রানা প্লাজা দুর্ঘটনার এক যুগ আজ। দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার কাজ। শুধু দুর্ঘটনার দিনটি স্মরণেই সীমাবদ্ধ এগারোশ'র বেশি শ্রমিকের মৃত্যুর এই ঘটনা। শ্রমিক নেতারা বলছেন, আন্দোলন ও আইনি প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করতে হবে শ্রম অধিকার। আর শ্রম সংস্কার কমিশন বলছে, জাতীয় ইস্যুতে রূপান্তর হলে দ্রুততম সময়ে সম্ভব রানা প্লাজার বিচার।
এই ধ্বংসস্তূপের চিত্র একযুগ আগের। ঝুঁকিপূর্ণ রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছিলেন এগারোশ'র বেশি শ্রমিক। এত ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনার কমই হয়েছে পৃথিবীতে।
একযুগ পেরলেও এখনও বিচার শেষ হয়নি কলঙ্কিত এই অধ্যায়ের। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে রানাপ্লাজা ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো। এখনও তাই বিচারের অপেক্ষায় দিন গুণছেন ভুক্তভোগীরা।
রানা প্লাজা ভবন ধসের ভুক্তভোগী নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, 'আমাদের দাবি সুবিচার। রানা প্লাজা ধসে আমাদের অনেক ভাই-বোনদের হারিয়েছি। আমরা যারা এখনও অসুস্থ আছি আমাদের পুনর্বাসন চাই। এর সাথে ক্ষতিপূরণও চাই আমরা।'
রানাপ্লাজার বিচার কৌশলে বিলম্বিত করা হচ্ছে অভিযোগ করে শ্রমিক নেতারা বলছেন, আন্দোলন ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করতে হবে শ্রম অধিকার।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, 'কোনো শ্রমিক মৃত্যুর পরে যেন তার পরিবার অসহায় না হয়, কোনো শ্রমিক আহত হলে সে পঙ্গু হয়ে ভিক্ষুক না হয়। এবং আমাদের এখানে আইনে নিহত হলে এবং আহত হলে ক্ষতিপূরণের ব্যাপার আছে কিন্তু পুনর্বাসনের বিষয়টা এখনও আমরা আইনের অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি। আন্দোলন এবং আদালত, দুইটার একটা সমন্বিত উদ্যোগে আমরা শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।'
গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তসলিমা আখতার বলেন, 'রানা প্লাজা ঘটনার পর ১২ বছরেও দোষীদের শাস্তি হয়নি। ক্ষতিপূরণের মানদণ্ডের কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। এবং একইসাথে আমরা দেখতে পাই রানা প্লাজার সামনে যে জায়গাটা সেটা যেমন একটা ধ্বংসস্তূপ ছিল। এখন সেটা একটা নর্দমায় পরিণত হয়েছে।'
পুরো ঘটনার সত্য উদঘাটন করা, আইনি সহায়তা দেয়াসহ বিচারের কাজে জটিলতাগুলো সমাধানে জোর দেন আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান ব্লাস্টের সম্মানীয় নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও আইনি কাঠামোতে আনা প্রয়োজন।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, 'রানা প্লাজা ভবন ধসটা ঘটলো কেন এটা আগে বুঝতে হবে। এটা শুধু একজনই দায়ী না। অনেকেই এটার সাথে জড়িত। এবং যারা ওই ভবনে নিয়মিত যাতায়াত করতো তারা সবাই কিন্তু নিহত হয়নি। শ্রমিকরা বেশিরভাগ নিহত হয়েছে। তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে কাজ করতে। কিন্তু কারা তাদের বাধ্য করলো, তাদের কীভাবে আইনের মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। এই ভবনটা কারা অনুমোদন করলো, সেখানে তো কোনো ব্যক্তি মালিকানা আসার কথা না।'
রানা প্লাজার বিষয়টিকে জাতীয় ইস্যুতে রূপান্তরের কথা বলছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানান, জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হলেই দ্রুততম সময়ে হবে বিচার কাজ।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'রানা প্লাজার বিচার যদি আমরা না করতে পারি তাহলে এটি চলতে থাকবে। এবং এটি শুধু একটি কারখানার বিষয় না। এটি একটি জাতীয় ইস্যু। পৃথিবীতে এই ধরনের দুর্ঘটনা যেখানেই ঘটেছে তারা এটিকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে নিয়েছে। এবং সেটিকে কেন্দ্র করে জাতীয় উন্নয়নের একটা রূপরেখা তৈরি হয়েছে সেখানে। আমাদের এখানে কিন্তু সেটা হয়নি।'
রানা প্লাজার ঘটনার পরও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে ভবন ধসের ঘটনা। প্রাণও হারিয়েছেন সাধারণ মানুষ। ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাই সচেতনতার পাশাপাশি আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।