদি আরব, ইরান, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ সমবেদনা জানিয়েছে। নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবও। ২০১৯ সালে পুলওয়ামার পর এটিই কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।