ঢাকা ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ঢাকা ও গাজীপুরের ৪০ লাখ অটোরিকশা কীভাবে চার্জ হয়?

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৫২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রতিদিন ঢাকা ও গাজীপুরের ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে আয় ১২০ কোটি টাকার বেশি। কার পকেটে যায় এই বিশাল অঙ্কের টাকা? কীভাবে ডিপিডিসির চোখ ফাঁকি দিয়ে রিচার্জ হয় রিকশার ব্যাটারি? সম্প্রতি প্রশাসন রাজধানীর গুলশান বনানীর সড়কে অটোরিকশা নিষিদ্ধ করলে, ক্ষোভে তারা হামলা করে বিদেশি নাগরিকসহ সাধারণ মানুষের ওপরেও।

ব্যাটারি চালিত রিকশা যেতে দিতে হয় গুলশান বনানীর সড়কে। এ যেন মগের মুল্লুক।

থামাতে আসলেই হামলা। হামলার হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিদেশি নাগরিক, পথচারী ও সাংবাদিকরাও। হামলার এই দৃশ্য দেখেও নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ। যেন কিছুই করার নেই।

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা এমন সাহস কোথায় পেলো ? অনুসন্ধান করে দেখা যায় ৫ আগস্টের পরে নতুন রিকশা তৈরির সংখ্যা বেড়ে আগের থেকে প্রায় অনেক বেশি। দেশী রিকশা বডি আর চায়না ব্যাটারি মিলিয়ে ২ দিনের তৈরি হচ্ছে ব্যাটারি চালিত রিকশা।

আইনি ভিত্তি না থাকলেও এই ব্যক্তি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে রিকশা বানান। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা বানানো শুরু করেছেন বছর দশেক হলো।

ব্যাটারি রিকশা বানানো একজন মেকানিক বলেন, ‘বিভিন্ন দোকান থেকে রিকশার আলাদা আলাদা পার্টস কিনে এনে সব একত্রিত করে রিকশা বানাই। আমি গত ৮ মাসে প্রায় ১১৫টি রিকশা বানিয়েছি।’

সড়ক ঘুরে দেখা গেলো পায়ে চালানো রিকশার সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক ভাবে। অপেক্ষাকৃত কম কষ্টের যান হওয়ায় অনেক রিকশা চালকদের পছন্দের তালিকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা।

রাস্তায় নেই চাঁদাবাজি। পুলিশও কিছু বলে না। তাই সব সড়কে চলতে পারেন রিকশা চালকরা।

রিকশা চালকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘রাস্তায় কোনো সমস্যা নেই এখন। আল্লাহর রহমতে পুলিশ-প্রশাসনও কিছু বলে না। যেদিকে মন চায় সেদিকে যাই।’

ব্যাটারি চালিত রিকশা চার্জ হয় কীভাবে? তেজগাঁও এলাকার নেই কোনো নির্ধারিত চার্জ স্টেশন। রাস্তার পাশে মিটার নামিয়ে অথবা সরাসরি বৈদ্যুতিক খুঁটির তার থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গ্যারেজ মালিকরা। প্রতিদিন চার্জের জন্য গুনতে হয় ৮০ টাকা।

ডেসকোর দেয়া তথ্য বলছে বৈধ চার্জিং স্টেশন রয়েছে ২ হাজার ১৪৯টি। প্রতিদিন এই স্টেশনগুলোতে চার্জ করা যায় ২০ থেকে ৩০ টি গাড়ি। সর্বোচ্চ হিসেব ধরলেও দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জ দিতে পারে ডেসকো। তাহলে বাকি ৩৯ লাখ ৩0 হাজার ব্যাটারি চালিত রিকশা কীভাবে চার্জ হয়?

ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যে ২ হাজার ১৪৯টি চার্জিং স্টেশন, এদের স্যাংশন লোড ২ কিলোওয়াট থেকে শুরু করে ১১ কিলোওয়াট পর্যন্ত। যদি সবগুলো চার্জ স্টেশনে একসাথে চার্জে লাগায় এবং ফুল ক্যাপাসিটি ব্যবহার করে তাহলে তাদের প্রতিদিন ২৬ মেগাওয়াট লোড লাগবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দেয়া তথ্য বলছে ঢাকা ও গাজীপুরে ৪০ লাখের মতো ব্যটারি চালিত রিকশা রয়েছে। দিনের রিকশা ভাড়া ন্যূনতম ৩০০ টাকা। তাহলে মোট ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে আয় ১২০ কোটি টাকা। বছরের হিসেবে ৪৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আয় ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় অনুমোদিত রিতশাগুলো অনুমোদিত রুটগুলোতে চলাচল করতে পারবে। এর বাইরে যারা আছে, তাদেরকে আমরা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেব। তারা কেবল বৈধ রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা লোক ২টার বেশি লাইসেন্স পাবে না, সেরকম ব্যবস্থা আমরা করে দেব। কারণ এনআইডি বেইজড লাইসেন্স হবে। চাইলেই একজন ৫টা রিকশা বের করে রিকশার ব্যবসা শুরু করে দেবেন সেটার সুযোগ নেই।’

বুয়েট তৈরি করেছে নতুন ব্যাটারি চালিত রিকশার ডিজাইন। রাজধানীর ব্যাটারি চালিত রিকশা নিবন্ধনের আওতায় আনা গেলে নৈরাজ্য কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মত সাধারণ মানুষের।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঢাকা ও গাজীপুরের ৪০ লাখ অটোরিকশা কীভাবে চার্জ হয়?

