ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দামের উত্তাপ সবজিতে, ক্রেতার পকেটে টান

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৪৯:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কিছুদিন আগে বাজারে সবজির দামে যে স্বস্তি ফিরেছিল, তা এখন উধাও হয়ে গেছে। গত তিন-চার মাস ধরে তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনতে পারলেও, বর্তমানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশিরভাগ সবজির দামই ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে। আবার কিছু সবজির দাম ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা। এমন অবস্থায় বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী দামে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। ছুটির দিনে কিছুটা সাশ্রয়ে বাজার করার আশায় এসেও তাদের পকেটে টান পড়ছে।

আবু সালেহ নামের এক ক্রেতা বলেন, দ্রব্যমূল্যের এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে গিয়ে অনেককেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবজির দাম হঠাৎ এত বেশি বেড়ে যাবে ভাবিনি। আজ পুরো সপ্তাহের বাজার করতে এসেছিলাম। কিন্তু আজ সবজির দাম অনেক বেশি। তাই প্রয়োজনের অর্ধেক পরিমাণ কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারলে ক্রেতাদেরও সুবিধা হতো এবং তাদের বিক্রিও বাড়তো।

তবে অনেক ক্রেতাই মনে করেন, বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও দাম বাড়ার একটি কারণ। এছাড়া, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে সবজি কেনেন তার কয়েক গুণ বেশি দামে পরে তারা বিক্রি করেন। যার নজরদারি ঠিকমতো করা হচ্ছে না বলেও মন্তব্য অনেকের।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর, তালতলা, উত্তরা, বাড্ডা, শেওড়াপাড়া ও মহাখালীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারগুলোতে বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, পটল ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে সজনে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচা আম ৫০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া ফুলকপি ৩০ থেকে ৬০ টাকা পিস, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস ও চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকায় ও কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকায় মিলছে।

এসব বাজারে ধনে পাতা ১৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ২০০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে শাকের দাম গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। লাল শাক ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ২ আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ গত সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমে ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ভারতীয় ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আজমপুর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা বেশি দামে কিনলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। গত কয়েক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বিশেষ করে পটল, বরবটি, বেগুন—এগুলোর দাম বেশ চড়া। আমাদের কেনা দাম বেশি হলে আমরা কম লাভে বিক্রি করতে পারি না। তাছাড়া, শীতের পর আগের মতো এখন আর সহজে মাল পাওয়া যাচ্ছে না। দূরের মোকাম থেকে মাল আনতে খরচ বেশি পড়ছে। এখন যে সবজিগুলো বাজারে আসছে, সেগুলোর চাষের খরচও শীতের সবজির চেয়ে বেশি। সেজন্য দামও বেশি।

পেঁয়াজের দাম নিয়ে রফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আড়তে দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনে আনি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে তেমন নেই।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৬০ এবং সোনালি হাইব্রিড ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কোড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি বইচা মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৮০ টাকায়, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ১৫০-১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ মানুষ সাধারণত তেলাপিয়া, চাষের কই, রুই, পাঙাশ মাছ কেনে নিয়মিত। কিন্তু এই মাছগুলোরও এখন বাড়তি দাম। অন্যান্য ভালো মাছগুলোতো আমরা সাধারণ ক্রেতারা বেশি দামের কারণে সাধারণত কিনতে পারি না। দীর্ঘদিন ধরে মাছের বাজারে বাড়তি দাম চলছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ, সংশ্লিষ্টদের মনিটরিং করতে দেখা যায় না। যে কারণে যে যার মতো করে মাছের দাম বাড়িয়ে বসে আছে। বিক্রেতাদের এমন ভাব যেন তোমরা মাছ কিনলে কিনো না কিনলে আমার ক্রেতার অভাব নেই।

বাড়তি দামের বিষয়ে বাজারের মাছ বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, আসলেই বাজারে অনেকদিন ধরে মাছের দাম কিছুটা বাড়তি। মূলত ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে মাছের দাম বেড়েছে। এরপর আর কমেনি। প্রান্তিক পর্যায়ে মাছের উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। মাছ চাষীরা তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছও বেশি দামে বিক্রি করছে, এরপর পাইকারি বাজার সব শেষ বাজারে বাড়তি দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তবে রাজধানীর অন্যান্য বাজারগুলোর চেয়ে পাইকারি বাজার অর্থাৎ কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী, আব্দুল্লাহপুর, মেরুল বাড্ডা এসব বাজারগুলোতে পাইকারি মাছ বিক্রি হয়। সে কারণে এই বাজারগুলোতে তুলনামূলক মাছের কম দাম থাকে, এসব বাজার থেকেই যখন খুচরা বিক্রেতারা মাছ কিনে নিয়ে গিয়ে রাজধানীর অন্যান্য ছোট ছোট বাজারগুলোতে বিক্রি করে তখন সেখানে এসব বাজারের চেয়ে আরও বেশি দামে বিক্রি হয়। কারণ এসব বিক্রেতারা এখান থেকে মাছ নিয়ে যাওয়ার পরিবহন খরচ, লেবার খরচ, দোকান ভাড়া, রাস্তা খরচ, নিজের লাভ এসব যুক্ত করে মাছের দাম নির্ধারণ করে, হলে বাজারগুলোতে মাছের বেশি দাম হয়ে যায়।

এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

দামের উত্তাপ সবজিতে, ক্রেতার পকেটে টান

আপডেট সময় : ১২:৪৯:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

কিছুদিন আগে বাজারে সবজির দামে যে স্বস্তি ফিরেছিল, তা এখন উধাও হয়ে গেছে। গত তিন-চার মাস ধরে তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনতে পারলেও, বর্তমানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশিরভাগ সবজির দামই ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে। আবার কিছু সবজির দাম ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা। এমন অবস্থায় বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী দামে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। ছুটির দিনে কিছুটা সাশ্রয়ে বাজার করার আশায় এসেও তাদের পকেটে টান পড়ছে।

আবু সালেহ নামের এক ক্রেতা বলেন, দ্রব্যমূল্যের এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে গিয়ে অনেককেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবজির দাম হঠাৎ এত বেশি বেড়ে যাবে ভাবিনি। আজ পুরো সপ্তাহের বাজার করতে এসেছিলাম। কিন্তু আজ সবজির দাম অনেক বেশি। তাই প্রয়োজনের অর্ধেক পরিমাণ কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারলে ক্রেতাদেরও সুবিধা হতো এবং তাদের বিক্রিও বাড়তো।

তবে অনেক ক্রেতাই মনে করেন, বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও দাম বাড়ার একটি কারণ। এছাড়া, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে সবজি কেনেন তার কয়েক গুণ বেশি দামে পরে তারা বিক্রি করেন। যার নজরদারি ঠিকমতো করা হচ্ছে না বলেও মন্তব্য অনেকের।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর, তালতলা, উত্তরা, বাড্ডা, শেওড়াপাড়া ও মহাখালীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারগুলোতে বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, পটল ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে সজনে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচা আম ৫০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া ফুলকপি ৩০ থেকে ৬০ টাকা পিস, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস ও চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকায় ও কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকায় মিলছে।

এসব বাজারে ধনে পাতা ১৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ২০০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে শাকের দাম গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। লাল শাক ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ২ আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ গত সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমে ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ভারতীয় ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আজমপুর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা বেশি দামে কিনলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। গত কয়েক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বিশেষ করে পটল, বরবটি, বেগুন—এগুলোর দাম বেশ চড়া। আমাদের কেনা দাম বেশি হলে আমরা কম লাভে বিক্রি করতে পারি না। তাছাড়া, শীতের পর আগের মতো এখন আর সহজে মাল পাওয়া যাচ্ছে না। দূরের মোকাম থেকে মাল আনতে খরচ বেশি পড়ছে। এখন যে সবজিগুলো বাজারে আসছে, সেগুলোর চাষের খরচও শীতের সবজির চেয়ে বেশি। সেজন্য দামও বেশি।

পেঁয়াজের দাম নিয়ে রফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আড়তে দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনে আনি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে তেমন নেই।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৬০ এবং সোনালি হাইব্রিড ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কোড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি বইচা মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৮০ টাকায়, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ১৫০-১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ মানুষ সাধারণত তেলাপিয়া, চাষের কই, রুই, পাঙাশ মাছ কেনে নিয়মিত। কিন্তু এই মাছগুলোরও এখন বাড়তি দাম। অন্যান্য ভালো মাছগুলোতো আমরা সাধারণ ক্রেতারা বেশি দামের কারণে সাধারণত কিনতে পারি না। দীর্ঘদিন ধরে মাছের বাজারে বাড়তি দাম চলছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ, সংশ্লিষ্টদের মনিটরিং করতে দেখা যায় না। যে কারণে যে যার মতো করে মাছের দাম বাড়িয়ে বসে আছে। বিক্রেতাদের এমন ভাব যেন তোমরা মাছ কিনলে কিনো না কিনলে আমার ক্রেতার অভাব নেই।

বাড়তি দামের বিষয়ে বাজারের মাছ বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, আসলেই বাজারে অনেকদিন ধরে মাছের দাম কিছুটা বাড়তি। মূলত ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে মাছের দাম বেড়েছে। এরপর আর কমেনি। প্রান্তিক পর্যায়ে মাছের উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। মাছ চাষীরা তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছও বেশি দামে বিক্রি করছে, এরপর পাইকারি বাজার সব শেষ বাজারে বাড়তি দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তবে রাজধানীর অন্যান্য বাজারগুলোর চেয়ে পাইকারি বাজার অর্থাৎ কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী, আব্দুল্লাহপুর, মেরুল বাড্ডা এসব বাজারগুলোতে পাইকারি মাছ বিক্রি হয়। সে কারণে এই বাজারগুলোতে তুলনামূলক মাছের কম দাম থাকে, এসব বাজার থেকেই যখন খুচরা বিক্রেতারা মাছ কিনে নিয়ে গিয়ে রাজধানীর অন্যান্য ছোট ছোট বাজারগুলোতে বিক্রি করে তখন সেখানে এসব বাজারের চেয়ে আরও বেশি দামে বিক্রি হয়। কারণ এসব বিক্রেতারা এখান থেকে মাছ নিয়ে যাওয়ার পরিবহন খরচ, লেবার খরচ, দোকান ভাড়া, রাস্তা খরচ, নিজের লাভ এসব যুক্ত করে মাছের দাম নির্ধারণ করে, হলে বাজারগুলোতে মাছের বেশি দাম হয়ে যায়।

এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।