বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে তৎপরা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সমঝোতার মাধ্যমে টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছে গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার টাকা উদ্ধারে উদ্যোগ নিলেও, ফেরত আসবে কিনা তা নির্ভর করছে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের ওপর।
শেখ হাসিনা সরকারের দেড় দশকে বিদেশে পাচার হয় প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা। এ অর্থ ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাচারের টাকা ফেরত আনতে টাস্কফোর্স গঠন করে বিভিন্ন দেশে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বছরের মধ্যে কিছু অর্থ ফেরত আনতে জোরালোভাবে কাজ করছে টাস্কফোর্স। তবে প্রচলিত মানি লন্ডারিং আইনে অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ। তাই অর্থ উদ্ধারে আইন সংশোধনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায় জোর দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজস্ব আইন বা প্রক্রিয়ার ওপর সবকিছু নির্ভর করে না। যতগুলো দেশে অর্থগুলো গিয়েছে এবং সেই দেশের স্থানীয় আইন, সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিয়ে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কীভাবে সমাধান করা যায় সেই ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
পাচার হওয়া অর্থের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও কানাডা। এসব দেশ থেকে অর্থ ফেরত আনতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করছে দুদক, সিআইডিসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া ও সমঝোতায় অর্থ ফেরত আনা কঠিন হলেও, অসম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘পাচার করা অর্থের বিষয়ে কতটুতকু সফল হবে, সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যারা অর্থ পাচার করে দিয়েছে তারা কি সমঝোতায় আসতে চাবে? সরকার তো চাইবে যত তাড়াতাড়ি টাকা পয়সা আসুক।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য আমরা তাদের (পাচারকারী) সাথে কি শর্তে চুক্তিতে যাব এবং সেটা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, শর্তটা কীভাবে অনুসরণ করা হবে, এই ধরনের বিষয়গুলো কিন্তু জটিল। আন্তর্জাতিক আইন আছে, বিশেষ করে আমাদের দেশের লিগাল প্রসেসটাকে নিশ্চিত করে যদি অগ্রসর হওয়া যায়, তাহলে সেটাও কাজে লাগতে পারে। তবে উভয়পক্ষে সেটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার।’
পাচার করা অর্থ কি পরিমাণ ফেরত আসবে, তা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতার ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।