আপডেট সময় : ১২:৫২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

প্রতিদিন ঢাকা ও গাজীপুরের ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে আয় ১২০ কোটি টাকার বেশি। কার পকেটে যায় এই বিশাল অঙ্কের টাকা? কীভাবে ডিপিডিসির চোখ ফাঁকি দিয়ে রিচার্জ হয় রিকশার ব্যাটারি? সম্প্রতি প্রশাসন রাজধানীর গুলশান বনানীর সড়কে অটোরিকশা নিষিদ্ধ করলে, ক্ষোভে তারা হামলা করে বিদেশি নাগরিকসহ সাধারণ মানুষের ওপরেও।

ব্যাটারি চালিত রিকশা যেতে দিতে হয় গুলশান বনানীর সড়কে। এ যেন মগের মুল্লুক।

থামাতে আসলেই হামলা। হামলার হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিদেশি নাগরিক, পথচারী ও সাংবাদিকরাও। হামলার এই দৃশ্য দেখেও নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ। যেন কিছুই করার নেই।

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা এমন সাহস কোথায় পেলো ? অনুসন্ধান করে দেখা যায় ৫ আগস্টের পরে নতুন রিকশা তৈরির সংখ্যা বেড়ে আগের থেকে প্রায় অনেক বেশি। দেশী রিকশা বডি আর চায়না ব্যাটারি মিলিয়ে ২ দিনের তৈরি হচ্ছে ব্যাটারি চালিত রিকশা।

আইনি ভিত্তি না থাকলেও এই ব্যক্তি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে রিকশা বানান। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা বানানো শুরু করেছেন বছর দশেক হলো।

ব্যাটারি রিকশা বানানো একজন মেকানিক বলেন, ‘বিভিন্ন দোকান থেকে রিকশার আলাদা আলাদা পার্টস কিনে এনে সব একত্রিত করে রিকশা বানাই। আমি গত ৮ মাসে প্রায় ১১৫টি রিকশা বানিয়েছি।’

সড়ক ঘুরে দেখা গেলো পায়ে চালানো রিকশার সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক ভাবে। অপেক্ষাকৃত কম কষ্টের যান হওয়ায় অনেক রিকশা চালকদের পছন্দের তালিকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা।

রাস্তায় নেই চাঁদাবাজি। পুলিশও কিছু বলে না। তাই সব সড়কে চলতে পারেন রিকশা চালকরা।

রিকশা চালকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘রাস্তায় কোনো সমস্যা নেই এখন। আল্লাহর রহমতে পুলিশ-প্রশাসনও কিছু বলে না। যেদিকে মন চায় সেদিকে যাই।’

ব্যাটারি চালিত রিকশা চার্জ হয় কীভাবে? তেজগাঁও এলাকার নেই কোনো নির্ধারিত চার্জ স্টেশন। রাস্তার পাশে মিটার নামিয়ে অথবা সরাসরি বৈদ্যুতিক খুঁটির তার থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গ্যারেজ মালিকরা। প্রতিদিন চার্জের জন্য গুনতে হয় ৮০ টাকা।

ডেসকোর দেয়া তথ্য বলছে বৈধ চার্জিং স্টেশন রয়েছে ২ হাজার ১৪৯টি। প্রতিদিন এই স্টেশনগুলোতে চার্জ করা যায় ২০ থেকে ৩০ টি গাড়ি। সর্বোচ্চ হিসেব ধরলেও দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জ দিতে পারে ডেসকো। তাহলে বাকি ৩৯ লাখ ৩0 হাজার ব্যাটারি চালিত রিকশা কীভাবে চার্জ হয়?

ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যে ২ হাজার ১৪৯টি চার্জিং স্টেশন, এদের স্যাংশন লোড ২ কিলোওয়াট থেকে শুরু করে ১১ কিলোওয়াট পর্যন্ত। যদি সবগুলো চার্জ স্টেশনে একসাথে চার্জে লাগায় এবং ফুল ক্যাপাসিটি ব্যবহার করে তাহলে তাদের প্রতিদিন ২৬ মেগাওয়াট লোড লাগবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দেয়া তথ্য বলছে ঢাকা ও গাজীপুরে ৪০ লাখের মতো ব্যটারি চালিত রিকশা রয়েছে। দিনের রিকশা ভাড়া ন্যূনতম ৩০০ টাকা। তাহলে মোট ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে আয় ১২০ কোটি টাকা। বছরের হিসেবে ৪৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আয় ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় অনুমোদিত রিতশাগুলো অনুমোদিত রুটগুলোতে চলাচল করতে পারবে। এর বাইরে যারা আছে, তাদেরকে আমরা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেব। তারা কেবল বৈধ রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা লোক ২টার বেশি লাইসেন্স পাবে না, সেরকম ব্যবস্থা আমরা করে দেব। কারণ এনআইডি বেইজড লাইসেন্স হবে। চাইলেই একজন ৫টা রিকশা বের করে রিকশার ব্যবসা শুরু করে দেবেন সেটার সুযোগ নেই।’

বুয়েট তৈরি করেছে নতুন ব্যাটারি চালিত রিকশার ডিজাইন। রাজধানীর ব্যাটারি চালিত রিকশা নিবন্ধনের আওতায় আনা গেলে নৈরাজ্য কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মত সাধারণ মানুষের।